Advertisement
E-Paper

নথিতে ‘গরিব মানুষ’ বরো চেয়ারম্যানও!

তিনি কাউন্সিলর। শুধু কাউন্সিলরই নন, বরো চেয়ারম্যানও। অথচ এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের (এডিবি) নথিতে কলকাতা পুরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের সেই কাউন্সিলর তথা ১ নম্বর বরো অফিসের চেয়ারম্যান তরুণ সাহা এক জন ‘দরিদ্র’ মানুষ! এডিবি-র নথিতে কী ভাবে এই ‘ছবি-বিভ্রাট’ হল, আপাতত তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে পুর মহলের একাংশে।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০৫
এডিবি-র সেই বই।

এডিবি-র সেই বই।

তিনি কাউন্সিলর। শুধু কাউন্সিলরই নন, বরো চেয়ারম্যানও। অথচ এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের (এডিবি) নথিতে কলকাতা পুরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের সেই কাউন্সিলর তথা ১ নম্বর বরো অফিসের চেয়ারম্যান তরুণ সাহা এক জন ‘দরিদ্র’ মানুষ! এডিবি-র নথিতে কী ভাবে এই ‘ছবি-বিভ্রাট’ হল, আপাতত তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে পুর মহলের একাংশে।

কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, বেশ কয়েক দিন আগে এডিবি-র আর্থিক সহায়তায় জমা জল ও বন্যার আগাম পূর্বাভাস পেতে বিশেষ প্রযুক্তি (‘ফ্লাড ফোরকাস্টিং অ্যান্ড আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম’, সংক্ষেপে এফএফইডব্লিউএস) চালু করেছিল পুরসভা। ওই প্রযুক্তিতে পুরসভার পাম্পিং স্টেশন, গুরুত্বপূর্ণ মোড়, স্কুল, খাল-সহ শহরের মোট ৪৫৫টি জায়গায় ‘আল্ট্রাসনিক সেন্সর’ বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৩৯টি জায়গায় সেন্সর বসানো হয়ে গিয়েছে। দেশের মধ্যে কলকাতাতেই সর্বপ্রথম এই প্রযুক্তি চালু করা হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। সেই ‘সেন্সর’-এর মাধ্যমে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যাবে কোথায় কত জল জমে আছে, পাম্পিং স্টেশনগুলি ঠিকমতো কাজ করছে কি না, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা-সহ পরিবেশের নানা তথ্য।

সেই সময়ে এডিবি-র তৈরি করা ‘টুওয়ার্ড রেসিলিয়েন্ট কলকাতা’ নামে একটি বই প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই বইয়েরই প্রথম পৃষ্ঠায় ‘কলকাতার মুখ’ বলে কয়েক জন শহরবাসীর ছবি ছাপানো হয়েছে। ক্যাপশনের জায়গায় লেখা হয়েছে, বন্যার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তেমন মানুষদের, বিশেষ করে দরিদ্রদের কথা ভেবেই এই এফএফইডব্লিউএস প্রযুক্তি চালু করা হয়েছে। মোট চার জনের মুখের ছবির মধ্যে দ্বিতীয় ছবিটিই হল তরুণবাবুর! আর গোল বেধেছে ওই ছবিটি নিয়েই। তরুণবাবু এ বিষয়ে বলেন, ‘‘এডিবি-র প্রথম প্রকল্প আমার এলাকা থেকেই শুরু হয়েছিল। সবচেয়ে আগে আমিই প্রকল্প শেষ করেছি। ওরা (এডিবি) এসে বলেছিল, আমার ছবি ব্যবহার করবে। কিন্তু সেটা যে এ ভাবে করা হয়েছে, তা জানতাম না!’’ এ বিষয়ে এডিবি-র ‘ইন্ডিয়া রেসিডেন্ট মিশন’-এর ‘সিনিয়র এক্সটারনাল রিলেশনস অফিসার’ রাজেশ কুমার দেওলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এটি একটি সাধারণ ক্যাপশন। কাউকে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা হয়নি এখানে।’’

বইটির প্রথম পৃষ্ঠায় দরিদ্র শহরবাসী হিসেবে রয়েছে কাউন্সিলর ও বরো চেয়ারম্যান তরুণ সাহার (চিহ্নিত) ছবি। নিজস্ব চিত্র

যদিও পুরকর্তাদের একাংশ সে যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘ডকুমেন্টেশন’। সেখানে পুর এলাকারই কাউন্সিলর তথা বরো চেয়ারম্যানকে ‘দরিদ্র’ হিসেবে দেখানোটা মোটেই ‘বাঞ্ছনীয়’ নয়। এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘কোনও ছবির ক্যাপশনই ছবিটি সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা দেয়। ক্যাপশন ব্যবহার করা হয় সে কারণেই। এখানে যে ছবি ও ক্যাপশন ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে এটাই মনে হচ্ছে যে বরো চেয়ারম্যানও এক জন দরিদ্র মানুষ!’’

আরও পড়ুন: এক দফতরে এক ডিজি, নিয়ম নতুন মেয়রের

যদিও পুর মহলের একাংশে এ প্রশ্নও উঠেছে যে এডিবি বইটি প্রকাশ করলেও পুরসভা কেন সেই তথ্য সংশোধন করে দেয়নি। কারণ, ছবি বেছে ছাপানোর সময়ে যদি কোনও ভুল হয়েও থাকে এডিবি-র, এ ক্ষেত্রে তো পুর কর্তৃপক্ষেরই সেটি সংশোধন করা উচিত ছিল। যদিও এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘পুরোটাই এডিবি-র তৈরি করা। বইটি তৈরি হয়েই আমাদের কাছে এসেছে। বইটির প্রকাশক কে, সেই তথ্য খুঁজলে দেখা যাবে সেখানেও স্পষ্ট লেখা রয়েছে এডিবি-ই পুরো বইটি প্রকাশ করেছে। বইয়ের সমস্ত ছবিও তাদেরই।’’

Borough Chairman TMC Asian Development Bank ADB
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy