Advertisement
২০ মার্চ ২০২৩
Howrah Bridge

হাওড়া সেতুর ওজন কমানোর ভাবনায় কর্তৃপক্ষ

পুলিশ সূত্রের খবর, কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, হাওড়া সেতুতে তিন দিন এ নিয়ে কাজ হবে।

প্রলেপ: পিচের এই পুরু আস্তরণের কারণেই ক্রমশ ভার বেড়েছে হাওড়া সেতুর। সোমবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

প্রলেপ: পিচের এই পুরু আস্তরণের কারণেই ক্রমশ ভার বেড়েছে হাওড়া সেতুর। সোমবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

শিবাজী দে সরকার ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:১১
Share: Save:

সত্তরোর্ধ্ব ‘বৃদ্ধের’ শরীরে কি ‘মেদ’ জমেছে?

Advertisement

সম্প্রতি শহরের কয়েকটি সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে পিচের আস্তরণের ভার কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে হাওড়া সেতুর স্বাস্থ্য নিয়েও উঠেছে এই প্রশ্ন। যান চলাচল মসৃণ করতে বছরের পর বছর ধরে পিচের আস্তরণ পড়েছে ওই সেতুর উপরে। তাই সেতুর ওজন বৃদ্ধি অস্বাভাবিক নয়। সূত্রের দাবি, কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ এমনই ভাবছেন। তাই পিচের আস্তরণ তুলে দিয়ে রাস্তা মসৃণ রাখার অন্য কোনও উপায় ব্যবহার করা যায় কি না, তার পথ খুঁজছেন তাঁরা।

পুলিশ সূত্রের খবর, কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, হাওড়া সেতুতে তিন দিন এ নিয়ে কাজ হবে। সেতুর একটি অংশ ঘিরে রেখে ওই কাজ করার কথা। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহেই ওই কাজ করতে চান তাঁরা। মূলত গভীর রাতে ওই কাজ হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে ওই কাজের জেরে হাওড়া সেতুতে যানজট হবে না বলেই আশা কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তাদের।

কলকাতা বন্দরের কর্তারা জানাচ্ছেন, পিচের আস্তরণ তুলে ফেলা হবে কি না বা তার বদলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে সব নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তা হলে ওই তিন দিন কী কাজ হবে?

Advertisement

কলকাতা বন্দরের একটি সূত্রের দাবি, এমন একটি পদ্ধতির কথা ভাবা হচ্ছে যাতে পুরনো পিচের আস্তরণ তুলে ফেলা হবে কিন্তু নতুন পিচের আস্তরণ দিতে হবে না। পিচের বদলে একটি রাসায়নিকের আস্তরণ দেওয়া হবে। তার ফলে এক দিকে যেমন সেতুর ওজন কমবে, তেমনই অন্য দিকে রাস্তাও টেকসই হবে। ওই রাসায়নিক প্রস্তুতকারী সংস্থা তাদের কাজের নমুনা দেখাতে আসছে। সেই কাজের নমুনা দেখে পরবর্তী কালে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে বন্দর সূত্রের খবর।

ইতিহাসের তথ্য বলছে, এক সময়ে কলকাতায় গঙ্গার পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ের যোগসূত্র ছিল পন্টুন ব্রিজ। কিন্তু রাতে বড় স্টিমার যাওয়ার জন্য তা খুলে দিতে হত। কলকাতার সঙ্গে হাওড়া স্টেশন ও হাওড়া শহরের যোগাযোগ বাড়াতে ১৯২১ সালে একটি কমিটি তৈরি হয়। স্যর রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের নামানুসারে কমিটির নাম হয় ‘মুখার্জি কমিটি’। ১৯৪৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় হাওড়া সেতু। শুধু কলকাতা নয়, দেশের স্থাপত্য এবং সংস্কৃতির সঙ্গেও জুড়ে গিয়েছে এই সেতু। দেশে-বিদেশে কলকাতাকে বোঝাতে এই ‘বৃদ্ধ’ সেতুর ছবিই অনেক সময়ে ভরসা!

প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, পুরনো সেতুগুলির ক্ষেত্রে পিচের আস্তরণের জেরে ওজন বৃদ্ধির সমস্যার কথা বারবার উঠে এসেছে। মাঝেরহাট সেতু ভাঙার পরে ন্যাশনাল টেস্ট হাউসের রিপোর্টেও বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। সম্প্রতি উল্টোডাঙায় দুর্গাপুর সেতুর ওজন কমাতেও পিচ তুলে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘রাস্তা মসৃণ করতে বিভিন্ন সেতুর উপরে বারবার পিচের আস্তরণ দেওয়া হয়। সেই প্রলেপ অনেকটা মানব দেহের মেদের মতোই হয়ে ওঠে। তরতাজা ও কর্মক্ষম থাকতে মানুষের মতো সেতুরও মেদ ঝরানো প্রয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.