চলছে কর্মশালা। নিজস্ব চিত্র
পুজোর দিনগুলিতে আলপনা দেওয়া নিয়ে যে আনন্দ, যে উৎসাহ চোখে পড়ত সাবেক বাড়ির পুজোয়, তা এই প্রজন্মের কাছে অনেকটাই অচেনা। বাঙালি সংস্কৃতির সেই পুরনো আবেগ ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছে কলকাতার এক সংস্থা। তাদেরই ভাবনায় শহরে মহালয়ার ঠিক আগের দু’দিন ধরে চলছে আলপনার কর্মশালা। যেখানে অংশগ্রহণকারীদের হাতেকলমে আলপনা দেওয়া শেখানো ছাড়াও জানানো হয়েছে আলপনা-চর্চার সংক্রান্ত নানা কথা।
আলপনা দেওয়া শুধুই মনের খেয়ালে মূর্ত হওয়া কোনও কাজ নয়, তার জন্য চাই নিজস্বতাও। উদ্যোক্তাদের তরফে সৌরভ দে বলছিলেন, বাঙালি ঘরের মেয়ে-বৌয়েরা যে ভাবে যে পুজোয় আলপনা দেওয়ায় স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশ নেন, তা আদতে বাংলার সংস্কৃতিকেই ঋদ্ধ করেছে। এ সব নিয়েও আলোচনা হয়েছে দু’দিনের এই কর্মশালায়। বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী, শিল্প-সমালোচক সুশোভন আধিকারী এবং আলপনা-বিশেষজ্ঞ রবি বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে এই আলোচনার পাশাপাশি চলেছে হাতেকলমে প্রশিক্ষণও।
শারদোৎসবকে মাথায় রেখে কর্মশালার প্রথম দিনের বিষয় ছিল ‘শারদ আলপনা’। সেখানে প্রতিটি আলপনার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করা হয়। কোন ধরনের কারুকাজ বিশেষ ভাবে ব্যবহার করা হয় এই ধরনের আলপনা দেওয়ার ক্ষেত্রে, সে সম্পর্কে বিশদে জানানো হয় অংশগ্রহণকারীদের। একই সঙ্গে চণ্ডীমণ্ডপের আলপনা, লক্ষ্মীপুজোর আলপনা, পটের আলপনার ফারাক ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে চলে আলোচনা। সৌরভ বলেন, ‘‘কী ভাবে এক একটি মোটিফ দিয়ে একটি আলপনা পূর্ণাঙ্গ রূপ প্রাপ্ত হয়, সেটাই এখানে করে দেখালেন বিশেষজ্ঞেরা। সুশোভনবাবু বহুদিন ধরে এ নিয়ে কাজ করছেন। অন্য দিকে, কলাভবনের ছাত্র রবিবাবুও অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক।’’
দশ জনকে নিয়ে চলে দু’দিনের এই কর্মশালা। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন চল্লিশোর্ধ্ব মহিলা। অনেকেই বাড়ির পুজোয় আলপনা দেওয়ার কাজ করে থাকেন নিপুণ হাতে। কিন্তু আলপনার ইতিহাস সম্পর্কে বিশেষ জানার সুযোগ হয়নি তাঁদেরও। কেউ কেউ কোনও দিন নিজে হাতে আলপনা দেননি। তাঁরাও অংশ নিয়েছেন এই কর্মশালায়। এমনই এক অংশগ্রহণকারী বলেন, ‘‘আলপনা তো শুধু আঁকা নয়, এক বিশেষ শিল্পরীতি। তার নির্দিষ্ট নকশা রয়েছে। বাঙালি সংস্কৃতির এই অংশটাই জানতে এসেছি এখানে।’’
প্রশিক্ষক সুশোভন আধিকারী জানালেন, লোকায়ত আলপনাকে কী ভাবে ক্ল্যাসিক চেহারা দিল শান্তিনিকেতন, এই কর্মশালায় তা নিয়েই আলোচনা হল। তিনি বলেন, ‘‘গ্রামের মানুষ আগে যে ভাবে হাতে করে আলপনা দিতেন, আজকাল তো আর সে রকম ভাবে কেউ দেন না। রং-তুলির দাপটে হাতে দেওয়া আলপনা হারিয়ে যেতে বসেছে। পুরনো সেই রীতিটাই ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হল এই কর্মশালার মাধ্যমে।’’
বাঙালির আলপনা দেওয়ার চিরায়ত ঐতিহ্যকে এই পুজোয় ফেরানো যাবে, এমনটাই আশা তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy