Advertisement
E-Paper

দালাল ধরে ভর্তি, মৃত্যু চিকিৎসার ‘গাফিলতি’তে

একে দালাল ধরে ভর্তি। তার উপরে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু। এক রোগিণীকে ঘিরে এক সঙ্গে এই দুই অভিযোগ উঠল এসএসকেএম হাসপাতালে। আরতিবালা নস্কর (৫০) নামে এক হৃদরোগীর মৃত্যু হয় বুধবার সন্ধ্যায়। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, দালালকে টাকা দিয়ে হাসপাতালে কোনও মতে একটি শয্যার বন্দোবস্ত করেছিলেন তাঁরা।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:২৯

একে দালাল ধরে ভর্তি। তার উপরে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু। এক রোগিণীকে ঘিরে এক সঙ্গে এই দুই অভিযোগ উঠল এসএসকেএম হাসপাতালে।

আরতিবালা নস্কর (৫০) নামে এক হৃদরোগীর মৃত্যু হয় বুধবার সন্ধ্যায়। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, দালালকে টাকা দিয়ে হাসপাতালে কোনও মতে একটি শয্যার বন্দোবস্ত করেছিলেন তাঁরা। অস্ত্রোপচারও হয়েছিল। তার পর ক্রমশ সেরে উঠছিলেন তিনি। কিন্তু বুধবার দুপুরে ওয়ার্ডের এক সিনিয়র চিকিৎসক তাঁদের জানান, একটু গোলমাল হয়ে গিয়েছে। জুনিয়র ডাক্তার একটি নল খুলতে গিয়ে কিছু ভুল করে ফেলেছেন। ফলে দূষিত রক্ত ফুসফুসে ঢুকে গিয়ে আরতিদেবীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়েছে। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হাসপাতালের তরফ থেকে জানানো হয়, আরতিদেবী মারা গিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সিনিয়র চিকিৎসক অবশ্য পরে দাবি করেন, তিনি এমন কোনও কথা বলেননি।

বুধবার রাতেই এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন আরতিদেবীর পরিবারের লোকেরা। এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে রাতে হাসপাতাল চত্বরে কিছুটা উত্তেজনাও তৈরি হয়।

সূত্রের খবর, এপ্রিল মাস থেকে টানা চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত জুলাইয়ের শেষে হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা করতে পেরেছিলেন বারুইপুরের বাসিন্দা আরতিদেবীর পরিজনেরা। পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, দালালের হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে তবেই বন্দোবস্ত হয়েছিল শয্যার। এর পরে আরও এক মাস দীর্ঘ প্রতীক্ষা। তার পরে সেপ্টেম্বরের গোড়ায় ‘ডেট’ পড়েছিল অস্ত্রোপচারের। অস্ত্রোপচার করিয়ে ধীরে ধীরে সেরে উঠছিলেন তিনি। বুধবার সকালেও বাড়ির লোকের সঙ্গে দিব্যি কথাবার্তা বলেছেন। দুপুরে আচমকাই তাঁর অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। সন্ধ্যায় তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

আরতিদেবীর মেয়ে প্রতিমা সর্দারের অভিযোগ, যে সিনিয়র ডাক্তার তাঁর মায়ের চিকিৎসা করছিলেন, বুধবার বেলা ১২টা নাগাদ তিনি তাঁদের জুনিয়র ডাক্তারের ভুলের কথা জানান। আরতিদেবীর ছেলে কমল নস্কর হাসপাতালের সুপারের কাছে লেখা চিঠিতে এই অভিযোগের কথাই বিস্তারিত ভাবে জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ডাক্তারবাবু বলেছিলেন কয়েক দিনের মধ্যেই মাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসার জন্য মায়ের অবস্থা হঠাৎ করে খারাপ হয়ে গেল। সন্ধ্যায় জানতে পারলাম মা আর নেই। চিকিৎসা নিয়ে এই ধরণের গাফিলতি যারা করেছেন তাঁদের যেন শাস্তি হয়।’’

হাসপাতালের সুপার করবী বড়াল জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তাঁর কথায়, ‘‘এমন কিছু হয়ে থাকলে সেটা গর্হিত অপরাধ। তদন্ত করে তবেই এ ব্যাপারে নিশ্চিত ভাবে জানা যাবে।’’

বারুইপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসকের পরামর্শে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আরতিদেবী। তাঁর হার্টে ফুটো ছিল। প্রয়োজন ছিল অস্ত্রোপচারের। পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, এসএসকেএমে এসে গোড়া থেকেই তাঁদের নানা ভোগান্তি হয়েছে। কোনও ভাবেই শয্যার বন্দোবস্ত করতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালেরই এক কর্মী তাঁদের এক দালালের নম্বর দেয়। সেই দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করেই টাকার বিনিময়ে শয্যার ব্যবস্থা হয়। কমলবাবুর অভিযোগ, রাজ্যের সবচেয়ে বড় হাসপাতালে প্রতি পদে এমন ভোগান্তির কথা ভাবতেই পারিনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনও বিষয়েই নজর দিচ্ছেন না। তাই এক দিকে যেমন দালাল চক্রের রমরমা, অন্য দিকে তেমনই চিকিৎসায় গাফিলতি এবং ভুল চিকিৎসা চলছে হরদম।’’

সুপার করবীদেবী অবশ্য বলেছেন, ‘‘দালাল চক্র হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একা বন্ধ করতে পারবে না, রোগীর পরিবারের সাহায্য পেলে তবেই এই কাজ সফল হবে। দালালকে চিহ্নিত করতে হবে। যদি হাসপাতালেরই কোনও কর্মী দালালের নম্বর দিয়ে থাকেন, তা হলে সেই কর্মীকেও চিহ্নিত করতে হবে।’’ যদিও এর পাল্টা আরতিদেবীর পরিবারের লোকেরা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘চিকিৎসা করাতে এসে সাধারণ মানুষের যে ভোগান্তি হয়, তার সুযোগ নিয়েই দালালেরা জাঁকিয়ে বসছে। সেই ভোগান্তি বন্ধ করবে কে?’’

গত বেশ কিছু দিন ধরেই দালাল ধরার অভিযান শুরু হয়েছে এসএসকেএমে। রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অরূপ বিশ্বাস নিজে এই অভিযানের তদারকি করেছেন। এমন কী রোগীর ছদ্মবেশেও পুলিশ দালাল ধরেছে হাসপাতালে। হাসপাতালেরই এক প্রভাবশালী চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এ দিনের অভিযোগ সম্পর্কে অবশ্য অরূপবাবু কোনও মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, ‘‘আমি কলকাতার বাইরে আছি। এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।’’

SSKM hospital Patient Broker Doctor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy