Advertisement
E-Paper

প্রকাশ্যে গুলিতে খুন ব্যবসায়ী

খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিন্ডিকেট নিয়ে দু’টি কথা বলেছেন। এক, তাঁর দলের কারও সিন্ডিকেট যুক্ত থাকা তিনি মেনে নেবেন না। দুই, সিন্ডিকেট নিয়ে জুলুমবাজি তিনি বরদাস্ত করবেন না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৬ ০৫:৪৪
এখানেই খুন করা হয় নুরকে (ইনসেটে)। শনিবার। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।

এখানেই খুন করা হয় নুরকে (ইনসেটে)। শনিবার। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।

খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিন্ডিকেট নিয়ে দু’টি কথা বলেছেন। এক, তাঁর দলের কারও সিন্ডিকেট যুক্ত থাকা তিনি মেনে নেবেন না। দুই, সিন্ডিকেট নিয়ে জুলুমবাজি তিনি বরদাস্ত করবেন না।

কিন্তু মমতা দ্বিতীয় বার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে খাস কলকাতায় গুলি চালিয়ে খুনের প্রথম ঘটনাতেই সিন্ডিকেট নিয়ে সেই জুলুমবাজিরই ছায়া এবং নিহত নুর মহম্মদ (৫৫) তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। ঘটনাটি ঘটেছে মল্লিকবাজার মোড়ের কাছে। ওই তল্লাটে ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের একচেটিয়া ব্যবসা নুরের ছিল বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর।

ঘটনায় পুলিশ কেলো ও সফিক নামে দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে, তারা নুরের ব্যবসারই অংশীদার।

নুর যে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ, তা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর, ৬১ নম্বর ওয়ার্ডের মনজর ইকবাল ও বালিগঞ্জের তৃণমূল বি‌ধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ওই দু’জনের সঙ্গে নুরের ঘনিষ্ঠতার কথা তাঁর বাড়ির লোকজনও জানিয়েছেন।

পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাত সওয়া ১টা নাগাদ বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয় নুরকে। তদন্তে জানা গিয়েছে, মোটরসাইকেলে আসা দুষ্কৃতীরা অন্তত ৩ রাউন্ড গুলি চালিয়েছিল। তার দু’টি লেগেিছল নুরের গায়ে।

এই শহরে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের রমরমা বন্ধ করার উপরে লালবাজারের শীর্ষকর্তারা দু’বছর ধরে জোর দিলেও তাতে তেমন সাফল্য যে মিলছে না, সে কথা পুলিশের একাংশ স্বীকার করে নিচ্ছে। কারণ, দেশি স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র আনতে এখন আর মুঙ্গেরে যাওয়ার কষ্ট করতে হয় না। কলকাতার উপকণ্ঠেই মুঙ্গের থেকে ‘ওস্তাদেরা’ এসে ওই সব ‘মেশিন’ বানিয়ে দিয়ে যায় বা মুঙ্গের থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে এখানকার কারিগরেরা সেগুলি তৈরি করে।

নুর মহম্মদকে খুন করার ঘটনায় দু’জন আততায়ী অন্তত দু’টি বন্দুক থেকে গুলি চালায় বলে প্রাথমিক তদন্তে জেনেছে পুলিশ। এমনিতে খুনের তদন্ত করেন লালবাজারের হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দারা। কিন্তু লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘এই খুনে ইট-বালি-সিমেন্ট সরবরাহের সিন্ডিকেট সংক্রান্ত গোলমালের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাই, গুন্ডাদমন শাখাই তদন্ত করছে।’’ পুলিশ জানায়, নুরের বাড়ি মল্লিকবাজারেরই নর্থ রেঞ্জ রো়ডে। ওই তল্লাট ও তার আশপাশে প্রায় এক যুগ ধরে ইমারতি দ্রব্য সরবরাহ ও পার্কিংয়ের ব্যবসা করতেন তিনি। নুরের বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় এক সময়ে অভিযোগ ছিল।

স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার রাত ১টা নাগাদ নুরের মোবাইলে বারবার ফোন আসছিল। তিনি তখন বাড়িতে। কিন্তু নুর ফোন ধরেননি। এর পরে কেলো নামে তাঁর ওই অংশীদার নুরকে গিয়ে জানান, ইট নামাতে লরি এসেছে, তাই তাঁকে বেরোতে হবে। ওই ব্যবসায়ীর ভাই মহম্মদ নিজামুদ্দিন বলেন, ‘‘রাতে প্রচণ্ড গরম থাকায় বাইরে রাস্তায় চেয়ার পেতে বসেছিলাম। পাড়ার আরও ক’জন ছিল। দাদা বেরোনোর সময়ে আমাকে বাড়িতে ঢুকতে বলে। কিছুক্ষণ পরেই পরপর গুলির শব্দ।’’

প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, কেলো ও সফিকের সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ইট নামানো দেখছিলেন নুর। হঠাৎই পার্ক সার্কাসের দিক থেকে দু’টি মোটরবাইকে চার যুবক হাজির হয়। প্রথমে পিছনের বাইকে বসা এক যুবক শূন্যে গুলি চালায়। তার পরেই সামনে বসা মোটরসাইকেল থেকে ছোড়া গুলি নুরের ঘা়ড়ে ও পেটে লাগে। লুটিয়ে পড়েন নুর। আততায়ীরা দ্রুত মল্লিকবাজার মোড়ের দিকে পালিয়ে যায়।

তদন্তকারীদের বক্তব্য, অত রাতে নুর যে বাড়ি থেকে বেরোবেন, সেই খবর খুনিদের কাছে ছিল। অর্থাৎ, নুরের ঘনিষ্ঠ কেউই তাদের ওই খবর দিয়েছিল। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে কেলোর কথায় বহু অসঙ্গতি পাওয়া গিয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দু’টি কার্তুজের খোল পেয়েছে। ঘটনাস্থলের উল্টো দিকে, মল্লিকবাজার মোড়ের কাছের একটি সিসিটিভি-র ফুটেজও সংগ্রহ করেছে পুলিশ।

ডিসি (ইএসডি) দেবস্মিতা দাস বলেন, ‘‘এখনও অপরাধীদের সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে কিছু পাওয়া যায়নি। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত করা হচ্ছে।’’

৬১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মনজর ইকবাল বলেন, ‘‘ওর কোনও শত্রু ছিল না বলেই জানতাম। তবে ব্যবসায়িক শত্রুতা তৈরি হয়ে থাকলে সেটা আমি জানি না।’’ ওই তল্লাট বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। বালিগঞ্জের বিধায়ক তথা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই এলাকায় আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তেমন কেউ নেই। খুব দুর্দিনেও ওই এলাকায় আমরাই জিতেছি। তাই নুর মহম্মদের খুন আমাদের কাছেও ধোঁয়াশার মতো।’’ তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশ নিজেদের মতো তদন্ত করছে। পাশাপাশি, আমরাও দলীয় ভাবে তদন্ত করে দেখছি।’’

mallick bazar murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy