শেষযাত্রায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছবি: সৌরভ পাল।
এই দু’কামরার ফ্ল্যাট তিনি কখনও ছাড়তে চাননি। এই ফ্ল্যাটে ছড়িয়ে থাকা বই, বিছানা, গানের ক্যাসেটের মধ্যেই ছিল তাঁর যাপন। সেই পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি থেকে শেষ বারের মতো বেরিয়ে গেলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। প্রবীণ সিপিএম নেতার মরদেহ রক্তপতাকায় মুড়ে তোলা হল শববাহী শকটে। তার পর সেটি রওনা দিল পিস ওয়ার্ল্ডের উদ্দেশে। উপস্থিত জনতা খালি গলায় ধরল ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল’। বৃষ্টিভেজা দুপুরে ছড়িয়ে গেল, ‘শেষ যুদ্ধ শুরু আজ কমরেড, এসো মোরা মিলি এক সাথ..!’’
সেই শকটের পিছনে হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছিলেন বুদ্ধ-জায়া মীরা ভট্টাচার্য। শেষ নমস্কার জানালেন দু’টি হাত জোড় করে। কাউকে কাউকে দেখা গেল চোখের জলে ভেঙে পড়তে। স্লোগান উঠল। শববাহী শকটের কাচের আড়ালে দেখা গেল প্রয়াত নেতার মুখ। সেই মোটা ফ্রেমের চশমা। থুতনিতে কিছু দিনের না কামানো দাড়ি। বস্তুত, গত কয়েক দিন ধরেই জ্বরে ভুগছিলেন বুদ্ধদেব। সেই কারণেই দাড়ি কামিয়ে দেওয়া যায়নি তাঁর। পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাট থেকে বেরোনোর আগে তাঁর মরদেহের চক্ষু থেকে কর্নিয়া সংগ্রহের প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়েছে পরিকল্পনা মতো।
বৃহস্পতিবার পিস ওয়ার্ল্ডেই রাখা থাকবে বুদ্ধদেবের নশ্বর দেহ। শুক্রবার সকাল ১১টায় সেখান থেকে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে রাজ্য বিধানসভায়। বিধানসভায় মরদেহ থাকবে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত । সেখান থেকে বেলা ১২টা নাগাদ দেহ নিয়ে আসা হবে সিপিএমের রাজ্য দফতর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে। সেখানেই মরদেহ শায়িত থাকবে বিকাল ৩টে পর্যন্ত। সেখান থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া হবে দীনেশ মজুমদার ভবনে। সিপিএমের ছাত্র ও যুব সংগঠনের রাজ্য দফতরে। বুদ্ধদেব ছিলেন প্রাদেশিক যুব সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। সভাপতি ছিলেন তাঁর বন্ধু এবং কমরেড দীনেশ মজুমদার। তাঁর নামেই ওই ভবনটি নামাঙ্কিত। পৌনে ৪টে পর্যন্ত বুদ্ধদেবের দেহ শায়িত থাকবে সেখানে। সেখান থেকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পরে মিছিল করে দেহ নিয়ে যাওয়া হবে শিয়ালদহের এনআরএস হাসপাতালে। সেখানেই বুদ্ধদেবের দেহ দান করা হবে ভবিষ্যতের চিকিৎসার গবেষণার কাজে। প্রসঙ্গত, বুদ্ধদেবের পূর্বসূরি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর দেহও দান করা হয়েছিল। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল এসএসকেএম হাসপাতালে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy