Advertisement
E-Paper

পাইকপাড়ায় বন্ধ ফ্ল্যাটে বৃদ্ধ দম্পতির রক্তাক্ত দেহ

কোল্যাপসিবল গেটের তালা ভেঙে ঘরে ঢুকতেই আঁতকে উঠেছিলেন চিৎপুর থানার অফিসার। ঘরের মেঝেতে মাথা থ্যাঁতলানো অবস্থায় পড়ে রয়েছেন এক বৃদ্ধ। চারদিক ছড়িয়ে চাপচাপ রক্ত। ঘরের বাইরেও রক্তের দাগ। সেই দাগ ধরে আর একটি ঘরে উঁকি দিতেই দেখলেন, বিছানা থেকে মাটিতে ঝুলছেন এক বৃদ্ধা। গলার নলি কাটা। মেঝেতে ছড়িয়ে রয়েছে রক্ত।

নিজস্ব সংবাদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৫ ০০:৫৯
পাইকপাড়ায় সেই আবাসনের সামনে পড়শিদের ভিড়। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

পাইকপাড়ায় সেই আবাসনের সামনে পড়শিদের ভিড়। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

কোল্যাপসিবল গেটের তালা ভেঙে ঘরে ঢুকতেই আঁতকে উঠেছিলেন চিৎপুর থানার অফিসার। ঘরের মেঝেতে মাথা থ্যাঁতলানো অবস্থায় পড়ে রয়েছেন এক বৃদ্ধ। চারদিক ছড়িয়ে চাপচাপ রক্ত। ঘরের বাইরেও রক্তের দাগ। সেই দাগ ধরে আর একটি ঘরে উঁকি দিতেই দেখলেন, বিছানা থেকে মাটিতে ঝুলছেন এক বৃদ্ধা। গলার নলি কাটা। মেঝেতে ছড়িয়ে রয়েছে রক্ত।

বৃহস্পতিবার দুপুরের এই ঘটনা পাইকপাড়ার ইন্দ্রলোক সরকারি আবাসনের। পুলিশ জানিয়েছে, প্রাণগোবিন্দ দাস (৭৮) ও রেণুকা দাস (৭৫) নামে ওই দম্পতিকে খুন করা হয়েছে। ফ্ল্যাটের আলমারি ও অন্যান্য জিনিস লণ্ডভণ্ড অবস্থায় ছিল। যা থেকে তদন্তকারীদের অনুমান, লুঠের উদ্দেশ্যেই এই খুন। একাধিক আততায়ী ছিল বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। পুলিশের অনুমান, আততায়ীরা নিহত দম্পতির পরিচিতও ছিল। কলকাতা পুলিশের ডিসি (নর্থ) শুভঙ্কর সিংহ সরকার বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে। এই ঘটনার সব কিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

প্রাথমিক তদন্তের পরে লালবাজার সূত্রের খবর, ঘটনার পর থেকেই বাড়ির এক পরিচারিকা পূর্ণিমা ও তাঁর স্বামী বাপ্পার হদিস নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে পুলিশ জেনেছে, বুধবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ ওই ফ্ল্যাট থেকে তাঁকে বেরিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘দাস দম্পতির ফ্ল্যাটে রাতের খাবার অভুক্ত অবস্থায় মিলেছে। তা থেকে মনে করা হচ্ছে, খাওয়ার আগেই খুন করা হয়েছে ওঁদের।’’

এই ঘটনার পরে শহরের পরিচারিকাদের পরিচয়-তথ্য নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠেছে। খাস কলকাতা হোক বা সল্টলেক, নানা অপরাধে পরিচারক-পরিচারিকাদের যোগ প্রায়শই মেলে। পুলিশ পরিচারক-পরিচারিকাদের সম্পর্কে তথ্য স্থানীয় থানায় জানাতে বললেও বহু ক্ষেত্রেই তা জানানো হয় না। এ দিনের ঘটনা জানাজানি হতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা পুলিশ কমিশনারের কাছে ঘটনা সবিস্তার জানতে চান। তার পরে সিপিকে নির্দেশ দেন, পরিচারকদের তথ্য স্থানীয় থানায় জানানোর ব্যাপারে ফের সক্রিয় প্রচার চালাতে হবে।

কী ভাবে জানা গেল খুনের ঘটনা?

