Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শিশুমৃত্যুতে কাঠগড়ায় অ্যাপোলো

ফের চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগীমৃত্যুর অভিযোগ। এবং ফের কাঠগড়ায় অ্যাপোলো। এ বার চার মাসের শিশু, ঠাকুরপুকুর এলাকার জোকা-নবপল্লির কুহেলি চক্রবর্তী। এই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রোগীর পরিবারের মধ্যে বচসা ও ভাঙচুরের জেরে উত্তেজনা ছড়ায় হাসপাতাল চত্বরে।

কুহেলি চক্রবর্তী।

কুহেলি চক্রবর্তী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:২৫
Share: Save:

ফের চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগীমৃত্যুর অভিযোগ। এবং ফের কাঠগড়ায় অ্যাপোলো। এ বার চার মাসের শিশু, ঠাকুরপুকুর এলাকার জোকা-নবপল্লির কুহেলি চক্রবর্তী। এই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রোগীর পরিবারের মধ্যে বচসা ও ভাঙচুরের জেরে উত্তেজনা ছড়ায় হাসপাতাল চত্বরে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ তাঁরা অভিযোগ পান অ্যানাস্থেশিয়ার অতিরিক্ত ডোজের কারণে মৃত্যু হয়েছে মাস চারেকের একটি শিশুর। সেই সঙ্গেই খবর পান হাসপাতালে ভাঙচুরেরও। ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে মানিকতলা, ফুলবাগান, বেলেঘাটা, নারকেলডাঙা থানার পুলিশ বাহিনী। পৌঁছে যান ডিসি দেবস্মিতা দাসও। মৃত শিশুর পরিবারের তরফে অবশ্য দাবি, তাঁরা কোনও ভাঙচুর করেননি। তাঁদের সন্তানের মৃত্যুর সুবিচার চেয়েছেন কেবল।

কিছু দিন আগেই সিএমআরআই-তে রোগী মৃত্যুর অভিযোগে ভাঙচুরের পরে বেসরকারি হাসপাতালগুলির নিয়ন্ত্রণে বিশেষ স্বাস্থ্য কমিশন গড়েছে সরকার। শিশুটির পরিবার জানিয়েছে, আজ, বৃহস্পতিবার কমিশনের দ্বারস্থ হবেন তাঁরা।

কুহেলীর ডাক নাম ছিল গুঞ্জা। গুঞ্জার বাবা, অভিজিৎ চক্রবর্তী জানান, বৃহস্পতিবার শিশুটির মলের সঙ্গে রক্ত বেরোনোর কারণে জোকার ইএসআই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দু’দিন চিকিৎসার পরে চিকিৎসকেরা জানান, গুঞ্জার ‘কোলোনোস্কোপি’ করা প্রয়োজন, যে পরীক্ষা ওই হাসপাতালে হয় না। সেখান থেকেই অ্যাপোলোয় পাঠানো হয় গুঞ্জাকে। ‘‘নববর্ষের দিন, শনিবার, বিকেল চারটেয় নিয়ে আসি ওকে এখানে। শনি-রবি দু’দিন ছুটি বলে কোনও চিকিৎসক দেখেননি পর্যন্ত।’’— অভিযোগ অভিজিৎবাবুর।

আরও পড়ুন: শব সংরক্ষণের বরফ দিয়েই কি শরবত

শিশুর পরিবারের তরফে প্রশান্ত ঘোষ জানান, দু’দিন পর সোমবার কোলোনোস্কোপি করার কথা বলেন চিকিৎসকেরা। সে জন্য সোমবার দিনভর খালি পেটে রাখা হয় শিশুটিকে। কারণ এই পরীক্ষার জন্য বাচ্চাকে অন্তত সাত ঘণ্টা খালি পেটে রাখাটাই নিয়ম। ‘‘কিন্তু সারা দিনের পর ডাক্তার বললেন, ‘হবে না পরীক্ষা, লোক নেই।’ অত ক্ষণ না খেয়ে ঝিমিয়ে গিয়েছিল আমাদের বাচ্চাটা।’’— বললেন প্রশান্ত। তাঁর দাবি, মঙ্গলবার ফের সাত ঘণ্টা খালি পেটে রাখা হয় তাকে। ‘‘তত ক্ষণে ও নেতিয়ে গিয়েছে। ওই অবস্থায় দুপুরে নিয়ে যাওয়া হয় কোলোনোস্কোপি করাতে। অ্যানাস্থেশিয়া করে পরীক্ষাটি করাও হল। কিন্তু শেষ হওয়ার পরে ওর আর জ্ঞান ফিরল না।’’— কান্নায় ভেঙে পড়েন গুঞ্জার মা শালু বিয়াস চক্রবর্তী।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যে কোনও মানুষের ক্ষেত্রেই অ্যানাস্থেশিয়ার ডোজ খুব গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আরও সূক্ষ্ম। এক চুল এ দিন ও দিক হলে বড়সড় বিপর্যয় হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে শিশুটির আগে থেকেই হৃদ্‌পিণ্ডে কোনও সমস্যা ছিল কি না সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করছেন তাঁরা।

গুঞ্জার দাদু জয়দেব বৈদ্যর অভিযোগ, ‘‘এক ঘণ্টা পরেও ওর জ্ঞান ফিরল না, ভেন্টিলেশনে পাঠিয়ে দিলেন চিকিৎসকেরা। রাত এগারোটা নাগাদ ফের একটা ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়। তার আগে আমাদের দিয়ে রিস্ক বন্ডে সইও করিয়ে নেন চিকিৎসকেরা। অ্যানাস্থেশিয়ার পর জ্ঞান না-ফেরা সত্ত্বেও ঘুমের ওষুধের প্রয়োজন কেন সে প্রশ্ন করায় জানানো হয়, বাচ্চার রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ায় ওই ওষুধ দিতে হবে।’’ বুধবার সকাল সাতটা নাগাদ গুঞ্জার মৃত্যুর কথা জানান চিকিৎসকেরা। এর পরেই শুরু হয় ভাঙচুর। থানায় গিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং নির্দিষ্ট কিছু চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির লিখিত অভিযোগও করেন গুঞ্জার বাবা।


সন্তানহারা: মেয়ের মৃত্যুর খবরে বিপর্যস্ত কুহেলির মা-বাবা। বুধবার, অ্যাপোলো হাসপাতালে। ছবি: শৌভিক দে

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, শিশুটিকে আশঙ্কাজনক অবস্থাতেই আনা হয়েছিল। মঙ্গলবার বিকেলে কোলোনোস্কোপির পর সে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়। তখন ভেন্টিলেশন দিয়ে সামাল দেওয়া গেলেও, বুধবার দ্বিতীয় বার অ্যাটাক হলে তা আর সামাল দেওয়া যায়নি। হাসপাতালের সিইও রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটি হয়েছে।’’ অভিযুক্ত এক চিকিৎসকের দাবি, নির্দিষ্ট ডোজের চেয়ে কমই প্রয়োগ করা হয়েছিল অ্যানাস্থেশিয়া। একেবারে খালি পেটেও রাখা হয়নি বাচ্চাকে। তার পরেও হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয় সে। এখানে গাফিলতির প্রশ্ন ওঠে না।

স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, বৃহস্পতিবার অ্যাপোলোর কর্তাদের স্বাস্থ্য ভবনে ডাকা হয়েছে। কী ঘটেছিল, তার সবিস্তার রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে তাঁদের কাছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

medical negligence Baby girl died Apollo Hospitals
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE