Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Salt Lake Murder Case

বাঁচতে মরিয়া স্ত্রীকে বার বার আঘাত, পুলিশের কাছে স্বীকার বৃদ্ধের

বিধাননগর কমিশনারেট জানাচ্ছে, পুলিশের কাছে যদুনাথের বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, ঘটনার কয়েক দিন আগে থেকেই তিনি মনস্থ করেছিলেন যে স্ত্রীকে খুন করে আত্মঘাতী হবেন।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:০০
Share: Save:

মনে মনে ভেবেছিলেন অনেক দিন ধরেই। কিন্তু স্ত্রী ঘুণাক্ষরেও টের পাননি স্বামী মনে মনে কী সাংঘাতিক পরিকল্পনা ফেঁদেছেন। তাই আচমকা স্বামী ছুরি নিয়ে আঘাত করতে শুরু করলে হকচকিয়ে যান তিনি। ঘরের মধ্যেই এ দিক, সে দিক পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।

সল্টলেকের জিসি ব্লকে মন্দিরা মিত্র নামে বৃদ্ধাকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত, অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক যদুনাথ মিত্র জিজ্ঞাসাবাদে এমনই জানিয়েছেন বলে দাবি বিধাননগর কমিশনারেটের। ঘটনার দিন ছুরির আঘাত থেকে বাঁচতে মন্দিরাঢুকে পড়েছিলেন শৌচাগারের ভিতরে। শেষ পর্যন্ত শৌচাগারের ভিতরেই কাটারির বাট দিয়ে স্ত্রীর মাথায় আঘাত করেছিলেন যদুনাথ। সেই আঘাতেই মৃত্যু হয়েছিল তাঁর স্ত্রীর। তবে যদুনাথের অনেক কথায় কিছু অসঙ্গতি রয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ। সামগ্রিক ঘটনায় তিনি অনুতপ্ত বলেই পুলিশকে বৃদ্ধ জানিয়েছেন।

গত ২৭ মার্চ সকালে সল্টলেকের জিসি ব্লকের ৩০ নম্বর বাড়ির দোতলার শৌচাগার থেকে উদ্ধার হয় মন্দিরা মিত্রের (৭৬) রক্তাক্ত দেহ।বিধাননগর পুলিশ সূত্রের খবর, যদুনাথ বর্তমানে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখান থেকে ছাড়া হলেই তাঁকে গ্রেফতার করতে চায় পুলিশ।কিন্তু তার আগে যদুনাথকে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু করেছেন তদন্তকারীরা।

পুলিশ সূত্রের খবর, স্ত্রীকে খুনের পরে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন যদুনাথ। তদন্তকারীরা জানান, সুইসাইড নোটে বৃদ্ধ লিখেছিলেন, তিনি জীবনে যা ভুল করেছেন, তাঁর মৃত্যুর পরে সেই ভুলের খেসারত তাঁর স্ত্রীকে দিতে হবে। স্ত্রীকে সে সব ঝামেলা থেকে রেহাই দিতেই তাঁকে খুন করে তিনি আত্মঘাতী হচ্ছেন। কার্যত সেই কথাই পুলিশকে যদুনাথ জানিয়েছেন বলে খবর।

বিধাননগর কমিশনারেট জানাচ্ছে, পুলিশের কাছে যদুনাথের বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, ঘটনার কয়েক দিন আগে থেকেই তিনি মনস্থ করেছিলেন যে স্ত্রীকে খুন করে আত্মঘাতী হবেন। ২৬ তারিখ সন্ধ্যায় তিনি স্ত্রীকে প্রথমে ছুরি নিয়ে আক্রমণ করেন। বেশ কয়েক বার মন্দিরা সেই আক্রমণ প্রতিহত করেন। ঘরের মধ্যে এ দিক সে দিক ছুটে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেন তিনি। ঢুকেপড়েন রান্নাঘরেও। কিন্তু সেখানেও তাঁকে ছুরি দিয়ে খুন করার চেষ্টা চালান যদুনাথ। এর পরে এক সময়ে মন্দিরা শৌচাগারে ঢুকে প্রাণেবাঁচার চেষ্টা করেন। তবে সে চেষ্টায় তিনি ব্যর্থ হন।

পুলিশের দাবি, যদুনাথ শৌচাগারের ভিতরে ঢুকে কাটারির বাট দিয়ে বৃদ্ধা স্ত্রীর মাথায় আঘাত করেন। তাতে মাথায় রক্ত জমাট বেঁধেই মূলত মৃত্যু হয় মন্দিরার। তবে একাধিক বার ছুরির আঘাতের জেরে তৈরি ক্ষত থেকে বার হওয়া রক্তে লাল হয়ে ছিল মন্দিরার দেহ।

কেন এত নৃশংস পরিকল্পনা? পুলিশের দাবি, উত্তরে যদুনাথ দাবি করেছেন, যত বার স্ত্রীকে মারতে গিয়েছিলেন তিনি, স্ত্রী পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। তাতেই বেড়েছে আঘাতের সংখ্যা। মন্দিরা ‘বাঁচাও বাঁচাও’ করে চিৎকারওকরেছিলেন। স্ত্রীর মৃত্যুর পরে যদুনাথ ৪৫টি ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। কিন্তু গভীর রাতে তাঁর ঘুম ভাঙে। এরপরে তিনি গ্যাস জ্বালিয়ে গায়ে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেন।ঘরের খাওয়ার টেবিলে রক্তাক্ত অবস্থায় এলিয়ে পড়ে থাকা যদুনাথকে উদ্ধারের সময়ে তাঁর গায়ে পোড়া দাগ দেখেছিল পুলিশ।নিজের শরীরেও ছুরি চালিয়েছিলেন ওই বৃদ্ধ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Salt Lake Bidhannagar Police Commissionerate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE