Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Child death

শিশুর মৃত্যুর জট কাটাতে কবর থেকে দেহ গেল ময়নাতদন্তে

রোহনেরদিদিমা, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলার বাসিন্দা মিনা বিবিও। এর পরে শুরু হয় মাটি খোঁড়ার কাজ। ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ হাসপাতালে পাঠাতে আগেই গাড়ির ব্যবস্থা করা ছিল।

তদন্ত: তিন বছরের শিশুর রহস্য-মৃত্যুর কারণ খুঁজতে আইনি প্রক্রিয়া মেনে কবর থেকে তোলা হচ্ছে দেহ।

তদন্ত: তিন বছরের শিশুর রহস্য-মৃত্যুর কারণ খুঁজতে আইনি প্রক্রিয়া মেনে কবর থেকে তোলা হচ্ছে দেহ। নাতির দেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন দিদিমা মিনা বিবি। বৃহস্পতিবার।ছবি: সুমন বল্লভ, নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২২ ০৬:০৮
Share: Save:

নাতির মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন দিদিমা। ছেলের বিরুদ্ধেই সরাসরি নাতিকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনি। সেই মতো খুনের মামলা রুজু করে তদন্তে নামে আনন্দপুর থানা। কবরস্থ শিশুটির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়না তদন্ত করা জরুরি ছিল। বুধবারই অনুমতি মিলেছিল কবর থেকে দেহ তোলার। বৃহস্পতিবার ম্যাজিস্ট্রেটএবং দিদিমার উপস্থিতিতে শিশুর দেহ কবর থেকে তুলে পাঠানো হয় হাসপাতালে। সন্ধ্যায় হাতে আসা ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টথেকে পুলিশ জানিয়েছে, শিশুটির মাথার পিছনে এবং মেরুদণ্ডে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। তবে সেটা পড়ে যাওয়ার কারণেও হতে পারে বলে মত তদন্তকারীদের। প্রাথমিক ভাবে খুনের চিহ্ন মেলেনি বলেই জানা গিয়েছে। কিন্তু মৃত্যুর কারণ এখনও স্পষ্ট নয় বলে দাবি তাঁদের।

তিন বছরের ওই শিশু, রোহন মণ্ডলের দেহ তুলতে এ দিন সকাল থেকেই তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। দুপুরের পরে তপসিয়ার সমাধিস্থলে পৌঁছন ম্যাজিস্ট্রেট। পুলিশকর্তাদের পাশাপাশি আসেন রোহনেরদিদিমা, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলার বাসিন্দা মিনা বিবিও। এর পরে শুরু হয় মাটি খোঁড়ার কাজ। ময়না তদন্তের জন্য মৃতদেহ হাসপাতালে পাঠাতে আগেই গাড়ির ব্যবস্থা করা ছিল। আইনি প্রক্রিয়া মেনে মাটি খুঁড়ে দেহ তুলে প্লাস্টিকে মুড়িয়ে দ্রুত তা এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এ দিকে, রোহনের দিদিমার অভিযোগ দায়েরের পরেই খোঁজনেই শিশুটির বাবা বিজয় মণ্ডলের। ঘটনার পরদিন, অর্থাৎ সোমবার রোহনের মাকে এক বার এলাকায় দেখাগেলেও তার পর থেকে তাঁরও দেখা মেলেনি বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। আর এখানেই অন্য রহস্য দানা বাঁধছে। শিশুটির মায়ের রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হওয়ায় শঙ্কিত তাঁর পরিবারের লোকজন। বৃহস্পতিবার তপসিয়ার কবরস্থানের সামনে দাঁড়িয়ে রোহনের মা সোনির এক আত্মীয় বলেন, ‘‘সোনিই প্রথম রোহনের মৃত্যুতে আশঙ্কা প্রকাশ করে ওর মাকে গোটা বিষয়টি জানায়। তার পর থেকে সোনিরই খোঁজ নেই।’’

পুলিশ সব দিক খতিয়ে দেখছে। ঘটনার তদন্তভার লালবাজারের হোমিসাইড শাখা নিতে পারে বলেও খবর। কোন চিকিৎসক শিশুটির মৃত্যুর শংসাপত্র দিয়েছিলেন, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। প্রয়োজনে তাঁর সঙ্গেও কথা বলা হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

গত রবিবার বছর তিনেকের রোহনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। আনন্দপুর থানা এলাকার নোনাডাঙার একটি আবাসনের বাসিন্দা ওই শিশুটির ঠাকুরমার বাড়ির প্রতিবেশীরা জানান, পঞ্চান্নগ্রামের ভাড়াবাড়ির শৌচালয়ে বালতিতে পড়ে রোহনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রথমে বলা হয়েছিল। ঘটনার সময়ে বাড়িতে ছিলেন না শিশুটির মা সোনি। রোহনের বাবা বিজয়ই স্ত্রীকে ফোন করে ডেকে ঘটনার কথা জানান। পরদিন স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছ থেকে রোহনের মৃত্যুর শংসাপত্র নিয়ে এসে দেহ কবর দেওয়া হয়।

দু’দিন পরে মেয়ের ফোনেই গোটা ঘটনার কথা জানতে পারেন শিশুটির দিদিমা। সন্দেহ হওয়ায় আনন্দপুর থানায় জামাই বিজয়ের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘শিশুটির কী ভাবে মৃত্যু হয়েছে, তা জানার চেষ্টা চলছে। ময়না তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্টেরপরেই সেটা স্পষ্ট হবে। সব দিক খোলা রেখেই ঘটনার তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child death Anandapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE