Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Murder

Lynching: মোবাইল চোর সন্দেহে রাতভর পোস্টে বেঁধে ‘মার’, মানিকতলায় অটোয় মিলল যুবকের দেহ

এ দিন দেহ উদ্ধারের পরে পুলিশ দ্রুত মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। তবে রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করার খবর নেই।

এই অটোয় মেলে পাপ্পুর দেহ। বুধবার, বসাকবাগানে। নিজস্ব চিত্র

এই অটোয় মেলে পাপ্পুর দেহ। বুধবার, বসাকবাগানে। নিজস্ব চিত্র নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:২৮
Share: Save:

চোর সন্দেহে ফের এক যুবককে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠল শহরে। ঘটনাটি ঘটেছে মানিকতলা মেন রোডে। মোবাইল চোর সন্দেহে মানিকতলার গাঙ্গুলিপাড়া এলাকায় ওই যুবককে একটি বাতিস্তম্ভের সঙ্গে বেঁধে মঙ্গলবার রাতভর পেটানো হয় বলে দাবি কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শীর। এর পরে বুধবার সকালে মানিকতলার বসাকবাগান এলাকায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি অটো থেকে উদ্ধার হয় ওই যুবকের দেহ। পুলিশ সূত্রের খবর, মৃতের নাম অমরনাথ প্রসাদ ওরফে পাপ্পু (৩৮)। তিনি বসাকবাগান এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।

এ দিন দেহ উদ্ধারের পরে পুলিশ দ্রুত মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। তবে রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করার খবর নেই। পুলিশকর্তাদের দাবি, পিটিয়ে মারার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মৃতদেহের ময়না-তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট আসার পরেই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা।

প্রসঙ্গত, কয়েক দিন আগে কলকাতা পুলিশের ইস্টার্ন সাবার্বান ডিভিশনের এন্টালি থানায় তামার তার চোর সন্দেহে এক কিশোরকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছিল। এ দিনের ঘটনা যে এলাকায় ঘটেছে, সেটিও এই ডিভিশনের অন্তর্গত। এর আগেও মানিকতলা থানা এলাকায় চোর সন্দেহে পিটিয়ে মারার ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, বসাকবাগান এলাকার একটি বস্তিতে দুই দাদার সঙ্গে থাকতেন পাপ্পু। তাঁর বাবা-মা মারা গিয়েছেন। ছয় ভাইয়ের মধ্যে তিনিই সব চেয়ে ছোট। বড় দাদা, ষাটোর্ধ্ব মহেশ প্রসাদ কোনও কাজ করেন না। তার পরের জন উত্তম প্রসাদ অটোচালক এবং তাঁর রোজগারেই সংসার চলে। পাপ্পুও সে ভাবে কোনও কাজ করতেন না। তবে মাঝেমধ্যেই রাতে ঘরে ফিরতেন না তিনি। পাপ্পু নেশাগ্রস্ত ছিলেন বলেও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে।

বুধবার সকালে অটোর মধ্যে দেহটি পড়ে থাকতে দেখে এলাকায় শোরগোল পড়ে যায়। দেহটি যে পাপ্পুর, তা চিনতে পারার পরেই স্থানীয়েরা খবর দেন মানিকতলা থানায়। পুলিশ পৌঁছে দেখে, একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির সামনে দাঁড়ানো ফুলবাগান-গণেশ টকিজ় রুটের অটোর পিছনের আসনে হেলান দিয়ে পড়ে এক যুবক। মুখে গ্যাঁজলা, পায়ে গভীর চোট। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে আর জি করে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান, বহুক্ষণ আগেই ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। দেহে রাইগর মর্টিস শুরু হয়ে গিয়েছে বলেও জানান তাঁরা। এর পরেই পাপ্পুর দুই দাদাকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ।

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে দাঁড় করানো রয়েছে অটোটি। তবে সেটি ঘিরে দেওয়ার কোনও পুলিশি বন্দোবস্ত চোখে পড়েনি। স্থানীয়দের দাবি, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় অন্য পাড়ায় কয়েক বার মারধর খেয়েছিলেন পাপ্পুকে। ওই রাতেও মোবাইল চোর সন্দেহে মানিকতলার একটি ক্লাবের মাঠ লাগোয়া গাঙ্গুলিপাড়া এলাকায় তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। লতিকা ঘোষাল নামে বসাকবাগানের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘মোবাইল চোর সন্দেহে বেঁধে পিটিয়েছে। চুরি করলে পুলিশে দিত, এ ভাবে মারবে কেন?’’

এ দিন গাঙ্গুলিবাগান এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওই যুবকের মৃত্যু ঘিরে চাপা গুঞ্জন। অনেকেই মুখ খুলতে নারাজ। তবে সেখানকার এক বাসিন্দা, পিয়ালি দে একটি বাতিস্তম্ভ দেখিয়ে বলেন, ‘‘এখানেই চোর সন্দেহে এক জনকে ধরে বেধড়ক মারা হয়েছে। রাত ১২টা থেকে মারতে মারতে ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ ওঁর নিজের পাড়ায় নিয়ে গিয়ে ফেলে দিয়ে এসেছে। এখন শুনলাম, তিনি মারা গিয়েছেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কাল রাতে ওষুধ খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। জেগে থাকলে নিজেই পুলিশ ডাকতাম। চুরি করেছে বললেও তাঁর কাছ থেকে কিন্তু কিছুই পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া, চুরি করলেও পুলিশে দেওয়া উচিত ছিল।’’ আর পিয়ালির মা বলছেন, ‘‘নিজের চোখে দেখেছি ছেলেটাকে কী ভাবে মেরেছে।’’

কিন্তু কে বা কারা মারধর করেছেন? এর উত্তর অবশ্য দিতে চাননি কেউই। রাত পর্যন্ত সেই উত্তর পায়নি পুলিশও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE