নিয়ম করেছে পরিবহণ দফতর। অথচ পুলিশই জানে না সেই নিয়ম! এবং এই নিয়মের ফাঁক গলেই মহানগরে চলছে ‘অটো-রাজ’।
বৃহস্পতিবার গার্ডেনরিচে অটো দৌরাত্ম্যের বলি হয়েছেন এক প্রৌঢ়া। বন্দর এলাকার রামনগর থেকে শিবনগরে যাচ্ছিলেন সাবিত্রী দেবী (৫৮)। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি অটোর পিছনের আসনে ধারে বসেছিলেন তিনি। আর একটি অটো এসে ওই প্রৌঢ়ার অটোটিতে ধাক্কা মারে। তার অভিঘাতে অটোর ডান দিকের খোলা গার্ডরেল মাথায় ঢুকে যায় তাঁর। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয় তাঁর।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, অটোর দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে চালকের ডান দিকের গার্ডরেল ঝালাই করে রাখার কথা। কিন্তু বাস্তব চিত্র বলছে, অধিকাংশ অটোতেই তেমনটা হয় না। বরং সেটি খোলা-বন্ধ করা যায়। নিয়ম ভেঙে ডান দিকে যাত্রী বসানোর সময়ে সেটি খুলে রাখা হয়। সাবিত্রীদেবীর ঘটনাতেও যেমনটা করা হয়েছিল। পরিবহণ দফতরের একাংশের অভিযোগ, অটোচালকেরা নিয়ম ভেঙে গার্ডরেল খোলা রাখলেও পুলিশ তা নিয়ে নজরদারি চালায় না।
যদিও লালবাজারের ট্রাফিক বিভাগের শীর্ষকর্তাদের দাবি, পরিবহণ আইনে এমন কোনও নির্দিষ্ট তথ্য সম্পর্কে তাঁরা অবগত নন। অটোর পিছনের আসনে ডান দিকের রডটি ঝালাই করা রয়েছে কি না, তা দেখে নেওয়া হয়।
লালবাজারের এক কর্তার কথায়, “চালকের ডান দিকের গার্ডরেলের কাজে ব্যবহৃত ওই রডটি ঝালাই করা থাকবে কি না, তা নিয়ে স্পষ্ট করে মোটর ভেহিকল্স আইনে কিছু বলা নেই।” যদিও পুলিশেরই একটি অংশের মতে, পিছনের রডটি ঝালাই করার মতোই গুরুত্বপূর্ণ সামনের রডটিও। সেটির উপরে নজরদারি না থাকলে যাত্রীদের নিরাপত্তা কতটা বিঘ্নিত হতে পারে, সাবিত্রীদেবীর মৃত্যু তার প্রমাণ।
লালবাজার সূত্রের খবর, বেশ কয়েক বছর আগে অটোয় পাঁচ জনের বদলে চার জন যাত্রী নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। পিছনের সিটের ডান দিকের পাশাপাশি চালকের ডান দিকেও ওই গার্ডরেল আটকাতে বলা হয়। এক কর্তা জানান, ১৯৯৯ সালে তৎকালীন ডিসি (ট্রাফিক) চালকের ডান দিকের গার্ডরেলটিকেও ঝালাই করে নির্দিষ্ট করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই গার্ডরেল পাকাপাকি (ফিক্সড) থাকবে না খোলা-বন্ধ করা যাবে, সে বিষয়ে আইনে কিছু বলা নেই।
এই ঘটনায় পরিবহণ দফতরের অনেকে পুুলিশের উপরে দায় চাপাতে চাইলেও তাঁদের ভূমিকাও প্রশ্নাতীত নয়। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, অটোচালকের ডান দিকে থাকা ওই লোহার গার্ডরেল স্থায়ী ভাবে যুক্ত থাকার কথা। কিন্তু ‘ফিটনেস সার্টিফিকেট’ দেওয়ার সময়ে পরিবহণ দফতর সে দিকে নজর দেয় না বলে অভিযোগ। যদিও এক পরিবহণ কর্তার বক্তব্য, “ফিটনেস সার্টিফিকেট নেওয়ার সময়ে ওই রড ঝালাই করে আনা হয়। পরে খুলে ফেলেন চালকেরা।’’
লালবাজার সূত্রের খবর, শুক্রবার শহরের সব ট্রাফিক গার্ডকেই বেপরোয়া অটোর বিরুদ্ধে অভিযানে নামার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বস্তুত, শহরে অটো দুর্ঘটনা ঘটলেই অভিযানে নামেন লালবাজার কর্তারা। বছরখানেক আগে অটোচালকদের শুধরোতে ঘটা করে কর্মশালাও শুরু করা হয়েছিল। কর্মশালা এখনও মাঝেমাঝে হয়। কিন্তু অভিযান দিন কয়েক পরেই শেষ হয়ে যায়। তাই এ বারেও অটো-দৌরাত্ম্য কমানোর অভিযান কতটা সফল হবে, প্রশ্ন রয়েই যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy