Advertisement
E-Paper

‘বন্ধু তো আর নেই, মেয়েটা অন্তত ফিরুক’

আদর্শ বললেন, ‘‘ওর সব ইচ্ছেই তো রাখা হল। ও যেন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসে!’’ সেই সঙ্গে এখন তাঁর মনে হচ্ছে, ‘‘ও জেদ করছিল ঠিকই, তবে শিবাজীর গাড়িতে ওকে বসতে না দিলেই ভাল হত।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৮ ০২:৪১
আসনা সুরানার পোষা কুকুরছানার সঙ্গে ভাই অক্ষত। সোমবার, একবালপুরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

আসনা সুরানার পোষা কুকুরছানার সঙ্গে ভাই অক্ষত। সোমবার, একবালপুরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

মেয়েকে কথা দেওয়া ছিল, পরীক্ষায় ভাল ফল করলে তার দু’টো ইচ্ছে পূরণ করা হবে। মেয়ে জানিয়েছিল, ভাল ফল করলে তাকে পমেরিয়ান কুকুর কিনে দিতে হবে। আর বাবার সঙ্গে ‘লং ড্রাইভ’-এ নিয়ে যেতে হবে।

সদ্য সিবিএসই-তে ৯৬ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করা আসনা সুরানার দু’টো ইচ্ছেই পূরণ করেছিলেন তার বাবা, নির্মাণ ব্যবসায়ী আদর্শ সুরানা। বারো দিন আগে মেয়ের জন্য তিনি কিনে এনেছিলেন সাদা বাচ্চা পমেরিয়ান। আসনা তার নাম দিয়েছে হেজ়েল। আর মেয়েকে নিয়েই রবিবার গিয়েছিলেন ‘লং ড্রাইভে’। বাবা ফিরলেও, ফেরেনি মেয়ে। পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম সেই মেয়ে এখন একবালপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আদর্শ বললেন, ‘‘ওর সব ইচ্ছেই তো রাখা হল। ও যেন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসে!’’ সেই সঙ্গে এখন তাঁর মনে হচ্ছে, ‘‘ও জেদ করছিল ঠিকই, তবে শিবাজীর গাড়িতে ওকে বসতে না দিলেই ভাল হত।’’ রবিবার সকালে ডোমজুড়ের পাকুড়িয়া সেতুর কাছে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ব্যবসায়ী শিবাজী রায়ের। তিনি আদর্শের বন্ধু ছিলেন। তাঁর ফেরারি গাড়িতেই ছিল আসনা। দুর্ঘটনার কয়েক মিনিট আগে শিবাজীর গাড়ি থেকে নেমে অন্য গাড়িতে যায় শিবাজীর পুত্র শ্রেয়াংশ। তার জায়গায় শিবাজীর গাড়িতে বসে আদর্শের কন্যা আসনা।

আসনার ঠাকুরদা সুরেন্দ্রকুমার সুরানা সোমবার জানালেন, রবিবার সকালে নিজের বিএমডব্লিউ আই-৮ গা়ড়িতে মেয়ে আসনা এবং বছর বারোর ছেলে অক্ষতকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন আদর্শ। গোপালনগরের কাছে একটি কফি শপে খেয়ে ফেরার পথে আসনা এবং অক্ষত দু’জনেই শিবাজীর ফেরারিতে ওঠার জেদ ধরে। সুরেন্দ্রকুমার বলেন, ‘‘সবাই তো কলকাতায় ফিরবে, তাই কেউ বাধা দেয়নি। তবে দিদির সঙ্গে ঝগড়া করে অক্ষত বাবার গাড়িতেই ফিরে আসে।’’ এর পরেই ঘটে দুর্ঘটনা।

একবালপুরের ওই হাসপাতাল এ দিন জানিয়েছে, আসনার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। শরীরে একাধিক আঘাত রয়েছে তার। আসনার জন্য মেডিক্যাল টিমও গড়া হয়েছে। আরও ২৪ ঘণ্টা না কাটলে কিছুই বলা সম্ভব নয়।

এ দিন একবালপুরে আসনার বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, তার মা অনিতা কথা বলার অবস্থায় নেই। দিদি না থাকায় তার কুকুরের দেখাশোনায় ব্যস্ত ছোট্ট অক্ষত। কুকুরকে খাওয়াতে খাওয়াতে সে বলল, ‘‘হেজ়েল কিছুই খাচ্ছে না। ঘুমের মধ্যেও কেঁপে কেঁপে উঠছে। দিদিকে খুঁজছে।’’ জানাল, তারও ওই গাড়িতে বসার কথা ছিল। অক্ষতের কথায়, ‘‘দিদিও ওখানে না বসলেই ভাল করত।’’

বাবা আদর্শ জানালেন, স্কুলের ‘হেড গার্ল’ আসনা বরাবরই মেধাবী ছাত্রী। তার ইচ্ছে, বড় হয়ে হোটেলের ব্যবসা করার। সে জন্য বাবা-মাকে হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়ার কথা ইতিমধ্যেই বলে রেখেছে সে। মেয়ের জন্য কলেজে ভর্তির ফর্ম সংগ্রহ শুরু করেছিল সুরানা পরিবার। রবিবারের ঘটনার প্রসঙ্গে আদর্শ বললেন, ‘‘শিবাজীর গাড়ির অনেকটাই আগে এগিয়ে গিয়েছিলাম আমি। কী করে এই ঘটনা ঘটল, আন্দাজই করতে পারছি না। বন্ধু তো আর নেই, মেয়েটা অন্তত ফিরুক!’’

Ashna Surana Adarsh Surana Accident Shibaji Roy Ferrari
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy