Advertisement
E-Paper

নিষেধাজ্ঞাই সার! গেট ভেঙে, প্রশাসনের সামনেই ছটপুজো রবীন্দ্র সরোবরে

রবীন্দ্র সরোবরে দূষণ রুখতে বছরভর নানা পরিকল্পনা নিয়ে থাকে রাজ্য সরকার। কিন্তু ছট পুজোর সময় কার্যত ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ হয়ে পড়ে পুলিশ, প্রশাসন। এ বারও তার ব্যাতিক্রম হল না। ভোট-রাজনীতির কাছে যে প্রশাসনিক দায়বদ্ধতা হার মানে, ফের তা প্রমাণিত হল।

সোমনাথ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৯ ১৬:১৪
ছটপুজো শুরু রবীন্দ্র সরোবরের ভিতরে।  নিজস্ব চিত্র।

ছটপুজো শুরু রবীন্দ্র সরোবরের ভিতরে। নিজস্ব চিত্র।

পরিবেশ আদালতের নিষেধাজ্ঞা ছিল। কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)-র নোটিস ঝোলানো ছিল গেটে গেটে। ভিতরে ছিলেন বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তারক্ষী আর প্রতিটি গেটে ছিল পুলিশ পাহারা। তবু শনিবার সকালে প্রতিটি গেটের তালা ভেঙে রবীন্দ্র সরোবরে ঢুকে পড়লেন একদল যুবক। কলার কাঁদি ঢুকল। ঢুকল আখ। পুজোর চাদর। ছটপুজো শুরুর ঠিক আগের মুহূর্তে এখন হাজার তিনেকেরও বেশি মানুষের ভিড় রবীন্দ্র সরোবরের ভিতরে।

রবীন্দ্র সরোবরে দূষণ রুখতে বছরভর নানা পরিকল্পনা নিয়ে থাকে রাজ্য সরকার। কিন্তু ছটপুজোর সময় কার্যত ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ হয়ে পড়ে পুলিশ, প্রশাসন। এ বারও তার ব্যাতিক্রম হল না। ভোট-রাজনীতির কাছে যে প্রশাসনিক দায়বদ্ধতা হার মানে, ফের তা প্রমাণিত হল।

পরিবেশ আদালতের নির্দেশ কার্যকরে আন্তরিকতা বোঝাতে এ বার কেএমডিএ-র তরফে নেওয়া হয়েছিল বাড়তি উদ্যোগও। টাকা খরচ করে অনেকগুলি ঝকঝকে ফ্লেক্স বানিয়েছিল কেএমডিএ। সেগুলি সরোবরের গেটে গেটে টাঙানো হয়েছিল। তাতে লেখা, ‘‘শুক্রবার মধ্যরাত থেকে রবিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত পার্ক বন্ধ থাকবে।’’ সরোবরের গেটে গেটে তালাও মেরে দিয়েছিলেন বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তারক্ষীরা।

কিন্তু শনিবার সকালে যখন পুজোর আয়োজন করতে একদল যুবককে রবীন্দ্র সরোবরের গেটগুলির তালা ভাঙতে দেখা যায়, তখন ভিতরের বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী আর গেটে মোতায়েন হাতে গোনা পুলিশকর্মীর কাউকেই দেখা যায়নি। তাঁরা কোথাও যেন উধাও হয়ে গিয়েছিলেন! রবীন্দ্র সরোবর ও লেক থানায় বার বার ফোন করা সত্ত্বেও কেউ ফোন তোলেননি। কোনও পুলিশ অফিসার সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখাও করতে চাননি। পুজো শুরুর প্রাকমুহূর্তে হঠাৎ দেখা গেল লেক থানার জনাকয়েক পুলিশকর্মীর। তাঁদের ভিড় আটকানোর চেষ্টা করতে দেখা গেল।

পুজো শুরুর প্রাকমুহূর্তে এই ভাবেই ভিড় ‘আটকাতে চেষ্টা করলেন’ গুটিকয়েক পুলিশকর্মী। রবীন্দ্র সরোবরে। শনিবারের নিজস্ব চিত্র।

সকাল গড়িয়ে দুপুর হতেই ছটপুজোর আয়োজনে এ দিন ব্যস্ত হয়ে উঠেছে রবীন্দ্র সরোবর চত্বর। ভিতর, বাইরে সর্বত্রই সেই ব্যস্ততা। পুজোর জন্য রবীন্দ্র সরোবরের ভিতরে ঢুকেছে কলার কাঁদি, আখ। ঢোকানো হয়েছে পুজোর চাদর। নানা উপাচার, পুজোর উপকরণ। সেই সবে বাধা দেওয়া তো দূরের কথা, কোনও পুলিশকর্মীকেই ধারেকাছে দেখা যায়নি।

আরও পড়ুন- ডেঙ্গিতে মৃত্যু হল পুরসভার অফিসারের​

আরও পড়ুন- রবীন্দ্র সরোবরে মাছ ধরা নিয়ে ফাঁপরে কেএমডিএ

কেএমডিএ-র কয়েক জন অফিসারকে অবশ্য দেখা গিয়েছে। রবীন্দ্র সরোবরের ভিতরে, বাইরে। দেখা গিয়েছে, তাঁদের সামনেই কলার কাঁদি, আখ, পুজোর চাদর ও নানা উপকরণ ঢুকছে রবীন্দ্র সরোবরের ভিতরে। ঢুকছেন পুজোর আয়োজকরা। সরোবরের ঘাটে চলছে পুজোর চাদর পাতার কাজ। পুজোর জন্য চলছে ঘাট পরিস্কারের কাজকর্মও। হাজির পুর অফিসাররা তাতে বাধা দেননি। সাংবাদিকদের কাছে কিছু বলতেও চাননি।

রবীন্দ্র সরোবরের বাইরে কলকাতা পুরসভার নোটিস। নিজস্ব চিত্র।

গোটা ঘটনা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ গোপন থাকেনি। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, গ্রিন ট্রাইব্যুনাল রবীন্দ্র সরোবরে ওই পুজো বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার পরেও কী ভাবে ওই ঘটনা ঘটল? পার্কের গেটের তালা ভেঙে ঢোকা, পুরসভার টাঙানো ফ্লেক্স ছিঁড়ে ফেলার পরেও কেন রবীন্দ্র সরোবরের ভিতরে ওই পুজোর আয়োজকদের এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করেনি পুলিশ?

গেটের তালা ভাঙার অভিযোগ যদিও মানলেন না রবীন্দ্র সরোবরের ভিতরে ছট পুজোর অন্যতম আয়োজক জয়দীপ ধর। বললেন, ‘‘আমরা তালা ভাঙিনি। ও সব কেন করব? পুজো করতে এসেছি। করব।’’ আর এক আয়োজক রাকেশ রামও বেশ জোর গলায় বললেন, ‘‘পুজো প্রতি বারই করি। এ বারও করব। যা যা নিয়ম আছে পুজোর পর সেই সব মানব। ঘাট পরিস্কার করে দেব। কিন্তু পুজো করবই।’’

পুলিশ সূত্রে খবর, রবীন্দ্র সরোবরের ছট পুজোর ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া, এ নিয়ে দু’টি মামলাও দায়ের হয়েছে।

Rabindra Sarovar Chhot Puja Green Tribunal ছট পুজো রবীন্দ্র সরোবর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy