পরিকল্পনা করেই কি ফুলবাগানের বি সি রায় শিশু হাসপাতাল থেকে ছ’মাসের শিশুকে চুরি করেছিল অভিযুক্ত মহিলা? প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের তেমনই অনুমান। পুলিশ জানিয়েছে, সাবিনা বিবি নামে ধৃত ওই মহিলা উত্তর কাশীপুর থানা এলাকার নিবুন্ধিয়া গ্রামের বাসিন্দা। শিশুটিকে সোমবার রাতে উদ্ধার করার পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই মহিলা প্রতিবেশীদের গত কয়েক দিন ধরেই বলছিল, সে অন্তঃসত্ত্বা। এমনকি, সোমবার শিশুটিকে চুরি করে বাড়িতে নিয়ে আসার পরে গ্রামের বাসিন্দাদের সে জানায়, সেটি তারই সন্তান। সদ্য ভূমিষ্ঠ হয়েছে।
তদন্তে নেমে এ সব জানার পরেই পুলিশের অনুমান, শিশুটিকে চুরির উদ্দেশ্যেই বাসে উঠে তার মায়ের সঙ্গে ভাব জমিয়েছিল সাবিনা। তার পরে নার্স হিসেবে নিজের মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বি সি রায় শিশু হাসপাতাল পর্যন্তও চলে যায় সে। তদন্তে পুলিশ আরও জেনেছে, সাবিনা সম্ভবত শিশুটিকে বিক্রি করে দেওয়ার মতলবে ছিল। ধৃত মহিলাকে জেরা করার পরে প্রাথমিক ভাবে এমনই ধারণা হয়েছে পুলিশের। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, সাবিনা পুলিশের তদন্তে কোনও রকম সহযোগিতা করছে না। তার কথায় বিস্তর অসঙ্গতি রয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলা এর আগেও বি সি রায় শিশু হাসপাতালে গিয়েছিল কিনা, তা জানতে হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে মহিলাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে চাইছেন তদন্তকারীরা। মঙ্গলবার সাবিনা পুলিশের কাছে দাবি করেছে যে, সে অসুস্থ। সেই কারণেই তাকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করা যাচ্ছে না বলে পুলিশ জানিয়েছে। লালবাজার জানিয়েছে, ধৃত মহিলা কোনও শিশু পাচার-চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সে আগেও এমন কাজ করেছে কিনা, দেখা হচ্ছে তা-ও। সাবিনাকে মঙ্গলবার শিয়ালদহ আদালতে তোলা হলে বিচারক ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, সোমবার সকালে মোহিত মোল্লা নামে ছ’মাসের ওই শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য বি সি রায় হাসপাতালে নিয়ে যান তার মা মঞ্জিলা খাতুন। তাঁরা হাড়োয়া এলাকার মাজুমপুরের বাসিন্দা। বাসে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় সাবিনার। সে নিজেকে ওই হাসপাতালেরই নার্স বলে দাবি করে। এর পরে সাবিনাও মঞ্জিলার সঙ্গে ওই হাসপাতালে যায়। সেখানে চিকিৎসককে দেখানোর পরে ওষুধ কিনতে যাচ্ছিলেন মঞ্জিলা। তখন প্রায় জোর করেই শিশুটিকে নিজের কাছে রাখে সাবিনা। মঞ্জিলাকে সে বলে, ওষুধ কিনে আনা পর্যন্ত শিশুটিকে সে-ই দেখবে। এর পরেই শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায় ওই মহিলা। পরে সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে ফুলবাগান থানা এবং উত্তর কাশীপুর থানার পুলিশ সোমবার রাতেই শিশুটিকে উদ্ধার করে সাবিনাকে গ্রেফতার করে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)