Advertisement
০৬ মে ২০২৪

মেট্রোর ধীরে চলো নীতিতে বাড়ছে ক্ষোভ

পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনের কাছে সুড়ঙ্গে ২৫ মিনিটেরও বেশি সময় ট্রেন আটকেছিল। তখনও মেট্রোর বিরুদ্ধে কোনও ঘোষণা না করার অভিযোগ উঠেছিল। মেট্রো কর্তৃপক্ষ তখন সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছিলেন, এ বার থেকে ঘোষণা করা হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৭ ০৯:২০
Share: Save:

ডিসপ্লে বোর্ডে জ্বলজ্বল করছে পরবর্তী মেট্রো ১২টা বেজে ৬ মিনিটে। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও ঢুকল না ট্রেন। ফের বদলে গেল সময়। এ বার ১২টা বেজে ১২ মিনিট। সে ট্রেনও ঢুকল না। তত ক্ষণে প্ল্যাটফর্মে উপচে পড়ছেন যাত্রী। অবশেষে মেট্রো ঢুকতেই ঢেউ ভাঙার মতোই আছড়ে পড়ল ভিড়। ধাক্কাধাক্কিতে পিছু হটলেন অনেকে।

অভিযোগ, মেট্রোতে যাতায়াত করতে গিয়ে এখন প্রায় দিনই এমন অভিজ্ঞতা হচ্ছে যাত্রীদের। এক যাত্রী মধুরিমা দত্ত বলেন, ‘‘একটি মেট্রো না এলেই দুর্বিষহ অবস্থা হয়। এখন তো মাঝেমধ্যে পরপর দু’টি, এমনকী তিনটি ট্রেনও বাতিল হচ্ছে।’’ গড়িয়ার বাসিন্দা কল্যাণ চৌধুরীর আক্ষেপ, ‘‘আগে ঘড়ি ধরে মেট্রো চলত। ইদানীং দেখছি, সেই ধারাটাই বদলে যাচ্ছে।’’ বুধবার রাতেও শেষ ট্রেনের ক্ষেত্রে এমনই ঘটনা ঘটেছে বলে তাঁর অভিযোগ।

বছর কয়েক আগের ঘটনা। পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনের কাছে সুড়ঙ্গে ২৫ মিনিটেরও বেশি সময় ট্রেন আটকেছিল। তখনও মেট্রোর বিরুদ্ধে কোনও ঘোষণা না করার অভিযোগ উঠেছিল। মেট্রো কর্তৃপক্ষ তখন সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছিলেন, এ বার থেকে ঘোষণা করা হবে। কিন্তু প্রতিশ্রুতিই সার। যাত্রীদের প্রশ্ন, কোনও মেট্রো সময়সূচি মেনে না এলে, কেন তা ঘোষণা করা হচ্ছে না?

আরও পড়ুন: চালকের চোখে ঘুম, দুর্ঘটনায় রেল

মাঝেমধ্যেই মেট্রো বাতিল হওয়া প্রসঙ্গে কর্তৃপক্ষ বলছেন, ‘‘বিদ্যুতের লাইনে মেরামতির জন্য ট্রেনের সাময়িক দেরি হচ্ছে।’’ মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বলেন, ‘‘সম্প্রতি যতীন দাস পার্ক এবং পার্ক স্ট্রিটের মাঝে মেট্রোর একটি সাব স্টেশনে আগুন ধরে গিয়েছিল। পুড়ে যাওয়া লাইনে কাজ চলায় এই দেরি।’’ কিন্তু সেই ঘটনার পরে ১৫ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। তবে মেরামতিতে কেন এত সময় লাগছে? যদিও এর কোনও উত্তর দিতে পারেননি ওই আধিকারিক।

যেমন উত্তর মেলেনি প্ল্যাটফর্মের চলমান সিঁড়িগুলি মাঝেমধ্যেই দীর্ঘ দিন বন্ধ হয়ে থাকার প্রশ্নে। সম্প্রতি একটি মেট্রো স্টেশনে সিঁড়ি উল্টো দিকে চলতে শুরু করেছিল। এর পরেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কর্তৃপক্ষ চলমান সিঁড়িগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখা শুরু করে। যাত্রীদের অভিযোগ, সে কাজে দীর্ঘ সময় লাগায় মেট্রো। ফলে বয়স্ক ও অসুস্থ যাত্রীদের নাজেহাল দশা হয়। সম্প্রতি চাঁদনি চক স্টেশনের ধর্মতলার দিকের চলমান সিঁড়িটি প্রায় ২৫ দিন বন্ধ রেখে মেরামত চলে। চালুর এক দিনের মধ্যেই ফের ত্রুটি ধরা পড়ায় বন্ধ ছিল আরও এক দিন। যাত্রীরা জানাচ্ছেন, শ্যামবাজারে মণীন্দ্র কলেজের উল্টোদিকের চলমান সিঁড়িটি বন্ধ পড়ে দু’ মাসেরও বেশি। এখনও কাজ
চলছে সেখানে।

যদিও তিন দশক ছুঁয়ে ফেলেছে মেট্রো, তবু যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে ক্রমেই কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার ছবিটাই উঠে আসছে। যাত্রীদের অভিযোগ, দমদম মেট্রোয় ঢোকা-বেরোনোর রাস্তা ক্রমেই সরু হয়ে যাচ্ছে। নিত্য দিন ব্যস্ত সময়ে গলদঘর্ম অবস্থা হয় ওই জায়গায়। অথচ তা দেখেও চুপ কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘ দিন খারাপ হয়ে পড়ে থাকা স্মার্ট গেট বা স্ক্যানার নিয়েও। অথচ বারবার সমালোচিত হয়েও ধীরে চলো নীতি থেকে কোনও ভাবেই বেরোতে পারছেন না মেট্রো কর্তৃপক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE