Advertisement
০২ এপ্রিল ২০২৩

বিষে খুন! এনআরএসে দেহ ১৬ কুকুরছানার

ট্রলিতে রোগী নিয়ে যাওয়ার পথে দৃশ্যটা দেখে থমকে দাঁড়ালেন এক ব্যক্তি। মুখ দিয়ে অস্ফুটে বেরিয়ে এল, ‘‘ইশ! এমনও কেউ করতে পারে?’’

এনআরএস-এ পাওয়া মৃত কুকুর ছানারা।

এনআরএস-এ পাওয়া মৃত কুকুর ছানারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:১০
Share: Save:

সামনের পা-গুলো কুঁকড়ে বুকের কাছে উঠে এসেছে। শক্ত করে দাঁতে দাঁত চাপা। কারও আবার মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়েছে। চোখে-মুখে রক্ত জমাট বাঁধা! এমনই একের পর এক কুকুরছানার মৃতদেহ কালো প্লাস্টিক থেকে বার করে পরপর মাটিতে শুইয়ে রাখছেন এক মহিলা। সঙ্গে রাগে চিৎকার করছেন, ‘‘দেখুন, কী ভাবে মেরেছে! দেখুন!’’

Advertisement

ট্রলিতে রোগী নিয়ে যাওয়ার পথে দৃশ্যটা দেখে থমকে দাঁড়ালেন এক ব্যক্তি। মুখ দিয়ে অস্ফুটে বেরিয়ে এল, ‘‘ইশ! এমনও কেউ করতে পারে?’’

শিয়ালদহের নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভিতর থেকে রবিবার বিকেলে এ ভাবেই প্লাস্টিক-বন্দি অবস্থায় উদ্ধার হল ১৬টি কুকুরছানার দেহ! সঙ্গে রক্তাক্ত অবস্থায় মিলল একটি জীবিত কুকুরও। তার চোখ খুবলে হাত-পা বেঁধে ওই মৃত কুকুরছানাদের সঙ্গেই প্লাস্টিকে ভরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল হাসপাতালের আস্তাকুঁড়ে। এ দিন বিকেলে পুতুল রায় নামে এক মহিলার চোখে বিষয়টি পড়তেই শোরগোল পড়ে যায়। খবর যায় পশুপ্রেমীদের কাছে। তাঁদের মধ্যে এক জন এন্টালির বাসিন্দা অনিতা দাস বসাক ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্লাস্টিক ছিঁড়ে একের পর এক কুকুরছানার দেহ বার করে হাসপাতাল চত্বরে সার দিয়ে শুইয়ে রাখতে শুরু করেন। পরে জীবিত কুকুরটিকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে চিকিৎসাও শুরু করেন অনিতা। সেটির অবস্থা আশঙ্কাজনক।

উদ্ধারকারীদের অভিযোগ, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রী-রোগ বিভাগের চিকিৎসা-বর্জ্য ফেলার প্লাস্টিকের মধ্যে থেকে এ দিন কুকুরছানাগুলির দেহ মিলেছে। ছানাগুলি নেহাতই শিশু, বয়স বড়জোর মাস দেড়েক। সন্দেহ, সেগুলিকে বিষ খাওয়ানো হয়েছিল। তার পরেও মৃত্যু নিশ্চিত করতে কয়েকটির মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় হাসপাতাল কর্মীদের একাংশের যোগ রয়েছে কি না, সে প্রশ্ন উঠছে। অনিতার কথায়, ‘‘হাসপাতালেরই কুকুরছানা এগুলো। কারণ, হাসপাতালেরই প্লাস্টিকে ভরা ছিল দেহগুলো। এতগুলো কুকুরছানা কি বাইরে থেকে মেরে এনে হাসপাতালে ফেলে যাওয়া সম্ভব?’’ হাসপাতালের সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কী ভাবে এমন ঘটল, বুঝতে পারছি না। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। হাসপাতাল চত্বরে অনেক কুকুর ঘুরে বেড়ায়। এগুলো তাদের কারও বাচ্চা কি না, জানা যায়নি।’’ হাসপাতালের প্লাস্টিকে ছানাগুলোর দেহ ভরা ছিল কেন? সৌরভবাবুর জবাব, ‘‘সবটাই খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি ওই বিভাগে কুকুরের উপদ্রব নিয়ে কোনও অভিযোগ ছিল না।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: মুখ ঢাকা শালে, উদ্ধার তরুণীর ঝুলন্ত মৃতদেহ

পশুপ্রেমীদের দাবি, হাসপাতালের ওই চত্বরে সিসি ক্যামেরা দেখে কে বা কারা প্লাস্টিকগুলি ফেলে গিয়েছিল, তা খুঁজে বার করুক পুলিশ। সন্ধ্যায় পুলিশের নির্দেশে হাসপাতালে গিয়ে মৃত কুকুরছানাগুলিকে তুলে নিয়ে যায় কলকাতা পুরসভার গাড়ি। ময়নাতদন্তের আগে পুরসভার গাড়িতে দেহ তুলে দিতে না চেয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন পশুপ্রেমীরা। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের দাবি মেনে কুকুরছানাগুলির দেহ এন্টালি থানায় নিয়ে যায়। অভিযোগও দায়ের হয়। এন্টালি থানার এক কর্তা বলেন, ‘‘কড়া হাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘দোষীদের ছাড়া হবে না। আমরা তদন্ত করব।’’ বিধায়ক দেবশ্রী রায় বলেন, ‘‘অস্থির লাগছে। পুলিশকে বলব, কড়া ব্যবস্থা নিতে।’’ দেহগুলি ময়নাতদন্তের জন্য বেলগাছিয়া পশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

পুতুল জানান, এ দিন দুপুরে হাসপাতালের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে তিনি একটি প্লাস্টিকের ভিতর থেকে গোঙানির আওয়াজ পান। কাছে গিয়ে দেখেন, একটি কুকুর রক্তাক্ত অবস্থায় ধুঁকছে। তাঁর থেকে খবর পেয়ে অনিতা এসে প্লাস্টিক ছিঁড়লে দেখা যায়, ভাত, কলার খোসা, বিস্কুটের প্যাকেটের সঙ্গেই ভরা কুকুরছানাগুলির দেহ। আহত কুকুরটিকে নিজের বাড়িতে পাঠান অনিতা। সেখানেই রাত পর্যন্ত চিকিৎসা চলেছে আহত কুকুরটির। স্যালাইন লাগানো অবস্থায় কুকুরটিকে কোলে নিয়ে পশুপ্রেমী প্রান্তিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ হয়তো ওই বাচ্চাগুলোর মা। চোখটাই খুবলে নিয়েছে! এতগুলো বাচ্চার খুনের কড়া শাস্তি চাই।’’

এর মধ্যেই রাতে কুকুরছানা পিটিয়ে মারার কিছু ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে অভিযোগ করেন, এনআরএসের নার্সিং হস্টেলের একাংশ এমন কাজ করেছে। যদিও এ সম্পর্কে রাত পর্যন্ত নার্সিং হস্টেলের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.