আবাসনের বাসিন্দারা জানান, সকালে কোল্যাপসিবল গেটের ফাঁকে সংবাদপত্র দিয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় এক সংবাদপত্র বিক্রেতা। গেটের ফাঁকে দেওয়া ছিল পুজোর ফুলের প্যাকেটও। কিন্তু বেলা গড়িয়ে দুপুর হলেও প্রাণগোবিন্দবাবুরা সেগুলি ভিতরে নেননি। দুপুরে বাড়ির এক আয়া এসে বিষয়টি প্রতিবেশীদের জানান। খবর যায় চিৎপুর থানায়। পুলিশ আবাসনের এক বাসিন্দা অমিতাভ মুখোপাধ্যায় নামে এক যুবককে সঙ্গে নিয়ে ফ্ল্যাটে ঢোকে। তখনই এই দৃশ্য চোখে পড়ে। অমিতাভবাবু বলেন, ‘‘প্রাণগোবিন্দবাবুর পরনে ছিল লুঙ্গি ও স্যান্ডো গেঞ্জি। ওঁর স্ত্রী শাড়ি পরে ছিলেন। ঘরের নানা জায়গায় রক্তের দাগ ছিল।’’ প্রাণগোবিন্দবাবু মগরা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রাক্তন শিক্ষক। রেণুকাদেবী সরোজিনী নাইডুতে ইতিহাস পড়াতেন। একমাত্র মেয়ে সুস্মিতা আমেরিকায়। তাঁকে খবর দেওয়া হয়েছে। এ দিন সন্ধ্যায় দেহ দু’টি মর্গে পাঠানো হয়েছে। আজ, শুক্রবার ময়না-তদন্ত হবে। খবর পেয়ে এ দিন ওই আবাসনে আসেন প্রাণগোবিন্দবাবুর বোন ও দুই ভাগ্নে।

সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

ওই দম্পতির এক আত্মীয়ের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, পূর্ণিমা ও প্রাণগোবিন্দবাবু—দু’জনেরই পৈতৃক বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে। পরিচারিকা হিসেবে এলেও দাস দম্পতির কাছেই বড় হয় পুর্ণিমা। বাপ্পার সঙ্গেও বিয়েও এখানেই। পেশায় রিকশাচালক বাপ্পা প্রায়ই দাস দম্পতির বাজার-সহ নানা ফরমাশ খেটে দিত। তবে সম্প্রতি বাপ্পার সঙ্গে একটি গোলমালের কথাও জেনেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের একাংশ জানান, বাপ্পা কিছু দিন আগে টাকা চেয়েছিলেন প্রাণগোবিন্দবাবুর কাছে। এ ছাড়াও ওই ফ্ল্যাটের একটি ঘর বাপ্পা দখল নিতে চাইছিল বলেও পুলিশ জেনেছে। এই খুনের সঙ্গে ওই বিবাদের যোগ আছে কি না, তা পুলিশ স্পষ্ট করেনি। তবে সকাল থেকেই বাপ্পা ও তার পরিবার নিখোঁজ। ঘটনাস্থলে পুলিশ কুকুর গিয়ে গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে বাপ্পাদের বস্তির দিকেই গিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, খুনি ইন্দ্রলোক আবাসনের পিছন গেট দিয়ে বেরিয়ে গাঙ্গুলিপাড়া হয়ে ক্যাম্পবাগানের দিকেই যায়। ফ্ল্যাটের ভিতর থেকে রক্তের দাগ ও খুনির হাতের ছাপও মিলেছে। লালবাজারের খবর, বাপ্পারা নন্দীগ্রামে পূর্ণিমার শ্বশুরবাড়িতে যাননি।

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আবাসনের বাইরে এলাকাবাসীর ভিড়। আবাসনের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তাঁরা বলছেন, এই আবাসনে বহিরাগতদের ঢোকা-বেরোনোর বিধিনিষেধ নেই। বিরাট আবাসনে মাত্র চার জন নিরাপত্তারক্ষী। অনেক সময়ে বাইরের লোকেরাও ‘শর্টকাট’ হিসেবে আবাসনের ভিতর দিয়ে যাতায়াত করেন। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ আততায়ীদের পালানোর যে পথ চিহ্নিত করেছে, তার পাশেই একটি নিরাপত্তারক্ষীর ঘর। এ দিন কর্মরত এক রক্ষী জানান, কাল রাতে ওই ঘরে নতুন এক রক্ষী ছিলেন। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

Paikpara area Indralok Housing Indralok Housing society elderly couple police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy