প্রতীকী ছবি।
বেড়াল যেন ঝুলির ভিতরে লুকিয়ে।
স্ত্রী ও মেয়ের বিরুদ্ধে অত্যাচার ও মারধরের অভিযোগ করছিলেন এক ব্যবসায়ী। তাঁর অভিযোগ, স্ত্রী ও মেয়েরা তাঁকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। রাস্তায় তাঁর দিন কাটছে। কিন্তু ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ জানতে পারল অভিযোগকারী ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অতীতে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন তাঁর স্ত্রী। এমনকি বিয়ের পর থেকে দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে ওই ব্যবসায়ী তাঁকে মারধর করতেন বলেই পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন তাঁর স্ত্রী। এখন দুই মেয়ে বাবার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন।
দেগঙ্গা থানার অধীনে কার্তিকপুরে দাম্পত্য কলহের এমন এক ভিন্ন ছবি দেখে বিভ্রান্ত পুলিশও। ফলে তদন্তকারীরাও দু’ তরফের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছেন। দেগঙ্গা থানার পুলিশ জানিয়েছে, নিপুণ শর্মা নামে মধ্য চল্লিশের ওই ব্যবসায়ী লালবাজার, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন-সহ একাধিক জায়গায় নিজের অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর অভিযোগ, বাড়িতে গেলে স্ত্রী ও মেয়েরা বঁটি, কাটারি নিয়ে তেড়ে আসছে। প্রাথমিক ভাবে তাঁর অভিযোগ শুনলেও পুলিশ নিপুণবাবুর স্ত্রী রিঙ্কুদেবীর সঙ্গে কথা বলার পরে মনে করছে ওই ব্যবসায়ী হয়ত সব কথা পুলিশের কাছে জানাননি। পুলিশ কথা বলছে, দম্পতির মেয়েদের সঙ্গেও। দুই নাবালিকা কন্যা বাবার বিরুদ্ধে মাকে মারধরের অভিযোগ করেছেন বলেই দাবি পুলিশের।
উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযোগের সত্যতা, পাল্টা অভিযোগ খতিয়ে দেখেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
শর্মা দম্পতির মধ্যে সন্দেহের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই গোলমাল চলে আসছে বলে জানিয়েছেন তাঁদের প্রতিবেশীরা। তাঁরা সালিশিসভা ডেকেও দু’পক্ষের গোলমাল বন্ধ করতে না পেরে হাল ছেড়েছেন। পুলিশ তাঁদের সঙ্গেও কথা বলেছে। ফলত তদন্তকারীরা মনে করছেন ব্যবসায়ী যা অভিযোগ করছেন তেমন কিছু রাতারাতি ঘটতে পারে না।
নিপুণ বলেন, ‘‘এ কেমন মেয়ে যে নিজের বাবাকে এ ভাবে মারধর করে!’’ পুলিশের কাছে তাঁর আর্তি, ‘‘আমি স্ত্রী ও মেয়ের হাতে নির্যাতিত। আমাকে বাঁচান, বাড়ি ফিরতে দিন।’’
মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে দুই মেয়ে জানান, তাঁরা দু’জনেই মামার বাড়িতে জন্মেছেন। বড় মেয়ের অভিযোগ,‘‘বাবা মারধর করে মাকে বের করে দিয়েছিলেন। তাই আমার জন্ম মামার বাড়িতে। ছেলেবেলা থেকে বাবাকে দেখেছি মাকে মারধর করতে।’’ ছোট মেয়ের কথায়, ‘‘দিদির মতোই আমারও জন্ম মামার বাড়িতে। বড় হয়ে জেনেছি, আমিও যখন পেটে তখন মাকে বেধড়ক মারধর করতেন বাবা। আমাকে বাঁচাতেই মা আবার মামার বাড়ি চলে যান। বাবাকে বুঝিয়ে লাভ হয়নি।’’ তাই বড় মেয়ের প্রশ্ন, ‘‘ছোটবেলা থেকে খালি মা-কে মার খেতে, কাঁদতে দেখেছি। কতদিন সহ্য করব। এখন বড় হয়েছি। প্রতিবাদ করব না?’’
নিপুণবাবুর স্ত্রী রিঙ্কুদেবীর অভিযোগ, স্বামী সব সময় সন্দেহ করেন। এক সময় মেরে মেয়েদের পা ভেঙে দিয়েছিলেন তাঁর স্বামী।
তিনি বলেন,‘‘মেয়েরা বড় হয়েছে। এক জন উচ্চ মাধ্যমিক দেবে, অন্য জন মাধ্যমিক। মেয়েদের টেস্ট পরীক্ষা সবে শেষ হয়েছে। দিন কয়েক আগে মেয়েদের নামে মিথ্যা অপবাদ দেন আমার স্বামী। আমায় মারধর করে তরোয়াল দিয়ে কেটে ফেলতে আসেন। পেট্রোল জ্বালিয়ে সবাইকে মেরে ফেলার হুমকিও দেন। এ বার তাই মার খাওয়া নয়, মা-কে রক্ষা করতে স্বামীকে বাধা দেয় মেয়েরা। দা-বাঁটি নিয়ে তাড়া করে।’’
তারপর থেকেই ‘ভয়ে’ ঘর ছাড়া ওই ব্যক্তি। তাঁর দাবি, ‘‘দিন কয়েক আগে রাতে বাড়ি ফিরলে মেয়ে-বউ মিলে আমাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। ঘরে ঢুকতে গেলে হুমকি দিয়ে বলে, মেরে ফেলবে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমাকে মেরে মুখ ফাটিয়ে দিয়েছে। এখন মেয়েরাও দা, বঁটি নিয়ে তেড়ে আসছে।’’
রিঙ্কু জানান, মেয়েদের সামনেই পরীক্ষা। তা সত্ত্বেও তারা বাধ্য হচ্ছে পড়াশোনার ক্ষতি করে থানা-পুলিশে ছুটোছুটি করতে।
এ হেন অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগে কে কতটা সত্যি বলছেন তা সময় নিয়ে বুঝতে চাইছে পুলিশও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy