Advertisement
E-Paper

নজরদারির দাবি ওড়াল বাসস্টপের বেওয়ারিশ ব্যাগ

পঞ্জাবের গুরুদাসপুরে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াই তখন সবে শেষ হয়েছে। জঙ্গি হামলার সতর্কতা জারি রয়েছে দেশজুড়ে। লালবাজারে বসে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র বললেন, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নজরদারি বাড়িয়েছি।’’

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫ ০২:২১

পঞ্জাবের গুরুদাসপুরে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াই তখন সবে শেষ হয়েছে। জঙ্গি হামলার সতর্কতা জারি রয়েছে দেশজুড়ে। লালবাজারে বসে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র বললেন, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নজরদারি বাড়িয়েছি।’’ লালবাজার সূত্রে খবর, সব জায়গাতেই পুলিশি টহল বেড়েছে। স্পর্শকাতর এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছেন গোয়েন্দারাও। সোমবার অবশ্য সব দাবিকে কার্যত নস্যাৎ করে দিচ্ছে শহরেরই এক গৃহবধূর অভিযোগ।

এ দিন দুপুরে বেকবাগানের একটি শপিং মলের কাছে এসি বাসস্টপে একটি বেওয়ারিশ ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখেছিলেন পিয়ালী মজুমদার নামে এক মহিলা। তাঁর অভিজ্ঞতা, ট্রাফিক কন্ট্রোলের নম্বরে ফোন করলে বলা হয়, স্থানীয় থানা বা ১০০ ডায়ালে ফোন করতে। ১০০ ডায়ালও তাঁকে লালবাজার কিংবা স্থানীয় থানায় ফোন করতে বলে। লালবাজারের যে নম্বর তিনি পান, তাতে ফোন চলে যায় নবান্নে! পিয়ালীদেবী বলছেন, নবান্ন থেকেও অভিযোগ জানাতে বলা হয় লালবাজারে। বিরক্ত হয়ে সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে শেষে নবান্নের ‘মধ্যস্থতায়’ লালবাজারের লাইন পান তিনি। তত ক্ষণে কেটে গিয়েছে বেশ কিছু সময়।

বিপদে পড়লে তড়িঘড়ি পুলিশকে জানানোই কর্তব্য। সেই নাগরিক কর্তব্য পালন করলে লালবাজারের পরামর্শ, ‘১০০’ ডায়ালে ফোন করুন। কিন্তু তাতে এমন উত্তর মেলে, তবে লাভ কী?—প্রশ্ন তুলছেন পুলিশেরই একাংশ।

‘১০০’ ডায়ালের এমন বিভ্রাট অবশ্য নতুন নয়। বছর কয়েক আগে ভরদুপুরে উল্টোডাঙার বিধান আবাসনে ডাকাতির বিপদবার্তা দিতে ফোন করা হয়েছিল ‘১০০’ ডায়ালে। সেই ফোন চলে যায় লেকটাউন পুলিশের কাছে! তার আগেও এক বার পার্ক সার্কাস উড়ালপুলে মোটরবাইক দুর্ঘটনার খবর জানাতে গিয়ে ‘১০০’ ডায়ালে লাইন না মেলার অভিযোগ করেন প্রত্যক্ষদর্শী।

লালবাজারের দাবি, ফোন করলেই যাতে ১০০ ডায়ালের লাইন মেলে তাই একাধিক লাইন রাখা হয়েছে। ডায়াল করলেই সরাসরি ফোন ঢুকবে কোনও না কোনও লাইনে। প্রশ্ন উঠেছে, সেখানেই এমন ব্যবহার পেলে লাভ কী?

লালবাজারের একাংশ বলছেন, ঝকঝকে কন্ট্রোল রুম হয়েছে, ব্যবহার হচ্ছে প্রযুক্তিও। কিন্তু বাহিনীর সব স্তরে এখনও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মানসিকতা গড়ে ওঠেনি। ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার এক অফিসারের মতে, ‘‘এই মানসিকতা গড়ে না উঠলে যখন খুশি বড় বিপদ ঘটতে পারে।’’ পুলিশের একাংশ বলছেন, সকাল থেকেই টিভিতে পঞ্জাবের জঙ্গি হানার ঘটনা দেখানো হচ্ছিল। যুগ্ম কমিশনার (সদর)-এর দফতর থেকে সতর্কতা ও নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হচ্ছিল। তাতেও ওই পুলিশকর্মীর টনক নড়েনি।

উঠছে পুলিশের সমন্বয়ের অভাবের কথাও। প্রাক্তন পুলিশকর্তাদের অনেকেই বলছেন, ট্রাফিক কন্ট্রোল বা সাধারণ থানা, এমনকী টহলদার পুলিশও এমন খবর পেলে তা সংশ্লিষ্ট জায়গায় জানাতে পারে। এর জন্য নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিতে হয় না। সহকারী কমিশনার হিসেবে অবসর নেওয়া এক অফিসার বলছেন, ‘‘মহিলার ফোন পেয়ে ট্রাফিক কন্ট্রোলেরই উচিত ছিল মূল কন্ট্রোল বা সরাসরি কড়েয়া থানায় জানানো।’’ কিন্তু তারা উল্টে ‘১০০’ ডায়ালের কথা বলে।

দায় এড়ানোর অভিযোগ উঠেছে এ দিন ‘১০০’ ডায়ালে ফোন ধরা ওই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধেও। পিয়ালীদেবী বলেছেন, ‘‘উনি লালবাজারে ফোন করতে বলেন।’’ কিন্তু ‘১০০’ ডায়াল তো লালবাজারের মূল কন্ট্রোল রুমেই। তা হলে কোথায় ফোন করবেন মহিলা?

প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে লালবাজারের অন্দরেও। কেউ কেউ বলছেন, বিধান নিবাসের ঘটনার মতো এ বারও অন্য কোথাও ফোন চলে গেল না তো! এর উত্তর মেলেনি। তবে এ দিনের ঘটনার পরে কিছুটা নড়েচড়ে বসেছেন পুলিশকর্তারা। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা বা সমন্বয়ের অভাব নিয়ে অবশ্য তাঁদের মুখে কুলুপ। যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুধু বলেছেন, ‘‘ওই মহিলার সব অভিযোগই খতিয়ে দেখব।’’ তবে শীর্ষকর্তাদের অনেকেই ঘনিষ্ঠ মহলে বলছেন, পঞ্জাবে জঙ্গি হামলার দিনে বেওয়ারিশ ব্যাগের খবর ঘিরে ১০০ ডায়ালের এমন ব্যবহার যথেষ্ট বিব্রত করেছে শীর্ষকর্তাদের। সেই কারণেই পাল্টা কোনও যুক্তি সাজাতে পারছেন না তাঁরা।

kuntak chattopadhyay casual response irresponsible police lalabazar 100 dial beckbagan bag piyali majumdar bag
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy