Advertisement
E-Paper

ভগ্নস্তূপে উদ্ধার দ্বিতীয় মৃতদেহ

পে-লোডার দিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরাতেই উপরে এক মহিলার দেহ। বুধবার ভোরে দেহ উদ্ধারের পরে পুলিশ জানায়, সেটি সন্ধ্যা রাই (৪৬)-এর।

কৌশিক ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:১৬
ভেঙে ফেলা হচ্ছে সেই বাড়ি। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

ভেঙে ফেলা হচ্ছে সেই বাড়ি। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

পে-লোডার দিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরাতেই উপরে এক মহিলার দেহ। বুধবার ভোরে দেহ উদ্ধারের পরে পুলিশ জানায়, সেটি সন্ধ্যা রাই (৪৬)-এর। মঙ্গলবার রাতে ৪২ নম্বর পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে তিনতলা পুরনো বাড়িটি ভেঙে পড়ার পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। আশঙ্কা ছিল, বাড়ির ধ্বংসস্তূপেই তিনি আটকে রয়েছেন। রাত থেকেই শুরু হয় ধ্বংসস্তূপ সরানো। শ্বেতা রাই (৩৬) নামে বাড়িরই এক বাসিন্দার দেহ মেলে। পুলিশ জানায়, শ্বেতা ও সন্ধ্যা দু’জনেই বাড়ির বর্তমান মালিক কমলাপ্রসাদ রাইয়ের পুত্রবধূ। এই নিয়ে এই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল দুই।

এ দিন সকালে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে পুলিশের ব্যারিকেড। তার মধ্যেই পে-লোডার নিয়ে ধ্বংসস্তূপ সাফ করছে কলকাতা পুরসভা। বাসিন্দাদের সরানো হয়েছে আশপাশের বাড়িতে।

মঙ্গলবার রাতে উত্তর কলকাতার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্রায় তাসের ঘরের মতোই ভেঙে পড়ে পুরনো তিনতলা বাড়িটির সামনের অংশ। খবর পেয়ে পৌঁছন স্থানীয় কাউন্সিলর ইলোরা সাহা। তিনি জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই ওই বাড়ি থেকে চুন সুড়কি খসে পড়ছিল। পুলিশকে দিয়ে বাড়িটির দু’দিক ব্যারিকেড করে মাইকে ঘোষণা করে বাসিন্দাদের রাস্তায় বেরিয়ে আসতে বলা শুরু করেন স্থানীয় মানুষ। অনেকে বেরোলেও দু’এক জন ভিতরেই থেকে যান। ইলোরাদেবী জানান, পুলিশ-সহ সকলে যখন ভিড় সামলাতে ব্যস্ত, তখনই ভিতরে ঢুকে যান শ্বেতা ও সন্ধ্যা। তখনই বাড়িটি ভেঙে পড়ে।

বুধবার ভাঙা বাড়ি পরিদর্শনে যান পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারেরা। প্রাথমিক তদন্তে তাঁদের অনুমান, ছাদের কড়িবরগায় ঘুণ ধরেই এই বিপত্তি। বাড়ির ভাঙা অংশ লাগোয়া অংশটিও ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। কিন্তু এই অংশ কী ভাবে, কতটা ভাঙা যাবে, তা পরিকল্পনা করেই এই কাজে নামা হবে বলে জানান পুর-ইঞ্জিনিয়ারেরা।

পুরসভা সূত্রে খবর, এই বাড়ির বয়স অন্তত ২৫০ বছর। কড়িবরগা, চুন সুড়কিতে গড়া বাড়িটি বসবাসের জন্য ব্যবহার হলেও একাংশে ছিল ছোটখাটো ভাতের হোটেল এবং ছাপাখানা। এ ছাড়াও বাড়িটিতে বাইন্ডিং ও হোসিয়ারি শিল্পের কারখানা ছিল। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সবক’টিই বন্ধ। বিপর্যয় মোকাবিলা এবং পুরসভার কর্মীরা ধসে যাওয়া বাড়ির মালপত্র বার করছেন।

ভাড়াটেদের একাংশের অভিযোগ, তাঁরা নিজেরাই পুরনো বাড়িটির কিছু অংশ মেরামতি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাড়িওয়ালা তাঁদের বাধা দেন। তিনি নিজেও বাড়ির মেরামতি করেননি বলেও অভিযোগ ভাড়াটেদের। বাড়ির এক ভাড়াটে তাপস ঘোষচৌধুরী বলেন, ‘‘আমি এ বাড়ির অনেক দিনের বাসিন্দা। সম্প্রতি সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি। বাড়ির মেরামতির ব্যাপারে অনেক বারই জানিয়েছিলাম বাড়িওয়ালাকে।’’ তাঁর দাবি, বাড়িওয়ালা কমলাপ্রসাদ রাই বাড়িটি প্রোমোটারকে দেবেন বলে বাসিন্দাদের সঙ্গে চুক্তি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই চুক্তির বিষয়বস্তু পরিষ্কার ছিল না বলে অভিযোগ তাপসবাবুর।

কমলাপ্রসাদ রাইয়ের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘পুরনো বাড়িটি মেরামত করতে ভাড়াটেরাই বাধা দিয়েছিলেন। আমি প্রোমোটারকে বাড়িটা দিতে চেয়েছিলাম। তার জন্যই চুক্তি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভাড়াটেরা এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে কোনও চুক্তি করতে চাননি।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, পুরসভাকে এই বাড়ি ‘বিপজ্জনক’ জানাতে বলা সত্ত্বেও তারা তা করেনি। সেই কারণে মঙ্গলবারই তিনি ফের পুরসভাকে এ ব্যাপারে চিঠি দিয়ে জানান। কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং দফতরের ডিজি (২) দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এটি এলাকার অত্যন্ত পুরনো এবং বিপজ্জনক বাড়ি ছিল। পুরসভা থেকে নোটিসও দেওয়া হয়েছিল বহু দিন আগেই। বাড়ির মালিকের অভিযোগ ঠিক নয়। বর্তমানে বাড়িটির বিপজ্জনক অংশ ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা।’’

pathuriaghata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy