হতাশ: বিষণ্ণ শিবেদা এবং নেহা। রবিবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
কলেরার ভয়ে কলকাতার নামীদামি খেলোয়াড়েরা চম্পট দেওয়ায় আফশোসের শেষ ছিল না হাড়ভাঙার জমিদার গোবর্ধন চৌধুরীর।
বিশ্বকাপের ময়দান থেকে আর্জেন্টিনার বিদায়ের পরে একই হাল নবাবগঞ্জের শিবেদারও। ‘ধন্যি মেয়ে’র ছবির খেলোয়াড়েরা কলেরার ভয়ে পিছটান দিয়েছিলেন। ইছাপুরের মেসিভক্ত শিবেদার দাবি, আর্জেন্টিনার ক্ষেত্রেও যেন তেমনই ভয় কাজ করল। শিবেদা বলেন, ‘‘ভাল খেলোয়াড়দের মাঠের বাইরে বসিয়ে রাখলেন। কোচ ঠিক করেননি। সবটাই মনে হচ্ছে ষড়যন্ত্র। এই ভাবে কী খেলা হয়!’’
গত মঙ্গলবার নাইজিরিয়াকে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়াতেই আকাশি-সাদা জার্সির উপরে ভরসা বেড়েছিল শিবেদার। মেসির উপরে এমনিতেই তাঁর ভরসা অঢেল। মেসির দল কাপ পাবে, সেই আশায় প্রতিনিয়ত দেব-দেবীর নাম জপেও কমতি ছিল না বছর পঞ্চাশের শিবশঙ্কর পাত্রের। শনিবার সন্ধ্যায় মেয়ে নেহা আর্জেন্টিনার জার্সি পরে মোবাইলে খেলা দেখতে বসলেও শিবেদা পড়েছিলেন জগন্নাথের ছবি আঁকা লাল গেঞ্জি। ‘‘কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হল না,’’ বলছেন হতাশ শিবেদা।
বাড়ির পুরনো আমলের ছোট টিভিটা খারাপ হয়েছে আগেই। গত মঙ্গলবার আর্জেন্টিনা জিততেই টিভি সারাতে দিয়ে এসেছেন শিবেদা। কিন্তু বিশ্বকাপ শেষ হলে তবেই সেটি ঘরে ফেরার কথা। শিবেদার স্ত্রী সন্ধ্যাদেবী বললেন, ‘‘মেয়ে মোবাইলে খেলা দেখায় আর্জেন্টিনা জিতেছে। মনে হল, আবার মোবাইলে দেখলেই ভাল হবে। তাই টিভিটা আনতে চাইনি।’’
প্রথম দু’টি খেলায় প্রিয় দল হেরে জেতেই আর নিজে খেলা দেখতে বসেন না শিবেদা। মেয়ের পাশে শুয়ে বা বসে থাকেন। ‘ধন্যি মেয়ে’র ন্যাড়ার মতো সারাক্ষণ ‘রিলে’ করে যান নেহা। তেমনটা হয়েছিল শনিবারও। ফ্রান্সের প্রথম গোলে পরেই মুষড়ে পড়েছিলেন শিবেদা। কিন্তু মনে ভেবেছিলেন ‘সবে তো শুরু!’ সেই মতো প্রথমার্ধে একটা গোল শোধ করে দ্বিতীয় পর্বে শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই আর্জেন্টিনার আরও একটি গোলের খবর শুনে লাফিয়ে উঠেছিলেন ওই মেসিভক্ত। ভেবেছিলেন, দু’টি গোল হয়ে গিয়েছে। এ বার আর আটকায় কে!
কিন্তু ফ্রান্স আরও তিনটি গোল দিতেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে শিবেদার আশা। রাতেই খুলে ফেললেন আর্জেন্টিনার সব পতাকা। রবিবার ভোরে বাড়ির নীচে চা-নোনতা খাবারের দোকান খুললেও খদ্দেরদের সঙ্গে খেলা নিয়ে খুব একটা আলোচনায় মাতলেন না। বন্ধ রাখলেন মোবাইলও। শুধু বললেন, ‘‘ফুটবল ভালবাসি। তাই সময় হলে খেলা দেখব।’’
রবিবারের পড়ন্ত বিকেলে শিবেদার দোকানের সামনে আচমকাই এক দল যুবক চেঁচিয়ে উঠলেন ‘ব্রাজিল ব্রাজিল!’ চায়ে চিনি মেশাতে মেশাতে মুচকি হেসে দাদা বলেন, ‘ওরা মজা করে!’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy