Advertisement
E-Paper

মাংসে অরুচি, গরম শেষের অপেক্ষায় ওরাও 

চিড়িয়াখানার খবর, আলিপুরে বাঘের বংশ বাড়াতে শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি থেকে রয়্যাল বেঙ্গল স্নেহাশিসকে নিয়ে আসা হয়েছিল। আলিপুরের বাঘিনি পায়েলকে মনে ধরেছে তার। পাশাপাশি দুই ঘরে থাকছে তারা। 

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৯ ০২:১৬
আরাম: গরম থেকে বাঁচতে পাইপ দিয়েই স্নান হাতিদের। আলিপুর চিড়িয়াখানায়। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

আরাম: গরম থেকে বাঁচতে পাইপ দিয়েই স্নান হাতিদের। আলিপুর চিড়িয়াখানায়। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

ঝড়বৃষ্টিতে গরম সামান্য হলেও কমেছে। কিন্তু গত কয়েক দিনের দহনজ্বালা এখনও কাটেনি। তাই কেউ ভরদুপুরে একটু রসালো ফল দিয়েই ‘লাঞ্চ’ সারছে। কেউ আবার পছন্দের মাংস ছুঁয়েও দেখছে না। কেউ আবার বিকেল হলেই ফোয়ারার সামনে স্নান সারতে হাজির হয়ে যাচ্ছে। কেউ আবার রোদ না-পড়লে ঘর ছেড়েই বার হচ্ছে না। এ সবের মাঝেই নিভৃতে প্রেমে মত্ত ‘নবদম্পতি’। তবে এক ঘরে বাস হচ্ছে না তাদের। পাশাপাশি দু’টি ঘরে বন্দি প্রেমিক-প্রেমিকার আলাপের পথ ছোট্ট একফালি জানলা।

চিড়িয়াখানার খবর, আলিপুরে বাঘের বংশ বাড়াতে শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি থেকে রয়্যাল বেঙ্গল স্নেহাশিসকে নিয়ে আসা হয়েছিল। আলিপুরের বাঘিনি পায়েলকে মনে ধরেছে তার। পাশাপাশি দুই ঘরে থাকছে তারা।

চড়া গ্রীষ্মে এ ভাবেই দিন কাটছে আলিপুর চিড়িয়াখানার পশুপাখিদের। তীব্র গরমের কবল থেকে বাঁচাতে অনেক পশুপাখিকেই সকাল ন’টা বাজতে না-বাজতেই খোলা চত্বর থেকে খাঁচার ভিতরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গরমে ঘরের বাইরে আসতেও চাইছে না তারা। দিনের বেলা তাই বেশির ভাগ খাঁচাই শূন্য থাকছে। এই দহনেও যে দর্শকেরা চিড়িয়াখানায় আসছেন, ফাঁকা খাঁচা দেখেই ফিরতে হচ্ছে তাঁদের।

ওই দু’জনের প্রেম-পর্ব চললেও বাকিরা কিন্তু বেশ কাহিল। আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত জানান, গ্রীষ্মের শুরু থেকেই কয়েক দফা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এখন টানা গরমের সময়ে সূর্য আঁচ ছড়ানো শুরু করতেই অনেককে খাঁচার ভিতরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিকেলে ফের বাইরে আনা হচ্ছে তাদের। তৃণভোজী প্রাণীদের খাবারে রসালো ফল দেওয়া হচ্ছে। জলে মেশানো হচ্ছে ওআরএস। ‘‘গরমকালে বাঘ, সিংহের মাংসের বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু গরমে মাংসেও ওদের অরুচি ধরে গিয়েছে,’’ বলছেন আশিসবাবু। চিড়িয়াখানার খবর, সারা বছর বাঘ-সিংহের পাতে দৈনিক সাত-আট কিলোগ্রাম মোষের মাংস দেওয়া হয়। এই গরমে তা অন্তত দেড়-দু’কিলোগ্রাম কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা-ও মুখে তুলছে না ওরা।

চিড়িয়াখানার একটি সূত্র জানাচ্ছে, সকালেই সব পশুপাখিকে পাইপ দিয়ে এক প্রস্ত স্নান করানো হয়। খাঁচার ভিতরে ঠান্ডা রাখতেও জল ছিটিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি, সাপের ঘরের মেঝেও জল ছিটানো হয়। পাখিরাও স্নান থেকে বাদ যায় না। বিশেষ করে এমু-র মতো পাখিদেরও জল চুপচুপে স্নান করান কিপারেরা। ক্যাঙারুর ঘরে খসখসের পর্দা টাঙিয়ে জল ছিটানো হয়। কিন্তু বিকেল না হলে ক্যাঙারুরা বারমুখো হচ্ছেই না। পেল্লায় জলহস্তীটি দিনভর পুকুরেই গা ডুবিয়ে থাকছে। চিড়িয়াখানার এক কর্মী বলছেন, ‘‘তবে স্নানের আহ্লাদ দেখতে হয় রানি ও তিতিরের। বিকেলে ফোয়ারার তলায় দু’জনের সে কি আমোদ!’’ রানি ও তিতির চিড়িয়াখানার দুই হস্তিনী। আশিসবাবু বলছেন, ‘‘সকালে এক প্রস্ত স্নান, বিকেলে আরেক প্রস্ত। এর মাঝে গরম লাগলেই জলাশয়ে একটু গা ভিজিয়ে নেয়। কত বার যে ওদের স্নান লাগে!’’

স্নান, রসালো ফল, ওআরএস—যতই থাকুক। গরমে পোষ্যদের নাকাল দশা নিয়ে একটু বিষণ্ণ চিড়িয়াখানার কর্তারা। ঘটনাচক্রে, চিড়িয়াখানার পাঁচিল পেরোলেই আলিপুর হাওয়া অফিস। পাঁচিল টপকে গরম শেষের খবর কবে আসে, সে দিকেই তাকিয়ে কলকাতার ‘পশুপালকেরা’।

Summer Heat Animals Alipore Zoo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy