Advertisement
E-Paper

Blood: ব্যাগের অভাবে আলাদা করা যাচ্ছে না রক্তের উপাদান, ভোগান্তি

রাজ্যের ভাঁড়ারে এখন রক্ত সংগ্রহের ‘ডবল’ ও ‘ট্রিপল’ ব্যাগ পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই। ফলে, সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে চরম সমস্যা দেখা দিয়েছে।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২২ ০৬:৪৬

ফাইল চিত্র।

অতিমারির জেরে গত দু’বছরে এ রাজ্যে রক্তদান কর্মসূচি এমনিতেই অনেকটা ব্যাহত হয়েছে। তার উপরে রক্তের উপাদানের পৃথকীকরণের ব্যাগের সঙ্কট দেখা দেওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে। গত কিছু দিন ধরে রাজ্যের সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কগুলি এমনই ব্যাগের আকালে ভুগছে।

সমস্যার কথা স্বীকার করে দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। কিন্তু রক্তদান আন্দোলনের কর্মী থেকে সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মচারীদের একাংশের প্রশ্ন, এত জরুরি একটি বস্তুর ভাঁড়ার একেবারে তলানিতে ঠেকার আগেই কর্তৃপক্ষের টনক নড়ল না কেন? তাঁদের অভিযোগ, এমন সমস্যা মাঝেমধ্যেই হয়। তবু তা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগাম বরাত দেওয়া হয় না। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, গত মার্চে দেড় লক্ষ ব্যাগের বরাত দেওয়া হলেও এখনও তা হাতে আসেনি।

সূত্রের খবর, রাজ্যের ভাঁড়ারে এখন রক্ত সংগ্রহের ‘ডবল’ ও ‘ট্রিপল’ ব্যাগ পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই। ফলে, সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে চরম সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ রাজ্যে সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের সংখ্যা ৮৭। তার মধ্যে ৩৩টিতে এখন রক্তের পৃথকীকরণের সুবিধা রয়েছে। ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরাই জানাচ্ছেন, ওই বিশেষ ধরনের ব্যাগের অভাব থাকায় স্বাস্থ্য ভবন মৌখিক ভাবে রক্তদান শিবিরে ‘সিঙ্গল’ ব্যাগ নিয়ে যেতে বলেছে। করোনার প্রকোপ এখন কম। তাই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় রক্তদান শিবির হচ্ছে। পুলিশকেও রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করতে নির্দেশ দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু প্রশ্ন হল, শিবির থেকে সংগৃহীত হোল ব্লাড দিয়ে কি গ্রহীতার প্রয়োজন মেটানো সম্ভব?

রক্তদান আন্দোলনে যুক্ত দীপঙ্কর মিত্র বললেন, ‘‘আধুনিক রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থায় হোল ব্লাড চালাতে বারণ করা হচ্ছে। এক জন থ্যালাসেমিয়া রোগীকে হোল ব্লাড দেওয়া হলে সেটা তাঁর পক্ষে মৃত্যুসম। কিন্তু ডবল ও ট্রিপল ব্যাগই তো নেই। তাই উপাদান আলাদা করার উপায়ও নেই।’’ হোল ব্লাড কোনও রোগীর ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় নয় বলে দাবি ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম’-এর সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রের পরামর্শদাতা কমিটির সদস্য অপূর্ব ঘোষেরও। তিনি জানান, রক্তদানে পশ্চিমবঙ্গ এগিয়ে থাকলেও পৃথকীকরণে পিছিয়ে। গুজরাত, দিল্লি, বেঙ্গালুরু-সহ বহু জায়গায় ১০০ শতাংশ রক্ত পৃথকীকরণ করা হয়। অর্থাৎ, এক দাতার রক্ত চার গ্রহীতাকে দেওয়া যায়।

অপূর্ববাবু বলেন, ‘‘এ রাজ্যে সরকারি স্তরে পৃথকীকরণের কেন্দ্রও কম। উত্তর ২৪ পরগনার পাঁচটি সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের চারটিতে পৃথকীকরণের সুবিধা নেই। আর যেখানে হয়, সেখানে ব্যাগ নেই।’’ ব্যাগের অভাবে ভুগতে হচ্ছে ডেঙ্গি, ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া-সহ রক্তের বিভিন্ন অসুখে আক্রান্তদের। হেমাটোলজিস্টরা জানাচ্ছেন, সংগৃহীত এক ইউনিট রক্ত থেকে তিন ধরনের উপাদান— প্লেটলেট, কনসেনট্রেটেড আরবিসি (গাঢ় লোহিত রক্তকণিকা) এবং প্লাজ়মা পৃথক করা যায়। তিনটি উপাদানের জন্য লাগে ট্রিপল ব্যাগ। আর যে রক্ত থেকে দু’টি উপাদান পৃথক করা হয়, তার জন্য লাগে ডবল ব্যাগ।

স্বাস্থ্য দফতরের ব্লাড সেফটি বিভাগের যুগ্ম অধিকর্তা গোপালচন্দ্র বি‌শ্বাস জানাচ্ছেন, আগে জাতীয় এডস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা (ন্যাকো) রক্ত সংগ্রহের ব্যাগ পাঠাত। কিন্তু এখন রাজ্য সরকার ভিন্ রাজ্যের সংস্থার কাছ থেকে সরাসরি ব্যাগ কিনছে। তিনি বলেন, ‘‘হায়দরাবাদ, দিল্লি, কেরল-সহ কয়েকটি রাজ্যের ব্যাগ প্রস্তুতকারী সংস্থা সরবরাহ ঠিক মতো না-করায় সঙ্কট দেখা দিয়েছে। করোনায় ওই সব সংস্থায় কর্মী-সঙ্কট হয়েছিল। তাই সমস্যা হচ্ছে। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে মিটে যাবে।’’ রক্তদান আন্দোলনে যুক্তেরা যদিও জানাচ্ছেন, টাকা থাকলেই ও চাইলেই ওই ব্যাগ কেনা যায় না। কারণ, ব্যাগ তৈরির পরে সেগুলির গুণগত মানের পরীক্ষা হয়। তাতে উতরে গেলে তবেই তা সরবরাহ করা হয়। তাই ব্যাগের এই অভাব স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বজ্ঞানহীনতারই পরিণাম বলে অভিযোগ অপূর্ববাবুর। আর দীপঙ্করবাবুর কথায়, ‘‘সরকারের ঘরে ব্যাগ নেই। কিন্তু বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে তো সেই ব্যাগ মিলছে। সেখানে কি গুণগত মান বজায় থাকছে?’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

Blood Bag Shortage
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy