Advertisement
০৯ মে ২০২৪

জালিয়াতির কেঁচো খুঁড়তেই ফোঁস কেউটের

মে মাসে লেকটাউনের দক্ষিণদাঁড়ি রোডের এক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, তাঁর নামে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলে সাত লক্ষেরও বেশি টাকা জমা করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৭ ১৩:২৫
Share: Save:

নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পরে দেখা গিয়েছিল, অনেকের অ্যাকাউন্টেই বিপুল পরিমাণ টাকা ঢুকেছে। কালো টাকা সাদা করতে গিয়েই এমনটা হয়েছে বলে ভেবেছিল প্রশাসন।

সে রকমই একটি অভিযোগের তদন্তে নেমে কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে পড়েছে কেউটে! গ্রাহককে না জানিয়ে তাঁর নামে অ্যাকাউন্ট খুলে সাত লক্ষেরও বেশি টাকা জমা করা হয়েছিল! সেই ঘটনার তদন্তে নেমে কোটি কোটি টাকা নয়ছয় এবং কালো টাকা সাদা করার ঘটনার কথা জানতে পেরেছে বিধাননগর পুলিশ।

মে মাসে লেকটাউনের দক্ষিণদাঁড়ি রোডের এক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, তাঁর নামে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলে সাত লক্ষেরও বেশি টাকা জমা করা হয়েছে। তদন্তে নেমে বিধাননগর পুলিশ এক জনকে গ্রেফতারও করেছিল। কিন্তু তিনি কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জামিনে পেয়ে যান।

ওই ঘটনায় এ বার চিনার পার্কের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের প্রাক্তন ব্রাঞ্চ ম্যানেজারকে গ্রেফতার করল বিধাননগর পুলিশ। বুধবার রাতে ধৃত ওই ব্যক্তির নাম মধুসূদন গ্রান্‌ধি। বৃহস্পতিবার তাঁকে বিধাননগর আদালতে তোলা হয়। অভিযুক্তের আইনজীবী দাবি করেন, এই ঘটনার সঙ্গে ধৃতের কোনও যোগ নেই। যদিও পাল্টা দাবিতে বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি জানান, এটা বৃহত্তর ষড়যন্ত্র। দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে ওই ব্যক্তিকে চার দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

পুলিশ জানায়, গত মে মাসে দক্ষিণদাঁড়ি রোডের বাসিন্দা সন্তোষ শর্মা সাইবার থানায় অভিযোগ করে জানান, আয়কর দফতরের তরফে তিনি জানতে পেরেছেন, চিনার পার্কের ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে সাত লক্ষাধিক টাকা তাঁর কারেন্ট অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। অথচ তিনি ওই ব্যাঙ্কে কোনও অ্যাকাউন্ট খোলেননি।

গত ফেব্রুয়ারিতে আয়কর দফতরের ই-মেলে সন্তোষবাবু এই ঘটনার কথা জানতে পারেন। তার পরেই বিধাননগর পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি। পুলিশ সূত্রের খবর, তদন্ত শুরু করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ওই শাখায় হানা দেন তদন্তকারীরা। ব্যাঙ্ককর্মী থেকে একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ কিছু সূত্রও হাতে পায় পুলিশ। তদন্তে নাম উঠে আসে ওই শাখার প্রাক্তন ম্যানেজার মধুসূদন গ্রান্‌ধির। তিনি অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা। বদলি হয়ে নবি মুম্বইয়ের পাম বিচ রোড শাখায় কাজ করছিলেন।

পুলিশের দাবি, যে সময়ে এই ঘটনা ঘটেছিল, সে সময়ে চিনার পার্কের ওই ব্যাঙ্কে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার পদে কাজ করতেন মধুসূদন। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁর বয়ানে অসঙ্গতি মেলে। এর পরেই তাঁকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেয় বিধাননগর পুলিশ।

এই মামলায় বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি বিভাস চট্টোপাধ্যায় এ দিন আদালতে জানান, এই ঘটনায় আগেও এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিনি এখন জামিনে মুক্ত। এর পরে খোদ অভিযোগকারী মামলা প্রত্যাহার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হাইকোর্ট তাঁর আবেদন খারিজ করে দেয়।

পুলিশ জানায়, তদন্তে দেখা গিয়েছে, চিনার পার্কের ওই ব্যাঙ্কে একাধিক অ্যাকাউন্ট খুলে কোটি কোটি টাকা জমা করা হয়েছে। সেখান থেকে টাকা অন্যত্র সরানো হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ধৃতের ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ। আরও কারা এই ঘটনায় জড়িত, তাঁকে জেরা করে তা জানার চেষ্টা চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE