E-Paper

মালিকানা না বদলেই হাতবদলের গাড়ির ভিড় এ শহরেও

সম্প্রতি ই এম বাইপাসে পর পর দু’টি গাড়িতে ধাক্কা মেরে এক পথচারী ও এক সাইকেল আরোহীকে পিষে দেওয়ার ঘটনায় জড়িত গাড়ি নিয়ে সমস্যায় পড়ে পুলিশ। গাড়িটি ২১ বছরের এক যুবক চালালেও সেটি আদতে ছিল এক স্কুলশিক্ষকের নামে।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:২৯

—প্রতীকী চিত্র।

মালিকানা বদল ছাড়াই বার বার গাড়ির হাতবদল! এমন গাড়িই বিস্ফোরণে যুক্ত ছিল দিল্লিতে। সোমবার রাতে এই খবর জানাজানি হতেই এ নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে নানা মহলে। পুলিশ ও পরিবহণ দফতরের অন্দরেও চলছে আলোচনা। কারণ, তাদের দাবি, এমন গাড়ি এ শহরেও কম নেই। কখনও দুর্ঘটনা ঘটলে বা অন্য কোনও ভাবে অপরাধে যুক্ত গাড়ি ধরা হলে সামনে আসে বিষয়টি। রাজধানীতে বিস্ফোরণের জেরে আতঙ্কের আবহের মধ্যেই অনেকের প্রশ্ন, মালিকানা বদল ছাড়াই গাড়ির হাতবদলের এমন বেআইনি কাজ বন্ধ করা যায় না কেন? কেন শুধুই বিক্রেতার সচেতনতার উপরেই দাঁড়িয়ে থাকবে সবটা? সূত্রের খবর, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরিবহণ দফতর ও পুলিশ আবার এমন গাড়ির তালিকা ধরে গাড়িটি কোথায় ও কী অবস্থায় আছে, তা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট তৈরির মতো পদক্ষেপ করতে চলেছে।

জানা গিয়েছে, দিল্লি-বিস্ফোরণে জড়িত গাড়িটি হরিয়ানায় নথিভুক্ত। ২০১৩ সালে তৈরি ওই গাড়ির মালিক হিসেবে মহম্মদ সলমনের নাম রয়েছে। এর পরে সেটি একাধিক বার হাতবদল হলেও মালিকানা বদল হয়নি। একই ভাবে বর্ধমানের শক্তিগড়ে কয়লা ব্যবসায়ী রাজেশ ওরফে রাজু ঝা-কে খুনের ঘটনায় অভিযুক্তেরা যে গাড়িতে এসেছিল, সেটি পঞ্চসায়রের এক মহিলার বলে পুলিশ প্রথমে জানতে পারে। এর পরে সেই মহিলার ঠিকানায় তদন্তকারীরা পৌঁছলে তাঁর ছেলে পুলিশকে জানান, বছরখানেক আগে একটি সংস্থাকে গাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু সেটির মালিকানার পরিবর্তন হয়নি।

সম্প্রতি ই এম বাইপাসে পর পর দু’টি গাড়িতে ধাক্কা মেরে এক পথচারী ও এক সাইকেল আরোহীকে পিষে দেওয়ার ঘটনায় জড়িত গাড়ি নিয়ে সমস্যায় পড়ে পুলিশ। গাড়িটি ২১ বছরের এক যুবক চালালেও সেটি আদতে ছিল এক স্কুলশিক্ষকের নামে। তদন্তে জানা যায়, তিনি গাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছিলেন নাম বদল না করেই। কয়েক মাস আগে জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি থেকে উদ্ধার হয় পা বাঁধা দু’টি গরু। গাড়িচালক এবং খালাসির মৃত্যু হয় ঘটনাস্থলেই। তদন্তে পুলিশ দেখে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের এক বাসিন্দার নামে গাড়িটি নথিভুক্ত। অথচ, মাস তিনেক আগে তিনি ওই গাড়িটি বারুইপুরের একটি পুরনো গাড়ির শোরুমে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। তবে, এ ক্ষেত্রেও মালিকানার বদল হয়নি। প্রায় ২৩ বছর আগে কলকাতায় আমেরিকান সেন্টারে জঙ্গি হামলার ঘটনায় ব্যবহৃত বাইকের মালিকানা খুঁজতে গিয়েও পুলিশ দেখেছিল, সেটি তিন বার হাতবদল হয়েছে।

পরিবহণ দফতর সূত্রের দাবি, মালিকানা বদলে অনিয়ম বন্ধে গাড়ির মালিক অনলাইনেই সমস্তটা করতে পারবেন বলে ছাড় দেওয়া হয়েছে। যিনি গাড়ি কিনছেন, তাঁকে শুধু রিজিয়োনাল ট্রান্সপোর্ট অফিসে যেতে হবে। গাড়ি বেচা-কেনার সঙ্গে যুক্ত ডিলারের মাধ্যমে গাড়ি বিক্রি করলে ২৯এ ফর্ম মালিককে দেবেন সংশ্লিষ্ট ডিলার। এতে তিনি যে ডিলারকে গাড়ি দিয়েছেন, তার প্রমাণ তৈরি হয়ে যাবে। যত দিন গাড়িটি ওই ডিলারের কাছে থাকবে, তত দিন কোনও ভাবেই তিনি বাণিজ্যিক বা ব্যক্তিগত কাজে সেটি ব্যবহার করতে পারবেন না। প্রতি সপ্তাহে এমন গাড়ির বিস্তারিত তথ্য পরিবহণ দফতরে জানাতে হবে, যাতে তা ‘বাহন’ পোর্টালে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। সঙ্গে ডিলারকে পুরনো গাড়ির ডিলার হিসেবে লাইসেন্স নিতে হবে। কিন্তু নিয়মের বদল হলেও পরিস্থিতির বদল হচ্ছে কই? দিল্লির পরে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে শহরে মালিকানা বদল না হওয়া গাড়ি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Illegal Car Buy

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy