Advertisement
E-Paper

ঘরে ঢুকে চা খেয়ে ব্যবসায়ী খুন নিউ টাউনে

রবিবার সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিট নাগাদ এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে নিউ টাউনের পাথরঘাটায়। পুলিশ জানায়, নিহতের নাম চঞ্চল মণ্ডল (৪৬)। জমির দালালি-সহ ব্যবসা নিয়ে কাজিয়ার জেরেই এই খুন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:২২
নিহত প্রোমোটার চঞ্চল মণ্ডল।—নিজস্ব চিত্র।

নিহত প্রোমোটার চঞ্চল মণ্ডল।—নিজস্ব চিত্র।

বাড়িতে তখন সান্ধ্য চায়ের তোড়জোড় চলছে। পরিচিত তিন যুবক হঠাৎ ঢুকেই খোঁজ করল পরিবারের বড় ছেলের। বাড়িতে নেই শুনে তারা বলল, কথা আছে। তাঁকে যেন ফোন করে ডেকে আনা হয়। যুবকদের বসতে বলা হল। দেওয়া হল চা। ফোন পেয়ে বড় ছেলে ফিরে আসতেই তিন যুবক তাঁর সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু করে দিল। বচসার মধ্যেই আগ্নেয়াস্ত্র বার করে গুলি চালাল তারা। লুটিয়ে পড়লেন বড় ছেলে। গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালাল তিন যুবক। তাদের সঙ্গ নিল বাইরে অপেক্ষায় থাকা দু’জন।

রবিবার সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিট নাগাদ এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে নিউ টাউনের পাথরঘাটায়। পুলিশ জানায়, নিহতের নাম চঞ্চল মণ্ডল (৪৬)। জমির দালালি-সহ ব্যবসা নিয়ে কাজিয়ার জেরেই এই খুন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। রাতেই বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দারা ঘটনাস্থলে যান। দুষ্কৃতীদের এক জনের নাম রফিকুল শেখ। মুর্শিদাবাদের ওই বাসিন্দার সঙ্গে শনিবারেও চঞ্চলের কথা হয়েছিল। এ দিন চঞ্চলের মেয়ের সঙ্গে দরজায় দেখা হয় রফিকুলের।

স্থানীয় সূত্রের খবর, পাঁচ দুষ্কৃতী দু’টি মোটরবাইকে পাথরঘাটার মালপাড়ায় ওই বাড়িতে আসে। দু’জন বাইক নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। তিন জন বাড়ির ভিতরে ঢোকে। সেই সময় চঞ্চলবাবু পাথরঘাটা বাজারে গিয়েছিলেন। বাড়িতে ছিলেন তাঁর বাবা, স্ত্রী-মেয়ে ও ভাই। দুষ্কৃতীরা চঞ্চলের খোঁজ করলে ভাই দেবকুমার ফোন করে দাদাকে ডেকে আনেন। চঞ্চল জমি মাপজোকের কাজ করতেন, জমির দালালিও করতেন। দেবকুমারও সেই কাজে যুক্ত। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যবসার কাজে তারা এসেছে বলে জানায় দুষ্কৃতীরা। চঞ্চলের স্ত্রী তাদের চা খেতে দেন। দুষ্কৃতীরা সেই চা পানও করে। প্রায় ১৫ মিনিট পরে বাড়িতে পৌঁছন চঞ্চল। পুলিশ জানিয়েছে, চঞ্চল বাড়ি পৌঁছনোর পরে ব্যবসার কাজকর্ম নিয়ে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির শুরু হয় তাঁর। তারই মধ্যে আচমকা আগ্নেয়াস্ত্র বার করে দুষ্কৃতীরা।

দুষ্কৃতীদের আগ্নেয়াস্ত্র বার করতে দেখে দাদাকে বাঁচাতে তাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন দেবকুমার। ধস্তাধস্তিতে দেবকুমারের জামা ছিঁড়ে যায়। তাঁকে হটাতে আগ্নেয়াস্ত্রের বাট দিয়ে তাঁর কপালে আঘাত করে দুষ্কৃতীরা। তার পরে চঞ্চলকে পরপর তিনটি গুলি করে চম্পট দেয় তিন দুষ্কৃতী। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অন্ধকারের মধ্যে গুলি ছুড়তে ছুড়তে দুষ্কৃতীরা দু’টি বাইকে এলাকা ছাড়ে। পরে একটি বাইক সাপুরজি-পালুনজি এবং অন্য বাইকটি কালুর মোড় ধরে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় চঞ্চলকে চিনার পার্কের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রের খবর, নিহতের মুখে, পেটে ও বুকে গুলি লেগেছিল।

ভরসন্ধ্যায় নিউ টাউনে এই হামলা ও খুন কেন, তার যথাযথ কারণ এখনও জানাতে পারেনি পুলিশ। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি একটি জমি কেনাবেচায় সাহায্য করেছিলেন চঞ্চল। সম্ভবত সেই কেনাবেচার ঘটনায় দেনাপাওনা নিয়ে গন্ডগোলের জেরেই এই খুন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আগন্তুকেরা চঞ্চলদের পরিচিত। চা-সহযোগে আপ্যায়ন থেকেও সেটা অনুমান করা যাচ্ছে। নিহতের খুড়তুতো ভাই দীপক মণ্ডলও বলেন, ‘‘যারা এসেছিল, তারা পরিচিত। সাপুরজি-পালুনজি এলাকায় ভাড়া থাকে বলে শুনছি। চঞ্চলের ভাই বাঁচাতে গেলে ওকেও গুলি করার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। তবে সেটা ওর গায়ে লাগেনি।’’

Murder Kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy