Advertisement
E-Paper

চুলোয় বৃষ্টি, আমবাঙালি শপিংয়ে মজে

হাওয়া অফিস পূর্বাভাস দিয়েছিল বৃষ্টি হতে পারে। সকাল থেকে মাঝেমধ্যে মুখভার করেছে আকাশও। কোনও কোনও অঞ্চলে দু’-এক পশলা বৃষ্টিও হয়েছে। কিন্তু বাঙালি সে সবে পাত্তা দিতে নারাজ।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:০৪
রবিবারের নিউ মার্কেট চত্বর। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

রবিবারের নিউ মার্কেট চত্বর। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

হাওয়া অফিস পূর্বাভাস দিয়েছিল বৃষ্টি হতে পারে। সকাল থেকে মাঝেমধ্যে মুখভার করেছে আকাশও। কোনও কোনও অঞ্চলে দু’-এক পশলা বৃষ্টিও হয়েছে। কিন্তু বাঙালি সে সবে পাত্তা দিতে নারাজ।

হাতে আর দুটো মাত্র সপ্তাহ। তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটা সারতে কোথাও সপরিবার, কোথাও আবার বন্ধু-বান্ধব নিয়ে দলে দলে বেরিয়ে পড়েছিলেন বঙ্গসন্তানেরা। গড়িয়াহাট-নিউ মার্কেট-হাতিবাগানে তিলধারণের জায়গা নেই। সোনারপুর থেকে সিঁথি, রবিবার পুরো কলকাতা যেন আটকে গিয়েছিল এই তিন বাজারে।

‘ক’টা হল?’— সারা শহর এই বিজ্ঞাপনে ভরিয়ে দিয়েছে যে বস্ত্র বিপণি সংস্থা, এ দিন সেই সংস্থার গড়িয়াহাটের শাখায় পা ফেলার জায়গা আতসকাচ দিয়ে খুঁজতে হচ্ছিল। রাজপুত্তুর-রাজকুমারীরা বাবা-মায়ের পছন্দের উপরে ভরসা না রাখতে পেরে ছুটির দিনে নিজেরাই হাজির হয়েছেন। এমনই এক জন, টালিগঞ্জের ক্লাস সিক্সের মহুয়া রায়ের কথায়, ‘‘আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সৃজনাও এই দোকান থেকে ‘বাজিরাও মস্তানি’ সালোয়ার কিনেছে। বাবা ঠিক বুঝতে পারছে না সেটা কী। তাই আমায় নিয়ে এসেছে।’’

দুর্গাপুজো বলে কথা! শুধু সালোয়ার-কুর্তি কিনলেই লিস্ট শেষ হয় না কি? সঙ্গে চাই মানানসই কানের দুল, ক্লিপ, জুতো— আরও কত কী। তাই ভিড় ঠেলে পছন্দের জামাটা কিনেই কাজ শেষ হচ্ছে না। তার পরে খুঁজতে হচ্ছে দুল, চুড়িও। পালাজো-কুর্তি হলে মেটালের চুড়ি, চাপা কানের দুল চলে। কিন্তু সঙ্গে তো রয়েছে খয়েরি রঙের চুড়িদার। তার সঙ্গে তো মোটেই ওই গয়না চলবে না। তাই গড়িয়াহাটের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত চষে ফেলছেন কালীঘাটের অনুত্তমা রায়। হনহন করে হাঁটতে হাঁটতে বললেন, ‘‘চুড়িদারের রঙের সঙ্গে মানানসই পাথরের কাজ করা কানের দুল কিছুতেই পাচ্ছি না। কেনাকাটা আজও পুরো হল না।’’

তবে জামা-গয়না-জুতোতেই তালিকা শেষ নয়। সাজ সম্পূর্ণ করতে চাই মানানসই ক্লাচ ব্যাগও। সেখানে আবার গড়িয়াহাটকে টেক্কা দিচ্ছে নিউ মার্কেট। পকেটের ভার বুঝে ক্রেতারা ঢুকছেন বিভিন্ন দোকানে। জামা-কাপড়ের থেকেও এখানে জুতো আর ব্যাগের দোকানে বেশি ভিড়। ধর্মতলার একটি জুতোর দোকানে ঢোকার জন্য লাইন চলে এসেছে রাস্তার অর্ধেক পর্যন্ত। সেই লাইনে শুধু শহরবাসীই নয়, রয়েছেন কলকাতার আশপাশের এলাকার বহু মানুষও। সোদপুর থেকে বন্ধুদের সঙ্গে জুতো কিনতে এসেছেন আকাশ দত্ত। তিনি বললেন, ‘‘পুজোর সময়ে এই দোকান থেকে জুতো না কিনলে মনেই হয় না পুজোর বাজার সম্পূর্ণ হয়েছে। একটা ছুটির দিন পেয়েছি। তাই আর দেরি করিনি।’’

রবিবারের জনারণ্যের ছবিটায় এ ভাবেই এক হয়ে গেল কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ। গড়িয়াহাটের মতোই কেনাকাটার মেজাজ পাওয়া গেল হাতিবাগানেও। সেখানে আবার কুর্তি-পালাজোর জন্য বেশি হুড়োহুড়ি। যে সব দোকানে রেডিমেড পোশাককে মাপের করে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে ভিড় আরও বেশি।

বড় উৎসবে শুধু নিজেদের জন্যই কেনাকাটি করলে কি চলে! ভগবানেরও যে নতুন কিছু চাই। হাতিবাগানে তাই দেদার বিকোচ্ছে ‘গোপালের জামা’। নিজেদের জন্য কেনাকাটার পরে ভগবানের জন্য তা কিনছেন অনেকে। যেমন গিরিশ পার্কের মন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘পুজোর দিন আমরা নতুন জামা পরব, গোপাল পরবেন না সে কি হয়? তাই তাঁর জন্যও সোনালি সুতোর কাজ করা জামা কিনেছি।’’

ভিড় দেখে হাসি চওড়া হচ্ছে দোকানিদের। তাঁরা বলছেন, ‘‘সবে তো শুরু। এখনও দুটো রবিবার হাতে রয়েছে। এমন চললে এ বারের পুজো জমে যাবে।’’

কেনাকাটার শেষ পর্বে থাকছে পেটপুজো। ভোজনরসিক বাঙালির যেন সব কিছু শেষ হয়েও শেষ হয় না ওটা ছাড়া। তাই পুজোর কেনাকাটার অন্তিমে জমিয়ে চলছে খানাপিনা। জামা-কাপড়ের দোকানে যেমন ভিড়, তেমনি ভিড়ই চোখে পড়ছে ফাস্ট ফুড থেকে ফুচকার দোকানে।

Rain Durga puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy