Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিধির গেরোয় বিনা চিকিৎসায় ক্যানসার রোগী

গত এপ্রিলে মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা রবি ধরের ডান পায়ের টিউমার অস্ত্রোপচার করেন আর জি করের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা। দু’সপ্তাহের মধ্যেই অবশ্য টিউমারের জায়গাটি আবার ফুলে ওঠে।

অসহায়: শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে রবি ধর। নিজস্ব চিত্র

অসহায়: শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে রবি ধর। নিজস্ব চিত্র

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৯ ০১:১৭
Share: Save:

ক্যানসারের শল্য চিকিৎসক নেই। তাই শয্যাশায়ী রোগীকে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটে (সিএনসিআই) ‘রেফার’ করলেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নিয়মের গেরো উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় হাসপাতালে ভর্তি সম্ভব কি না, তা নিশ্চিত ভাবে জানার চেষ্টা হল না। যার জেরে চিকিৎসার অপেক্ষায় দীর্ঘক্ষণ অ্যাম্বুল্যান্সে পড়ে রইলেন রোগী। বুধবারও সেই অপেক্ষার অবসান ঘটেনি।

গত এপ্রিলে মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা রবি ধরের ডান পায়ের টিউমার অস্ত্রোপচার করেন আর জি করের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা। দু’সপ্তাহের মধ্যেই অবশ্য টিউমারের জায়গাটি আবার ফুলে ওঠে। কেন এমন হল, তা দেখার জন্য রোগীকে রেডিয়োথেরাপি বিভাগের চিকিৎসকদের কাছে পাঠানো হয়। রবিবাবুর ভাগ্নে অভিজিৎ ধর জানিয়েছেন, বাড়ি থেকে রেডিয়োথেরাপি বিভাগে যাতায়াত .করে চিকিৎসা চলছিল। জুলাইয়ে ওই প্রৌঢ়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। আর জি করে নিয়ে গেলে তাঁকে ট্রমা বিল্ডিংয়ের পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ডে ভর্তি নেওয়া হয়। চিকিৎসায় গঠিত হয় মেডিক্যাল বোর্ড।

আর জি কর সূত্রের খবর, রবিবাবুর ডান পায়ের উপরের অংশের ক্যানসার কোমরের নীচ পর্যন্ত ছড়িয়েছে। ওই অংশ অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেয় মেডিক্যাল বোর্ড। কিন্তু ক্যানসারের শল্য চিকিৎসক না থাকায় রোগীকে চিত্তরঞ্জনে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়। তাঁর ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে সে কথা লেখাও রয়েছে।

অভিজিৎ বলেন, ‘‘দিন চারেক আগে বলা হয়, ভর্তির সমস্যা হবে না। রোগীকে যেন চিত্তরঞ্জনে নিয়ে যাই।’’ বাস্তবে অবশ্য তা ঘটেনি। চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে সোমবার আর জি কর থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে রবিবাবুকে হাজরার ওই ক্যানসার হাসপাতালে নিয়ে যান পরিজনেরা। কিন্তু বহির্বিভাগে চিকিৎসকেরা

রোগীকে দেখলেও ভর্তি নেননি। এই পরিস্থিতিতে মামাকে নিয়ে কোথায় যাবেন, বুঝতে পারেন না ভাগ্নে। অ্যাম্বুল্যান্সেই তখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন প্রৌঢ়। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হাসপাতাল চত্বরে ওই অবস্থাতেই ছিলেন তিনি। শেষে তাঁকে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করান পরিজনেরা। এক আত্মীয়ের কথায়, ‘‘ওখানে ক্যানসারের চিকিৎসা হবে না জানি। কিন্তু রাস্তায় থাকার চেয়ে হাসপাতালে থাকা তো ভাল!’’

মঙ্গলবার ঘটনার কথা জেনে তৎপর হন সিএনসিআই কর্তৃপক্ষ। রোগীর পরিজনেদের সঙ্গে কথা বলেন অধিকর্তা জয়ন্ত চক্রবর্তী ও সুপার শঙ্কর সেনগুপ্ত। পরে অধিকর্তা বলেন, ‘‘রোগীর শারীরিক অবস্থা কেমন, তা না দেখে চিকিৎসা করব কী করে! সেই জন্য বৃহস্পতিবার আনতে বলেছি। অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন বুঝলে ভর্তি করে নেব।’’

অভিজিৎ বলেন, ‘‘অন্য হাসপাতালে চিকিৎসার কী নিয়ম, তা আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। সেখানে পাঠানোর আগে দুই হাসপাতাল নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিলে অ্যাম্বুল্যান্সে রোগীকে ফেলে রাখতে হত না!’’ একই মত ক্যানসার ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষেরও।

এ বিষয়ে সরকারি চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও অঙ্কো-সার্জন রয়েছেন। অন্যত্র পাঠানোর সুপারিশ করার আগে রোগী সমস্যায় পড়বেন কি না, তা দেখা উচিত ছিল। যোগাযোগের এই ঘাটতির জন্যই হাসপাতালগুলিতে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে বলে মত

ওই চিকিৎসকদের।

আর জি করের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘সমস্যায় পড়লে রোগীর পরিজনদের ফোন করতে বলেছিলাম। আমরা যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছি। কিন্তু অঙ্কো-সার্জন না থাকলে আমরাই বা কী করতে পারি!’’

স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কী ঘটেছে, তা

খতিয়ে দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE