Advertisement
E-Paper

পদ্মপুকুরে বাসের ধাক্কায় মৃত্যু যুবকের

পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের চতুর্থ দিনে এই দুর্ঘটনার পরে একটি প্রশ্ন উঠে এসেছে। বাস থেকে নামার সময়ে যুবকের মোবাইল পড়ে গেল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৩
তখনও পৌঁছয়নি ছেলের মৃত্যুর খবর। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

তখনও পৌঁছয়নি ছেলের মৃত্যুর খবর। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

দুপুরে ফোন করে ছেলে বলেছিল, ‘মা বাড়ি ফিরছি’। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেও ছেলে আর বাড়ি ফেরেনি। বরং থানা থেকে ফোন করে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনায় পড়েছে ছেলে। সেই ফোন পাওয়ার পর থেকে বাড়ির সদর দরজার সামনে এসে ছেলের পথ চেয়ে বসেই রয়েছেন বৃদ্ধা মা!

এ দিকে, ছেলের দেহ তখন শোয়ানো রয়েছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পুলিশ জানায়, সুদীপ্ত চক্রবর্তী (২৩) নামের ওই যুবক বাসের ধাক্কায় মারা গিয়েছেন। তিনি এন্টালি থানার আনন্দপালিত রোডের বাসিন্দা। ঘটনার পরেই অবশ্য হাওড়া-পিকনিক গার্ডেন রুটের ওই মিনিবাস নিয়ে চম্পট দিয়েছেন চালক।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ দিন বিকেল ৩টে ১০ মিনিট নাগাদ পদ্মপুকুর মোড়ের কাছে মিনিবাস থেকে নামছিলেন ওই যুবক। হাতে ছিল জুতোর প্যাকেট। নামার সময়ে তাঁর মোবাইলটি কোনও ভাবে পড়ে গিয়ে বাসের নীচে ঢুকে যায়। তৎক্ষণাৎ সেটি কুড়নোর জন্য বাসের নীচে ঢোকার চেষ্টা করেন সুদীপ্ত। কিন্তু তাঁর জন্য বাসটি দাঁড়ায়নি। বাস ছেড়ে দিলে পিছনের চাকার ধাক্কায় ছিটকে পড়েন সুদীপ্ত। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।

পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের চতুর্থ দিনে এই দুর্ঘটনার পরে একটি প্রশ্ন উঠে এসেছে। বাস থেকে নামার সময়ে যুবকের মোবাইল পড়ে গেল। তিনি তা তুলতে গেলেন। অথচ কী করে কন্ডাক্টর তা খেয়াল করলেন না, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েই। যাত্রীদের আধিকাংশেরই অভিযোগ, প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কোনও মতে যাত্রী নামিয়েই তাড়াহুড়ো করে বাস ছেড়ে দেন চালক। উঠতে বা নামতে গিয়ে কেউ পড়ে যাচ্ছেন কি না, সে দিকে খেয়াল থাকে না কারও। পুলিশেরই একাংশ বলছে, রেষারেষি করতে গিয়ে বাসচালক-কন্ডাক্টরেরা যাত্রীদের সুরক্ষার দিকে নজর রাখেন না। তবে বেপরোয়া ভাবে বাস চালালেও বহু ক্ষেত্রে চালকদের উপযুক্ত শাস্তি হয় না। তাদের মত, ট্র্যাফিক আইনে জরিমানা ও শাস্তির পরিমাণ আরও কঠোর হওয়া উচিত।

আনন্দপালিত এলাকায় ভাড়া থাকেন একটি ছোট ছাপাখানার মালিক শ্যামল চক্রবর্তী। তাঁর ছোট ছেলে সুদীপ্ত। এ দিন ওই বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা গেল, গ্রিলের দরজা ধরে সুদীপ্তর অপেক্ষায় তাঁর মা মালাদেবী। মাঝেমধ্যেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসছেন শ্যামলবাবু। সুদীপ্তর কুকুর রনিও দাঁড়িয়ে গেটের সামনে।

সুদীপ্তর কথা জিজ্ঞাসা করতেই মালাদেবী জানতে চাইলেন, ‘‘কী হয়েছে ছেলের?’’ স্ত্রীর গলা শুনে শ্যামলবাবুও বাইরে এসে বললেন, ‘‘ছেলেটার বড় কিছু হয়নি তো!’’ মালাদেবী জানান, ধর্মতলায় বাবার ছাপাখানা দেখাশোনা করতেন সুদীপ্ত। মাঝেমধ্যে‌ সরঞ্জাম কিনে সোদপুরে মামার দোকানেও সরবরাহ করতেন। এ দিন সকালে বাবা ও নিজের জুতো কিনতে বড়বাজারে গিয়েছিলেন ওই যুবক। দুপুর দুটো নাগাদ মাকে ফোন করে জানান, জুতো কেনা হয়ে গিয়েছে। মালাদেবী বলেন, ‘‘বলল বাড়ি এসে ভাত খাবে। সাবধানে ফিরতে বললাম। চারটে নাগাদ পুলিশের ফোন পেয়ে বড় ছেলে হাসপাতালে গিয়েছে।’’

ছেলের কথা বলতে বলতে বারবার হাঁপিয়ে যাচ্ছিলেন মালাদেবী। পাশে থাকা সাদা স্পিৎজ কুকুরটিকে দেখিয়ে বললেন, ‘‘ও কলা খায়। সুদীপ্ত নিয়ে আসবে বলেছিল। কী জানি, কখন বাড়ি আসবে!’’

Bus Run Over Death Bus Accident
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy