জোড়া খুনের ঘটনার এলাকায় থাকা এমনই কিছু ক্যামেরা আদৌ কাজ করে কি না, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। বুধবার, হরিশ মুখার্জি রোডে। নিজস্ব চিত্র
ট্যাংরার গোবিন্দ খটিক রোড ধরে ঝড়ের গতিতে আসা একটি অ্যাম্বুল্যান্স থেমেছিল এক শিশুর হাত ধরে হাঁটা তরুণীর সামনে। বিয়েবাড়ি থেকে রাতে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে ফিরছিলেন গৃহবধূ ওই তরুণী। শ্বশুর, শাশুড়ি এবং বাড়ির অন্যেরা একটু পিছিয়ে পড়েছিলেন। অভিযোগ, সেই সুযোগে দরজা খুলে ওই অ্যাম্বুল্যান্সে তরুণীকে টেনে তোলার চেষ্টা হয়। যা দেখে ছুটে আসেন পরিজনেরা। তাঁরা অ্যাম্বুল্যান্স ঘিরে ধরলে সেটি তরুণীর শ্বশুরকে পিষে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে যায়।
ওই ঘটনার পরে স্বাভাবিক ভাবেই শহর জুড়ে শোরগোল পড়েছিল। প্রশ্ন ওঠে রাতের শহরে মহিলাদের নিরাপত্তা এবং পুলিশের নজরদারি নিয়ে। তদন্তে সামনে আসে, গোবিন্দ খটিক রোডের ওই জায়গায় থানার সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকলেও সেগুলি আসলে কাজ করছিল না! ফলে ঘটনার স্পষ্ট ফুটেজই মেলেনি। শেষ পর্যন্ত একটি বাড়ির গায়ে লাগানো সিসিক্যামেরার ফুটেজ দেখে ঘটনার কিনারা করার চেষ্টা করে লালবাজার। তাতেও অবশ্য প্রত্যক্ষ ফুটেজ পাওয়া যায়নি।
অপরাধের অভিযোগ সামনে আসার পরে বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ঘটনাস্থল বা আশপাশে থাকা সিসি ক্যামেরা বিকল। থানা বা ট্র্যাফিক গার্ডে লাগানো সিসি ক্যামেরা বিকল থাকায় তদন্তে বেগ পেতে হয়। রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো চলছে বলে অভিযোগ ওঠার পাশাপাশি সেখানকার বেশ কিছু সিসি ক্যামেরা খারাপ বলেও অভিযোগ উঠেছিল। অতীতে গঙ্গায় বানের জলে ন’জনের তলিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটলেও পুলিশি তদন্তে উঠে আসে, সেখানকার সিসি ক্যামেরাও বিকল ছিল।
একই ভাবে হরিশ মুখার্জি রোডের জোড়া খুনের ঘটনাতেও দেখা যাচ্ছে, যে বাড়িতে খুন হয়েছেন দম্পতি,তার ঠিক সামনে থাকা তিনটি সিসি ক্যামেরা বিকল।
তা হলে কি পুলিশের শীর্ষ স্তর থেকে পাড়ায় পাড়ায় নজরদারি বাড়ানোর কথা বলা হলেও নিচু স্তরে কাজ হয় না? যার ফলে সিসি ক্যামেরা ঠিক মতো কাজ করছে কি না, সে বিষয়ে নিয়মিত খোঁজই নেয় না থানা?
হরিশ মুখার্জি রোডের ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা গেল, নিজেদেরবাড়ির গায়ে ওই ক্যামেরা তিনটি লাগিয়েছিলেন যাঁরা, বছর দুয়েক আগে সেগুলি খারাপহওয়ায় সারানোর খরচ শুনে তাঁরা আর এগোননি। ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে বলে প্রথমে তাঁরা থানায় লিখিত ভাবে জানান। কিন্তু সেগুলি যে খারাপ হয়ে গিয়েছে, আর তা জানাননি। পুলিশের তরফেও খোঁজ নেওয়া হয়নি। হরিশ মুখার্জি রোডের ঘটনাস্থলের কাছে কয়েকটি মোড়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে গিয়েও বেগ পেতে হচ্ছে তদন্তকারীদের। সূত্রের খবর, সেখানে একটি মোড়েপুলিশের লাগানো ক্যামেরাই বিকল। দূরের ক্যামেরা থেকে যে ফুটেজ মিলেছে, তা-ও স্পষ্ট নয়। তার পরেও অবশ্য আততায়ীদের চিহ্নিত করা গিয়েছে বলে বুধবার দাবি করেছে পুলিশ।
যান-শাসনের পাশাপাশি অপরাধ দমনে সিসি ক্যামেরা কী ভাবে সাহায্য করছে, তা জানতে সম্প্রতি সমীক্ষা করেছে ‘বুরো অব পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ (বিপিআরডি)। ওই সমীক্ষায় থানা এবংট্র্যাফিক গার্ডগুলির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, সিসি ক্যামেরা বসানোর পরে এলাকায় অপরাধ কমেছে কি না, অপরাধের কিনারা করতে সিসি ক্যামেরা কী ভাবে সাহায্য করছে, ফুটেজ দেখে অপরাধীদের শনাক্ত করা হচ্ছে জেনে অপরাধের সময়ে দুষ্কৃতীদের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন এসেছে কি না ইত্যাদি। গোয়েন্দা বিভাগের কাছে পাঠানো ওই সমীক্ষার রিপোর্টে সিসি ক্যামেরার সুফলের পাশাপাশি ক্যামেরা বিকল থাকার অভিযোগও উঠে এসেছে। কিন্তু এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কী পদক্ষেপ করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তার মধ্যেই শহরে ঘটে গিয়েছে জোড়া খুনের এই ঘটনা।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy