E-Paper

মদ্যপানের প্রতিবাদ করায় শিক্ষককে ‘মার’, ধৃত ৩

শনিবার ভোরে ঘটনাটি ঘটে বেলঘরিয়ায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন পুলিশ আধিকারিকেরা। এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৫ ০৫:৩০
এক নাবালিকা-সহ তিন জন গ্রেফতার।

এক নাবালিকা-সহ তিন জন গ্রেফতার। —প্রতীকী চিত্র।

পুকুরপাড়ে বসে রয়েছেন কয়েক জন তরুণ ও এক জন তরুণী। সাতসকালে কেন তাঁরা রাস্তায় বসে রয়েছেন, মোটরবাইক থামিয়ে তা জানতে গিয়েছিলেন এলাকারই এক যুবক। কিন্তু পুকুরের ধারে বসে তাঁদের মদ্যপান করতে দেখে প্রতিবাদ করেন পেশায় অঙ্কন শিক্ষক ওই যুবক। অভিযোগ, প্রকাশ্যে নেশা করার প্রতিবাদ করতেই তাঁকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করেন ওই তরুণেরা। শিক্ষককে ওই তরুণীও নিগ্রহ করেছেন বলে অভিযোগ। মারধরে অসুস্থ হয়ে কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছেন ওই শিক্ষক।

শনিবার ভোরে ঘটনাটি ঘটে বেলঘরিয়ায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন পুলিশ আধিকারিকেরা। এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে পুলিশ। এর পরে সকালেই নিমতার বাসিন্দা ওই তরুণী মন্দিরা মুখোপাধ্যায় এবং এক নাবালককে গ্রেফতার করে বেলঘরিয়া থানা। বিকেলে আরও এক নাবালককে ধরে পুলিশ। ব্যারাকপুর সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘বাকি আরও দুই অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।’’ অভিযুক্তেরা সকলেই নিমতা থানা এলাকার বাসিন্দা। আক্রান্ত শিক্ষক নিরুপম পাল থাকেন বেলঘরিয়ার নন্দননগরে।

পুলিশ ও স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, শুক্রবার রাতে কালীপুজো উপলক্ষে পাশের এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন নিরুপম। এ দিন সকাল ৬টা নাগাদ বাইক চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। অভিযোগ, সেই সময়ে তিনি দেখেন, বছর পঁচিশের ওই তরুণী এবং আরও চার জন নন্দননগরের পুকুরপাড়ে বসে মদ্যপান করছেন। এলাকার মধ্যে প্রকাশ্যে বসে কেন নেশা করা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন করতেই ওই অভিযুক্তেরা নিরুপমের উপরে চড়াও হন বলে অভিযোগ। এলোপাথাড়ি কিল, চড়, লাথি, ঘুষি মারতে মারতে ওই শিক্ষককে পুকুরের উল্টো দিকের একটি বাড়ির সামনে নিয়ে গিয়ে ফেলা হয়। সেখানেও চলে মারধর। সেই সময়ে দু’-তিন জন স্থানীয় বাসিন্দা রাস্তায় বেরিয়ে ওই ঘটনা দেখে হতবাক হয়ে যান। কিন্তু তাঁরা কেউ এগিয়ে আসেননি বলেও দাবি নিরুপমের।

চোখ, নাক, মুখ ও বুকে চোট পেয়েছেন নিরুপম। তিনি বলেন, ‘‘বাইক থেকে নেমে ওদের মদ্যপান করতে দেখে আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। তখনই ওরা আমার উপরে চড়াও হয়। খুব আতঙ্কে আছি।’’ স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকায় প্রায়ই এ ভাবে বহিরাগতেরা নেশার আসর বসায়। বার বার প্রতিবাদ করেও কোনও লাভ হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা বিপ্লব দাস বলেন, ‘‘এক জন শিক্ষককে যদি এ ভাবে মারধর করা হয়, তা হলে সাধারণ মানুষের কী হবে? আমরা সকলেই আতঙ্কিত।’’

সূত্রের খবর, ঘটনার সময়ে চেঁচামেচিতে আশপাশের বাড়ির লোকজন বেরিয়ে আসতেই মন্দিরা-সহ সকলে চম্পট দেয়। কোনও মতে বাড়িতে ফিরে এলেও অসুস্থ হয়ে পড়েন নিরুপম। পরিজনেরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই শিক্ষকের পরিবারের তরফে বেলঘরিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। সিসি ক্যামেরার সূত্র ধরে নন্দননগর সংলগ্ন নিমতা এলাকা থেকে তরুণী-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সূত্রের খবর, মন্দিরা ভিন্ রাজ্যে কাজ করেন। তাঁর ক্যারাটের প্রশিক্ষণ রয়েছে। শুক্রবার রাতে কালীপুজো উপলক্ষে অভিযুক্তেরা সকলে একত্রিত হয়ে নেশার আসর বসিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।

ঘটনার খবর পেয়ে নিরুপমের বাড়িতে যান স্থানীয় সিপিএম নেতা সায়নদীপ মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘শুধু বেলঘরিয়া নয়, সর্বত্রই দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল গড়ে উঠেছে।’’ কামারহাটির পুরপ্রধান গোপাল সাহা বলেন, ‘‘এক জন শিক্ষককে এই ভাবে মারধর কোনও মতেই বরদাস্ত করা যায় না। আইন নিজের মতো ব্যবস্থা নেবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

police investigation Belgharia

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy