E-Paper

কেমন আছে ওরা? দেশে বন্ধ ইন্টারনেট, বিচ্ছিন্ন পরিবার নিয়ে চিন্তিত কলকাতার বাংলাদেশিরা

বাংলাদেশের এই রক্তক্ষয়ী আন্দোলন কোন দিকে গড়াচ্ছে, সে দিকে চোখ সকলের। কিন্তু বর্তমানে কলকাতায় থাকা বাংলাদেশিরা চাইছেন, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে কিংবা নিরাপদে দেশে ফিরতে।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৪ ০৭:৫৫
দুঃসময়: চিকিৎসা করাতে এসেছেন শাহনাজ পরভিন, মহম্মদ মিরাজুল হকেরা। পরিবারের চিন্তায় কাটছে তাঁদের দিন। শুক্রবার, বাইপাসের এক অতিথিশালায়। ছবি: সুমন বল্লভ।

দুঃসময়: চিকিৎসা করাতে এসেছেন শাহনাজ পরভিন, মহম্মদ মিরাজুল হকেরা। পরিবারের চিন্তায় কাটছে তাঁদের দিন। শুক্রবার, বাইপাসের এক অতিথিশালায়। ছবি: সুমন বল্লভ।

বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা। বিচ্ছিন্ন পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ। এই পরিস্থিতিতে দেশে ফেরা ঝুুঁকির বুঝে অনেকেই বাতিল করছেন উড়ানের টিকিট।

শনিবার ঢাকায় ফেরার কথা ছিল কলকাতায় বেড়াতে আসা মহম্মদ হৃদয় মামুদের। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা বুঝে তিনি সেই উড়ান বাতিল করেছেন। অন্য দিকে, সূচি নির্ধারিত থাকায় ঝুঁকি মাথায় নিয়েই শুক্রবার কলকাতায় পৌঁছেছেন ঢাকার বাসিন্দা শাকিল শেখ। কলকাতার সদর স্ট্রিটে মোবাইলের সিম কার্ডের দোকানে দাঁড়িয়ে উদ্বিগ্ন মামুদ প্রশ্ন করলেন শাকিলকে, ‘‘ভাই, কী কইর‌্যা আইলেন? ঢাকার কী অবস্থা? আজ তো আবার হুজ্জতি হইসে!’’

চাকরিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিকে কেন্দ্র করে জ্বলছে বাংলাদেশ। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে সে দেশের মতো কলকাতায় বসেও উদ্বেগে বাংলাদেশের বহু মানুষ। চিকিৎসা-সহ নানা কাজে যাঁরা এই সময়ে কলকাতায় রয়েছেন।

সদর স্ট্রিট, মার্কুইস স্ট্রিট, পাটুলির মতো জায়গায় সারা বছর বাংলাদেশের মানুষের যাতায়াত। তাঁদের জন্য বিভিন্ন হোটেল ও অতিথিশালা রয়েছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি সেই ব্যবসায় প্রভাব ফেলেছে। পিয়ারলেস হাসপাতালের কাছে সোনালি পার্কের একটি অতিথিশালায় এ দিন দেখা গেল, দেশে ফেরার তোড়জোড় করছেন নাটোরের বাসিন্দা দম্পতি হাসানুজ্জামান ও হোসেনারা বিবি। বাইপাসের ধারের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন তাঁরা। কৃষিকাজে যুক্ত হাসানুজ্জামান। তাঁর কথায়, ‘‘গেদে-দর্শনা হয়ে ফিরব ভাবছি। ওই পথ এখনও খোলা। কখন বন্ধ করবে, জানি না। কারও সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে না।’’

অন্য একটি অতিথিশালার বাইরে দেখা গেল, সে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে কয়েক জন বাসিন্দার জটলা। তাঁরা জানান, মোবাইল ও ইন্টারনেট, দু’টি পরিষেবাই বুধবার বিকেল থেকে বন্ধ। সকলেই তখন ব্যস্ত দেশে ফেরার উপায় ঠিক করতে।

রাজশাহী থেকে বাবাকে নিয়ে চিকিৎসা করাতে আসা, সে দেশের সরকারি কর্মী শাহনাজ পরভিন স্বামীর কাছে রেখে এসেছেন সাড়ে ছ’বছরের ছেলে ও সাড়ে চার বছরের মেয়েকে। সন্তানদের ছবি দেখছিলেন মোবাইলে। কী ভাবে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন শাহনাজ বলেন, ‘‘মঙ্গলবার এখানে পৌঁছেছি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে যোগাযোগ নেই। বাড়ির লোকও চিন্তায় আছেন, বুঝতে পারছি। আর এক দিন দেখে ফেরার কথা ভাবব।’’

বাংলাদেশিদের কাছে পরিচিত কলকাতার সদর স্ট্রিটেও জোর চর্চা সে দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে। সেখানে মোবাইল ফোনের সিম কার্ডের দোকানে দাঁড়ানো হৃদয় মামুদের কথায়, ‘‘আমার আত্মীয়দের মধ্যে রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার উত্তর-পুরুষ। দেশের জন্য লড়েছেন যাঁরা, তাঁদের পরিবারের চাকরিতে এই সংরক্ষণ প্রাপ্য।’’ যদিও কৃষক পরিবারের মিরাজুল হকের কথায়, ‘‘মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সকলের শ্রদ্ধা রয়েছে। কিন্তু কোটা অগ্রাধিকার পেলে মেধাবী ছাত্রদের কী হবে?’’

বাংলাদেশের এই রক্তক্ষয়ী আন্দোলন কোন দিকে গড়াচ্ছে, সে দিকে চোখ সকলের। কিন্তু বর্তমানে কলকাতায় থাকা বাংলাদেশিরা চাইছেন, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে কিংবা নিরাপদে দেশে ফিরতে। একটি অতিথিশালার মালিক সুপ্রকাশ ব্যাপারি বলেন, ‘‘আমাদের তো সারা বছরের কারবার। অনেক অতিথির সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগ। উদ্বিগ্ন তাঁদের নিয়ে। অনেকের আসার কথা রয়েছে। কিন্তু কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bangladesh Protest

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy