E-Paper

দুর্ঘটনায় মৃত তিন জনের দেহ আসতেই শোকে বিহ্বল পাড়া-পরিবার

এক দশক আগে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ছুটন্ত লরি পিষে দিয়েছিল রাস্তায় মা-বাবার সঙ্গে দাঁড়ানো তিন শিশুকে। তার পরে রবিবারের মতো বড় দুর্ঘটনা ওই তল্লাটে ঘটেনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:৩৫
মর্মান্তিক: শববাহী গাড়ি ছঁুয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃত নীপা দাশগুপ্তের মা মিনু ভৌমিক। সোমবার, বাগুইআটিতে।

মর্মান্তিক: শববাহী গাড়ি ছঁুয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃত নীপা দাশগুপ্তের মা মিনু ভৌমিক। সোমবার, বাগুইআটিতে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।

­সঙ্কীর্ণ গলিতে পর পর তিনটি কাচের গাড়ি তিন জনকে নিয়ে পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়ল গোটা পাড়া। বৃদ্ধা ছুটতে ছুটতে বাড়ির বাইরে এসে একটি কাচের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তিনটি কাচের গাড়ির ভিতরে শোয়ানো তাঁর ছোট মেয়ে, নাতনি আর জামাইয়ের দেহ। কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বৃদ্ধা বলে চললেন, ‘‘মান্টু, দিদিভাই, আমি কাকে নিয়ে থাকব? কেন আসতে গেলি?’’

রবিবার দুর্গানগরের ভাড়া বাড়ি থেকে স্বামীর স্কুটারে চেপে ১৪ বছরের মেয়েকে নিয়ে বাগুইআটিতে মা মিনু ভৌমিকের বাড়িতে আসছিলেন নীপা দাশগুপ্ত। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে লরির ধাক্কায় তিনি, তাঁর স্বামী জয়দীপ এবং মেয়ে সৃজনী স্কুটার থেকে ছিটকে পড়েন। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিন জন। সৃজনীর শরীর লরির চাকায় পিষে যায়। সোমবার নীপা যেন সপরিবার নিজের বাড়িতে ঘুরে গেলেন শেষ বারের মতো। বাগুইআটির নারায়ণতলায় নীপার মায়ের সঙ্গে শোকে-কান্নায় ভেঙে পড়লেন আত্মীয় প্রতিবেশীরা। নীপাকে তাঁর ডাকনাম মান্টু কিংবা সৃজনীকে তার ডাকনাম জুনি বলে ডেকে কাঁদতে কাঁদতে তাঁদের বলতে শোনা যায়, ‘‘কেন তোরা আসতে গেলি?’’

এক দশক আগে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ছুটন্ত লরি পিষে দিয়েছিল রাস্তায় মা-বাবার সঙ্গে দাঁড়ানো তিন শিশুকে। তার পরে রবিবারের মতো বড় দুর্ঘটনা ওই তল্লাটে ঘটেনি। যশোর রোডের অদূরে বিশরপাড়ার নবজীবন মোড়ের কাছে নিজেদের পৈতৃক বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে জয়দীপের দাদা অভিজিতের আক্ষেপ, ‘‘এ ভাবে পরিবারটা শেষ হয়ে গেল, বিশ্বাস করতে পারছি না। অনেক বছর ধরে ভাই স্কুটার চালাচ্ছে। কে জানত, এত বড় ক্ষতি হবে।’’ বারাসত হাসপাতালে ময়না তদন্তের শেষে তিন জনের দেহ শববাহী গাড়িতে শুইয়ে পুলিশের কনভয় করে নিয়ে আসা হয় বিশরপাড়ায়। জয়দীপের পৈতৃক বাড়ি সেখানে। পেশার খাতিরে জয়দীপ দুর্গানগরের ভাড়া বাড়িতে থাকলেও বাড়ি এবং পাড়ার সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। তাই মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনার খবর রবিবার রাতে চাউর হওয়ার পরে শোকস্তব্ধ সকলেই। সন্ধ্যায় তিনটি দেহ পাড়ায় ঢুকতেই বাড়ির সামনে ভেঙে পড়ে ভিড়। জয়দীপের বন্ধু বিমল রায়ের কথায়, ‘‘জয়দীপ স্কুটার নিয়ে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে উঠত না। মৃত্যু টানল বলেই বোধহয় রবিবার ওই রাস্তায় গিয়েছিল স্কুটার নিয়ে।’’

রবিবারের ওই দুর্ঘটনা কতটা প্রভাব ফেলেছে জনমানসে, তা বোঝা গেল বিশরপাড়া থেকে বাগুইআটিতে পুলিশের কনভয়ের সঙ্গে যেতে যেতে। রাস্তায় জড়ো হওয়া অনেকেই খোঁজ করলেন তিনটি দেহ রবিবারের দুর্ঘটনাগ্রস্তদের কিনা।

এ দিকে, এ দিন বিধাননগর পুলিশ জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, দুর্ঘটনাস্থলের কাছে উড়ালপুলের অন্তত ৭০ মিটার আগে দিক-নির্দেশক বসানো হবে। যাতে গাড়িচালকদের উড়ালপুল ধরে কলকাতার দিকে যেতে কিংবা নীচের রাস্তা ধরে বারাসতের দিকে যেতে বিভ্রান্তি না হয়। রবিবার ওই বিভ্রান্তিতেই জয়দীপ ও তাঁর পরিবার দুর্ঘটনায় পড়েন বলে দাবি পুলিশের। পাশাপাশি, রাস্তার আলো ও হাইমাস্ট আলো ঠিক করা, পথ-বিভাজিকায় আলো বসিয়ে সার্ভিস রোডের সঙ্গে বড় রাস্তার তফাত তৈরির মতো একাধিক সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Road Accident

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy