Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

অগ্নিবিধির পরোয়া নেই, ফের দেখাল বড়বাজার

এ দিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পোড়া স্তূপে অক্ষত কিছু মেলে কি না, খুঁজে দেখছেন ওই বাড়িতে থাকা একটি কুরিয়র সংস্থার অফিসের কর্মীরা।

খোঁজ: আগুন থেকে কিছু বাঁচল কি? পোড়া জিনিসের স্তূপে তারই সন্ধান। শনিবার, আর্মেনিয়ান স্ট্রিটে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

খোঁজ: আগুন থেকে কিছু বাঁচল কি? পোড়া জিনিসের স্তূপে তারই সন্ধান। শনিবার, আর্মেনিয়ান স্ট্রিটে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৪২
Share: Save:

বড়বাজার আছে বড়বাজারেই!

মাস চারেক আগে বাগড়ি মার্কেটে বিধ্বংসী আগুন লাগার পরেও বড়বাজার যে তা থেকে বিন্দুমাত্র শিক্ষা নেয়নি, ফের তার প্রমাণ মিলল। শুক্রবার গভীর রাতে নন্দরাম মার্কেটের কাছেই আর্মেনিয়ান স্ট্রিটের একটি চারতলা বাড়িতে আগুন লাগে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই বাড়ির ভিতরে বেশ কয়েক জন মোটবাহক ঘুমোন। শীতের রাতে ওই বাড়ির নীচে আগুন পোহাচ্ছিলেন তাঁরা। সেই আগুনই দাহ্যে ভর্তি গুদামে ছড়়িয়ে পড়ে। দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, ‘‘ওই বাড়ির নীচের অংশে অনেকটা ফাঁকা জায়গা থাকায় বড় অঘটন ঘটেনি। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ ছিল না। আমরা বড়বাজারের সব ক’টি বাড়িতে ফায়ার অডিট করব।’’

গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে বাগড়ি মার্কেটে আগুন লাগে। ছাই হয়ে যায় মার্কেটের একাধিক অংশ। পুলিশ জানিয়েছিল, বাগড়ি মার্কেটের সামনে ফুটপাতের ডালায় বিস্ফোরণ ঘটেই ওই আগুন লাগে। সেই বাগড়ি মার্কেট থেকে ১০ নম্বর আর্মেনিয়ান স্ট্রিট মেরেকেটে একশো মিটার দূরে। শুক্রবার রাত পৌনে একটা নাগাদ ওই চারতলা বাড়ির নীচের গুদাম থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে দুই ও তিনতলায়। পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাতের ঘটনার পরে ওই বাড়ির বেশ কয়েক জন মোটবাহকের খোঁজ মিলছে না। পুলিশ তাঁদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার ভোর চারটে নাগাদ দমকলের ১১টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থল ছাড়ার পরে স্থানীয় কয়েক জন মোটবাহক পুলিশকে জানান, আগের রাতে আগুন পোহাতে পিসবোর্ডের কার্টন জ্বালানো হয়েছিল।

এ দিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পোড়া স্তূপে অক্ষত কিছু মেলে কি না, খুঁজে দেখছেন ওই বাড়িতে থাকা একটি কুরিয়র সংস্থার অফিসের কর্মীরা। তাঁদেরই এক জন জানান, ভিন্ রাজ্যের কয়েকটি সংস্থা জামাকাপড় পাঠিয়েছিল। আগামী সপ্তাহের মধ্যে সেগুলি সরবরাহ করার কথা ছিল। অধিকাংশই পুড়ে গিয়েছে।

দমকল জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে পৌঁছতে বেশ বেগ পেতে হয় তাদের। দমকলের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আর্মেনিয়ান স্ট্রিটে বেশ কিছু গাড়ি রাখা ছিল। তার উপরে রাস্তা সঙ্কীর্ণ। তাই ব্রেবোর্ন রোডে দমকলের ইঞ্জিন দাঁড় করিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করতে হয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বড়বাজারের মতো ঘিঞ্জি এলাকায় রাতে পার্কিং নিয়ন্ত্রণ করতে পুরসভাকে চিঠি দেওয়া হবে।’’

দমকল জানিয়েছে, যে বাড়িটিতে আগুন লেগেছিল, সেটি ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করা হলেও দমকলের কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। দমকলের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ওই বাড়িতে অগ্নিনির্বাপণের ন্যূনতম ব্যবস্থাও নেই। নিজস্ব জলাধারও নেই। ওই বাড়িতে লোকজন বসবাসও করেন। সব কিছু খতিয়ে দেখে আমরা বাড়ির মালিক রতনলাল নাহাটার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করছি।’’ ওই বাড়ির তিনতলায় মায়ের সঙ্গে থাকেন দীপক নাহাটা। তিনি মালিক রতনলালের ভাইপো। দীপক বলেন, ‘‘শুক্রবার রাত পৌনে একটা নাগাদ গলগল করে কালো ধোঁয়া বেরোতে দেখে আমিই প্রথম পুলিশকে খবর দিই। মিনিট কুড়ি পরে দমকল আসে।’’ তবে আর্মেনিয়ান স্ট্রিটের ওই বাড়িতে তাঁরা ভাড়া থাকেন বলে জানিয়েছেন দীপক। এ দিন রতনলালের মোবাইলে একাধিক বার ফোন করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। মেসেজেরও জবাব মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Burrabazar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE