Advertisement
E-Paper

কলকাতার কড়চা

সত্যজিতের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই তাঁর তর্ক হত, সেই দিনগুলো আজও রেলিশ করেন মৃণাল সেন। শ্যাম বেনেগালের সত্যজিৎকে নিয়ে তথ্যচিত্রে তিনি ঋত্বিক আর মৃণাল সম্পর্কে বলেছিলেন ‘দে ওয়্যার মেকিং ফিল্মস ভেরি ডিফারেন্ট ফ্রম মাইন, ভেরি ডিফারেন্ট, বাট ভেরি পাওয়ারফুল, আই থিংক...’, কিন্তু কখনও তর্কে পিছপা হতেন না।

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৫ ০০:৪৭

মৃণাল সেনের সৃজনকথা ধরে রাখল দূরদর্শন

সত্যজিতের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই তাঁর তর্ক হত, সেই দিনগুলো আজও রেলিশ করেন মৃণাল সেন। শ্যাম বেনেগালের সত্যজিৎকে নিয়ে তথ্যচিত্রে তিনি ঋত্বিক আর মৃণাল সম্পর্কে বলেছিলেন ‘দে ওয়্যার মেকিং ফিল্মস ভেরি ডিফারেন্ট ফ্রম মাইন, ভেরি ডিফারেন্ট, বাট ভেরি পাওয়ারফুল, আই থিংক...’, কিন্তু কখনও তর্কে পিছপা হতেন না। অর্ধশতক আগে ১৯৬৫-তে যখন ‘আকাশ কুসুম’ মুক্তি পেল, সে ছবির পরিচালক মৃণাল সেন আর কাহিনিকার আশীষ বর্মনের সঙ্গে ত্রিমুখী বিতর্কে জড়িয়ে গেলেন সত্যজিৎ। ‘দ্য স্টেটসম্যান’ দৈনিকে দু’মাস ধরে চলল চিঠির যুদ্ধ। যেদিন সম্পাদক জানালেন ‘আর নয়’, ‘‘সেদিনই সত্যজিৎ রায় আমাকে বললেন, ‘আমার ব্যাগ-এ আরও অনেক শব্দ ছিল।’ বলে হাসলেন। আর আমি বললাম, ‘আমারও ছিল, ট্রাকভর্তি, যদিও আপনি আমার চাইতে ঢের বেশি বুদ্ধিমান।’... বিশিষ্ট বিজ্ঞানীর কথাটা আবার মনে পড়ল: ‘ট্রুথ অ্যাটেনস আ কোয়ালিটি ওনলি হোয়েন ইট বিকামস কন্ট্রোভার্সিয়াল।’’— স্মৃতিতে ভর করেন মৃণাল সেন। (তৃতীয় ভুবন। আনন্দ)। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের পক্ষে দূরদর্শন নির্মিত চার পর্বের ‘সেলিব্রেটিং মৃণাল সেন’-এ তাঁর সঙ্গে এক দীর্ঘ কথোপকথনে শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন: ‘আকাশ কুসুম’ থেকেই শুরু, তার পর

‘ভুবন সোম’ বা ‘ইন্টারভিউ’, আপনি ভেঙে ফেলছেন ছবির রিয়ালিস্টিক গড়ন, সে সময়ে কলকাতা-সহ সারা দুনিয়ার রাজনৈতিক চেহারাটা আপনার ফিল্মের ইডিয়ম হয়ে উঠছে।... মানলেন মৃণালবাবু, বললেন, ‘দিস ইজ দ্য বিগিনিং অব আ নিউ ফেজ...’। গত পয়লা এপ্রিল প্রসার ভারতী-র সিইও জহর সরকার সে-ছবির ডিভিডি মৃণাল সেন ও গীতা সেনের হাতে তুলে দিয়ে এলেন (বাঁ দিকের ছবি)। ছবিটিকে পরিচালক অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বভারতীয় চেহারা দিয়েছেন, মৃণালবাবুর সঙ্গে কাজের সূত্রে যেমন সৌমিত্র-মাধবী-অঞ্জন-মমতাশঙ্কর বলেছেন, তেমনই বলেছেন নাসিরুদ্দিন-ওম পুরী-পঙ্কজ কপূর-শাবানা আজমি এমন অনেকেই। অন্য দিকে মৃণালবাবুর দীর্ঘদিনের বন্ধু নৃপেন গঙ্গোপাধ্যায়ও তাঁকে নিয়ে একটি ছবি করেছেন ফিল্মস ডিভিশন থেকে, ভাষ্যে চিন্ময় গুহ। ১৪ মে ৯২ পূর্ণ করে ৯৩-তে পা দেবেন মৃণাল সেন, জন্ম ১৯২৩-এ ফরিদপুরে। এ মহানগরে যে দু’-একটি মহীরুহ আজও অবশিষ্ট, তিনি একজন তার মধ্যে। অথচ এই কলকাতা আশ্চর্য রকম নীরব তাঁর সম্পর্কে... বাঙালি যে বড় আত্মবিস্মৃত জাতি!

গ্রন্থ চর্চা

আলোচ্য বিষয় বই আর তার আনুষঙ্গিক সব কিছুই। পাতায় পাতায় ছবি, দুর্লভ বই থেকে হুবহু প্রতিলিপি দিয়ে এত অসামান্য মুদ্রণমানে বাংলা পত্রিকা যে নির্মাণ করা সম্ভব, তা দেখিয়ে দিয়েছে ‘১৭৭৮ গ্রন্থচর্চা’ (সম্পা: অশোক উপাধ্যায়)। ডিসেম্বর ২০১৪ সংখ্যাটিও নিতান্ত উপাদেয়। পুরনো নানা লেখা, নিয়মিত রচনা ‘বিশ্বভারতীর বই’ ছাড়া কম্পিউটারে বাংলা লেখার সফটওয়্যার ‘অভ্র’-র স্রষ্টা মেহদী হাসান খান, শিল্পী সমীর বিশ্বাস, ‘বুক আর্ট’ নিয়ে পথিকৃৎ আলোচনা, দেবাশিস বসুর চোখে ইন্দ্রনাথ মজুমদার, ‘ইংলন্ডে বঙ্গমহিলা’র কৃষ্ণভাবিনী দাস, উপেন্দ্রনাথের বসুমতী-র বৃত্তান্ত, রামদাস সেনের বিখ্যাত গ্রন্থাগারের সঙ্গে আছে শিল্পী নারায়ণ দেবনাথের অনবদ্য টারজান অলংকরণ আর বাংলা ইন্দ্রজাল কমিকসের কথা, এমনকী তার অনেকগুলি রঙিন প্রচ্ছদের ছবিও।

প্রয়াণ

মাত্র ঊনসত্তর বছরে চলে গেলেন বিশিষ্ট আয়ুর্বেদ গবেষক প্রতীপকুমার দেবনাথ। রেখে গেলেন ১৫৮টি আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্র ও ১৮টি বই। ১৯৪৬-এ বীরভূমে এক কবিরাজ পরিবারে জন্ম। ১৯৬৬-তে আয়ুর্বেদে স্নাতক, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও ডক্টরেট। পরে আয়ুর্বেদ শিক্ষকতা জে বি রায় কলেজে (১৯৭৭-২০০৬)। ছিলেন আয়ুস মন্ত্রক, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় সহ নানা কমিটির বিশেষজ্ঞ সদস্য। বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন আয়ুর্বেদের প্রসার ও গবেষণাপত্র উপস্থাপনের জন্য। পশ্চিমবঙ্গ আয়ুর্বেদ পরিষদের সহ-সভাপতি ছিলেন। প্রাচীন আয়ুর্বেদকে বিজ্ঞানের আতসকাচে যাচাই করে সমগ্র বিশ্বে পরিচয় ঘটানো তাঁর এক অনন্য সাফল্য।

বিজ্ঞানভাবুক

হুগলির এক ভদ্রলোক ভাল টেলিস্কোপ বানাচ্ছেন শুনে রবীন্দ্রনাথ তিনশো টাকা দিয়ে একটি তিন ইঞ্চির টেলিস্কোপ কিনে দেন জগদানন্দ রায়কে। তারপর প্রতিদিন সন্ধেয় আশ্রমে আকাশ চেনার মজা লেগেই থাকতো। পিতৃস্মৃতি গ্রন্থে এমনই স্মৃতিচারণ রথীন্দ্রনাথের। আশ্রমেও বিজ্ঞানশিক্ষা এবং প্রকৃতি পর্যবেক্ষণে জোর দেওয়া হত। প্রকৃতি প্রেমিক কবি ও তাঁর বিজ্ঞান ভাবনা নিয়ে বহু দুর্লভ নথি ও চিত্র সহযোগে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব সায়েন্স মিউজিয়ামস বিড়লা শিল্প ও কারিগরি সংগ্রহালয়ে আয়োজন করেছে প্রদর্শনী ‘রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞান ভাবনা’। ১৫ মে পর্যন্ত, ১০-৫.৩০। অন্য দিকে ১৯২৯-এ স্থাপিত কবি-সাহিত্যিকদের মিলনকেন্দ্র ‘রবিবাসর’ ছিয়াশি বছরে পা রাখল। আমৃত্যু রবীন্দ্রনাথ ছিলেন অধিনায়ক। গতকাল শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাসভবনে রবিবাসরের অনুষ্ঠানে প্রকাশ পেল ৪৭তম বার্ষিকী বিশেষ সংকলনগ্রন্থ।

টুকরো কথা

চেয়েছিলেন শিক্ষকতার সঙ্গে দলের কাজ করবেন। কিন্তু নাছোড় দলনেতা সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। ১৯৭২ সালে মন্ত্রিসভা গঠনের আগের দিন সন্ধ্যায় বেলতলার বাড়িতে তরুণ কংগ্রেস বিধায়ককে ডেকে পাঠিয়ে সিদ্ধার্থবাবু প্রায় আদেশের সুরে বলেন, ‘‘প্রদীপ, তোমাকে মন্ত্রিসভায় আসতে হবে। আমি দলের বেশ কয়েকজন তরুণ কর্মীকে নিয়ে আসতে চাই।’’ তাঁর বয়স তখন ২৬। তার পর রাজনীতির নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে পথ চলা। জীবনের নানা ঘটনা লিখেছিলেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। তাঁর কথায়, ‘ঘটনাগুলো বিচিত্র রকমের পরিবেশের মধ্য দিয়ে প্রত্যক্ষ করেছি’। প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি, বর্তমানে রাজ্যসভা সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্যের সেই সব লেখার সংকলন টুকরো টুকরো কথা (প্রাগ্ভাষ) পয়লা বৈশাখ কলকাতা প্রেস ক্লাবে প্রকাশিত হল।

দুই বাংলা

দুই বাংলার বন্ধন দৃঢ় করতে পাঁচটি সংগঠন হাত মিলিয়েছে: ভারতের কলাবতী মুদ্রা, বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও বস্ত্রশিল্পী সঙ্ঘ, গড়িয়াহাট ইন্দিরা হকার্স ইউনিয়ন, বাংলাদেশের তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা সোসাইটি, সেলফ এমপ্লয়েড ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন। দুই দেশের তৃণমূল স্তরের বাজার যাতে গ্রামীণ মানুষের কাছে খুলে যায়, পরম্পরার পণ্য সারা বিশ্বে উপস্থিত হতে পারে তার জন্য এরা সক্রিয়। এদের প্রথম অনুষ্ঠান গড়িয়াহাটের মোড়ে, ক্যারম ক্লাবে (১৭ মে পর্যন্ত) দুই দেশের কারু ও বস্ত্রশিল্প মেলা, অন্তত কুড়ি জন শিল্পী যোগ দেবেন। ১৮ মে
অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস-এ বাংলাদেশের কারু ও বস্ত্রশিল্পীদের নিয়ে ভারতের বাজার সম্বন্ধে একটি আলোচনা সভায় থাকবেন শিল্পী আর জনপ্রতিনিধিরা।

বসুমতী

বটতলায় ছোট্ট বইয়ের দোকান থেকে ১৮৮০ সালে সূচনা ‘বসুমতী সাহিত্য মন্দির’-এর। পরে নিজস্ব বাড়ি বউবাজারে আসার পর সঙ্গী হল ‘দৈনিক বসুমতী’। তাকে ঘিরে কম্পোজ থেকে ছাপা— যাবতীয় কর্মকাণ্ড। সেই বাড়িতেই সংসার প্রতিষ্ঠাতা উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের পুত্র সতীশচন্দ্রের। ফলে ছাপার কালির গন্ধ রোটারি মেশিনের বাড়ি কাঁপানো আওয়াজের মাঝেই সংসারের সব টুকিটাকি। সাহিত্যসংস্কৃতির দিকপালদের আনাগোনা তো ছিলই, মাঝে মাঝেই বাড়ি উত্তাল হত দেশবিদেশের কোনও বিশেষ ঘটনার জেরে। বসুমতী সাহিত্য মন্দির-কেন্দ্রিক সেই দিনগুলি নিয়ে সতীশচন্দ্রের চতুর্থ কন্যা আরতি ঘটক (পরে বসুমতী-সম্পাদক প্রাণতোষ ঘটকের স্ত্রী) লিখেছেন বহুযুগের ওপার (লিটল পাবলিশার)।

অমৃৎ

‘অমৃৎ’- মাটি নয় যা। কিংবা হয়তো মাটিতে ছিল কোনও কালে। পরে উৎখনিত হয়েছে। মাটিতে নির্মিত বস্তু তাপ প্রয়োগে সেরামিকে রূপান্তরিত হল। এক তাল মাটি কখনও স্তম্ভ, কখনও অশ্ব আবার কখনও বা তৈজসের রূপ পেল। সরকারি আর্ট কলেজ ও কলাভবনের প্রাক্তনী পার্থ দাশগুপ্তের তৃতীয় একক প্রদর্শনী ‘অমৃৎ’ মায়া আর্ট স্পেস গ্যালারিতে ২৩-৩১ মে। প্রকাশিত হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লেসলির শিল্প ইতিহাসের অধ্যাপক সুনন্দকুমার সান্যাল এবং শিল্পীর লেখা বই অমৃৎ। প্রদর্শনী উদ্বোধনে ক্যালিফোর্নিয়ার পথচিত্রশিল্পী ব্রুস লি স্টাম।

ঘোড়ামুখো পালা

১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয় গিরিশ কারনাডের নাটক ‘হয়বদন’। এ নাটকে নরনারীর প্রেমসম্পর্কের অছিলায় বেআব্রু হয়েছিল আসলে আধুনিক মানুষের অস্তিত্ব-সংকট। নাটকের উপকাহিনির না-ঘোড়া না-মানুষ আশ্চর্জন্তুটিও পূর্ণতা খোঁজে, মানুষ-চরিত্র দেবদত্ত-পদ্মিনী-কপিলের মতোই। ‘নক্ষত্র’ নাট্যগোষ্ঠীর কর্ণধার শ্যামল ঘোষের অনুরোধে দু’দিনের মধ্যে হয়বদন বাংলায় রূপান্তর করেছিলেন শঙ্খ ঘোষ, নাম দিয়েছিলেন ‘ঘোড়ামুখো পালা’। নক্ষত্রের প্রযোজনাটি শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি, কিন্তু অসম্পূর্ণ সেই কাজ হাতে নিয়েছে ‘কথাকৃতি’। সঞ্জীব রায়ের নির্দেশনায় এই নাটকের অবয়ব জুড়ে দর্শনের অতলে জ্বলজ্বল করে সাম্প্রতিক ভারতই। ১৬ মে সন্ধে সাড়ে ছ’টায় মিনার্ভা থিয়েটারে ‘ঘোড়ামুখো পালা’র অভিনয়, সহায়তায় কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক।

সংবর্ধনা

উত্তমকুমারকে ‘চিড়িয়াখানা’য় কম পারিশ্রমিকে অভিনয়ে রাজি করিয়েছিলেন রমেশ সেন। তিনি তখন সত্যজিৎ রায়ের ফিল্ম ইউনিটে, তাঁর পরিচালনার কাজে নিত্য সহকারী। ছবিটি পরিচালনার কথা ছিল না সত্যজিতের, তিনিও রাজি হন রমেশবাবুর আবদারে। সত্যজিতের সঙ্গে সেই ‘পথের পাঁচালী’ থেকে ‘আগন্তুক’ অবধি জড়িয়ে ছিলেন রমেশ সেন (সঙ্গের ছবিতে ‘জন অরণ্য’-এর শুটিংয়ে)। সত্যজিতের পর তাঁর ইউনিটে সন্দীপ রায়েরও সহকারী হিসেবে কাজ করছেন এখনও, বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে। রমেশ সেনের এই অক্লান্ত কর্মস্পৃহাকে সম্মান জানাতে তাঁকে সংবর্ধিত করছে এখন সত্যজিৎ পত্রিকা, নন্দন-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে, ১৬ মে বিকেল ৫টায়। ‘কাপুরুষ ও মহাপুরুষ’ ছবিটি ও ফেলুদার প্রথম প্রকাশের পঞ্চাশ পূর্তি উপলক্ষে আলোচনা আর কথোপকথনও থাকবে সে সন্ধ্যায়, সর্বোপরি থাকবে ‘রে কুইজ’— ‘সত্যজিতের নানান সৃষ্টিকে স্মরণ করতেই এই প্রয়াস’, জানালেন পত্রিকাটির সম্পাদক সোমনাথ রায়।

উত্তরণের গান

শঙ্খ ঘোষ একটি ছোট্ট লেখনে জানিয়েছিলেন, ৮ ভাদ্র ১৩২০ থেকে ২ আশ্বিন ১৩২১— এই এগারো মাসে রবীন্দ্রনাথের কুড়িটি গান তৈরি হয়ে উঠেছিল। এর মধ্যে আছে এমন আপাত-উদ্দীপক গান, যা, তাঁর কথায়, অন্তর্ঘাতজর্জর এক ব্যক্তিগত উদ্ধার, আবার আপাত-ব্যক্তিগত রূপক, বেঁচে ওঠার এক প্রাণাধিক আশ্রয়। শঙ্খ ঘোষের ভাষ্য-সহ এই কুড়িটি গান শোনা যাবে কাকলি রায়ের পরিচালনায় ‘গান্ধার’-এর অনুষ্ঠান ‘উত্তরণের গান’-এ, ১৫ মে সন্ধ্যা ৭টায় কলাকুঞ্জ হলে। কণিকা-নীলিমার যত্নলালিত চল্লিশ বছরের বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষায়তন ‘গান্ধার’-এর ছাত্রী শবরী মজুমদারের সিডি প্রকাশ করবেন সোমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।

শতবর্ষে

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে একই দিনে জন্ম, ৯ মে তিনি শততম বর্ষে পা দিলেন। আলোকচিত্রশিল্পী রামানন্দ সেনগুপ্তর জন্ম ঢাকায়, মা ও মামা ক্ষিতিমোহন সেনের উদ্যোগে ১৯২৬-’২৭ সালে শান্তিনিকেতনের ছাত্র। ম্যাট্রিকের পর মাদ্রাজে মোশন পিকচার্স কম্বাইন-এ (পরে ‘জেমিনি’) টেকনিশিয়ান ধীরেন দাশগুপ্তের কাছে যান, সেখানে পরিচয় বিমল রায়ের সঙ্গেও। তাঁদের কথায় কলকাতায় ১৯৩৮-এ ফিল্ম কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া-য় শিক্ষানবিশি শুরু। মুভি-র কাজ শেখা পিটার ব্র্যা়ডলির কাছে। স্টুডিয়ো বন্ধ হয়ে গেলে সহকারী চিত্রগ্রাহক। স্বাধীন কাজ শুরু অর্ধেন্দু মুখোপাধ্যায়ের-র ‘পূর্বরাগ’ ছবিতে (মুক্তি ’৪৭-এ)। ফরাসি চলচ্চিত্রকার রেনোয়ার সান্নিধ্যে ও ‘দ্য রিভার’ চলচ্চিত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা আজও স্মরণীয় তাঁর জীবনে। ৬৭টির মতো ছবি এবং কিছু তথ্যচিত্রেও কাজ করেছেন। মৃণাল সেনের ‘রাতভোর’, ঋত্বিক ঘটকের ‘নাগরিক’ থেকে শুরু করে ‘ডাকহরকরা’, ‘নিশীথে’, ‘কান্না’, ‘হেডমাস্টার’, ‘শিল্পী’, ‘তিন ভুবনের পারে’, ‘এপার ওপার’। ছবি মুক্তির হিসেবে ১৯৪৭-’৮৮ পর্যন্ত কাজ করেছেন। তাঁর সহকারী হিসেবে কাজ করে যাঁরা বিশিষ্ট হয়ে ওঠেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন প্রয়াত দীনেন গুপ্ত, কৃষ্ণ চক্রবর্তী, পিন্টু দাশগুপ্ত। আছেন সৌমেন্দু রায়। ইস্টার্ন ইন্ডিয়া সিনেম্যাটোগ্রাফার্স অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সভাপতি ছিলেন রামানন্দবাবু। সেই সংগঠনটিই বাংলা চলচ্চিত্রের এই কৃতী মানুষটিকে গত শনিবার চলচ্চিত্র শতবর্ষ ভবনে সংবর্ধিত করল। তাঁর জন্যে রইল সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা।

উদ্যোগী

পুণের ফিল্ম ইনস্টিটিউ থেকে বেরিয়ে অঞ্জন দত্তের ‘বো ব্যারাক ফর এভার’-এ যাত্রা শুরু সিনেম্যাটোগ্রাফার ইন্দ্রনীল মুখোপাধ্যায়ের। আর পিছনে তাকাতে হয়নি তাঁকে। অঞ্জনের বং কানেকশন, ব্যোমকেশ সিরিজ, ম্যাডলি বাঙালি’র পর সুমন মুখোপাধ্যায়ের চতুরঙ্গ— একটির পর একটি ছবিতে ইন্দ্রনীলের ক্যামেরায় ইমেজ নির্মাণ প্রশংসা কুড়িয়েছে স্বদেশে-বিদেশে সর্বত্র। ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরীর ছবি ‘ফড়িং’, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির নবতম অবতার ছোট্ট স্টিল ক্যামেরা ফাইভ ডি-তে নির্মিত, ইন্দ্রনীলকে পূর্বাঞ্চলে সেরা ক্যামেরাম্যান হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এনে দিয়েছে। এ হেন ইন্দ্রনীল নতুন প্রজন্মকে ডিজিটাল সিনেম্যাটোগ্রাফির প্রশিক্ষণ দিতে উদ্যোগী, জুন পাশে অনুষ্ঠিতব্য তাঁর ওয়ার্কশপ-এর নাম ‘মোশান মোমেন্ট উইথ ইন্দ্রনীল’। বললেন, ‘ডিজিটাল সিনেমা-র টেকনোলজি ছবি তৈরিকে ক্রমশ তার এলিটিজিম থেকে মুক্ত করে সাধারণ মানুষের ব্যবহার্য করে তুলছে, যারা আগে বাজেটের ভয়ে সিনেমা বানানোর কথা ভাবতেই পারত না, তারা ছবি বানাতে এগিয়ে আসছে। কিন্তু সবাই তো আর তিন বছর সময় ফিল্মস্কুলকে দিতে পারে না।’ এ ধরনের ক্যামেরা শিক্ষার্থীদের জন্যই তিনি শুরু করেছেন দু’দিনের ওয়ার্কশপ। তাঁর এই উদ্যোগকে সফল করতে ইন্দ্রনীলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চেরিপিক্স স্টুডিয়ো আর অভিনেত্রী ঊষসী চক্রবর্তী। ‘মুম্বই-তে এ ধরনের ওয়ার্কশপ প্রায়ই দেখা যায়, কিন্তু কলকাতায় এই প্রথম। তাই এই নতুন ধরনের উদ্যোগের পাশে না দাঁড়িয়ে পারলাম না’, জানালেন ঊষসী।

brief and short stories of kolkata karcha kolkatar karcha ramananda sengupta cinematographar indranil mukhopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy