E-Paper

ছেলের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন করায় পুলিশি ‘নিগ্রহ’

বৃহস্পতিবার ভি আই পি রোডের উপরে বাস থেকে পড়ে মৃত্যু হয় একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রের। রাতে বারাসত হাসপাতালে ছেলের খোঁজে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তার মা-বাবাকে পুলিশ মারধর করে বলে অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৪ ০৭:৫০
অঙ্গীকার দাশগুপ্ত।

অঙ্গীকার দাশগুপ্ত। — নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতালে ছেলেহারা দম্পতিকে মারধরের অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। কিছু দিন আগেই ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক রোগী ও তাঁর পরিবারের লোকজনকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছিল কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে। এ বার কাঠগড়ায় বারাসত পুলিশ।

বৃহস্পতিবার ভি আই পি রোডের উপরে বাস থেকে পড়ে মৃত্যু হয় একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রের। রাতে বারাসত হাসপাতালে ছেলের খোঁজে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তার মা-বাবাকে পুলিশ মারধর করে বলে অভিযোগ। এমনকি, থানায় নিয়ে গিয়ে গ্রেফতারির মেমোতে সই করানোর চেষ্টাও হয় বলে অভিযোগ। যদিও বারাসত পুলিশ জেলার পাল্টা দাবি, ওই দম্পতিই পুলিশকে নিগ্রহ করে। কিন্তু পরিস্থিতি বিচার করে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেই দাবি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্পর্শ নীলাঙ্গীর।

দমদমের মল রোডের বাসিন্দা, অঙ্গীকার দাশগুপ্ত নামে ওই ছাত্র সল্টলেকে এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের একাদশ শ্রেণিতে পড়ত। বৃহস্পতিবার একটি বেসরকারি বাসে বাড়ি ফিরছিল সে। হলদিরামের কাছে বাসটি আচমকা ব্রেক কষায় সিঁড়িতে দাঁড়ানো অঙ্গীকার রাস্তায় পড়ে যায়। জায়গাটি বিধাননগর কমিশনারেটের বাগুইআটি থানার অধীনে। বিধাননগরের পুলিশ জানায়, পড়ে মাথায় আঘাত পায় সে। শুক্রবার কমিশনারেটের বিমানবন্দর জ়োনের ডেপুটি কমিশনার ঐশ্বর্য সাগর বলেন, ‘‘ছেলেটিকে প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে মৃত বলে জানানো হয়। এর পরে তাকে সরকারি ভাবে মৃত ঘোষণা করানো এবং ময়না তদন্তের জন্য বারাসত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বাসের চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’

অঙ্গীকারের মা, পেশায় স্কুলশিক্ষিকা কস্তুরী দাশগুপ্ত জানান, পুলিশ তাঁদের কোনও খবর দেয়নি। তিনি বলেন, ‘‘ওই বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি, পুলিশ সেখানে ছেলেকে নিয়ে গিয়েছিল। পরে আবার অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে নিয়ে চলে গিয়েছে। তখনও ছেলে বেঁচে ছিল। পরে বারাসত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে শুনি, ও বেঁচে নেই।’’ ছাত্রের মাসি কথাকলি সেনগুপ্ত জানান, পুলিশ নয়, তাঁদের দুর্ঘটনার খবর জানান এক রিকশাচালক। তাঁরা জানান, বারাসত হাসপাতালে গিয়ে অঙ্গীকারের মৃত্যু কী ভাবে হয়েছে, কেন দ্রুত দেহ মর্গে পাঠানো হল— এই প্রশ্ন করতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

পরিবারের অভিযোগ, ওই পরিস্থিতিতে হাসপাতালের পুলিশের ক্যাম্প থেকে পুলিশ এসে তাঁদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। অঙ্গীকারের দাদুকে প্রথমে ধাক্কা দেয় পুলিশ। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে পুলিশের হাতে প্রহৃত হন মৃতের মা ও বাবা, পেশায় কলেজ শিক্ষক অঞ্জন দাশগুপ্তও। কথাকলির আরও অভিযোগ, ‘‘অঙ্গীকারের বাবা-মাকে বারাসত থানায় নিয়ে গিয়ে অ্যারেস্ট মেমোতেও সই করানোর চেষ্টা হয়। পরে সাদা কাগজে সই করানো হয়। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক পরে ওঁরা হাসপাতালে ফেরেন।’’

যদিও বারাসত পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্পর্শ নীলাঙ্গী বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের হেনস্থা করা হচ্ছে বলে হাসপাতাল থেকে পুলিশ ক্যাম্পে খবর দেওয়া হয়। প্রথমে ছাত্রটির মা ও পরে বাবা পুলিশের গায়ে হাত তোলেন। কিন্তু শোকার্ত পরিবারের কথা ভেবে পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নেয়নি। ওঁদের যদি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, তবে লিখিত আকারে দিন। তখন তদন্ত হবে।’’

রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েক বলেন, ‘‘অনভিপ্রেত ঘটনা। কেন এমনটা ঘটেছে, সে বিষয়ে হাসপাতালকে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।’’ হাসপাতালে পুলিশের বিরুদ্ধে অসংবেদনশীল আচরণের অভিযোগ কেন বার বার উঠছে, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে দাবি ওই স্বাস্থ্যকর্তার।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kolkata police beaten

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy