Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
কেএমডিএ-র গড়িমসি

নকশা কোথায়, ধাতানি মুখ্যসচিবের

এত দিন যেন গা এলিয়ে চলা হচ্ছিল। উপরতলা ঝাঁকুনি দিতেই সম্বিৎ ফিরল! প্রসঙ্গ— উড়ালপুল-কাণ্ড ও তার প্রেক্ষিতে কেএমডিএ-র ভূমিকা। পোস্তায় সেতু বিপর্যয়ের দু’সপ্তাহ কাটতে চলল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৩৯
Share: Save:

এত দিন যেন গা এলিয়ে চলা হচ্ছিল। উপরতলা ঝাঁকুনি দিতেই সম্বিৎ ফিরল!

প্রসঙ্গ— উড়ালপুল-কাণ্ড ও তার প্রেক্ষিতে কেএমডিএ-র ভূমিকা। পোস্তায় সেতু বিপর্যয়ের দু’সপ্তাহ কাটতে চলল। এখনও নির্মীয়মাণ সেই বিবেকানন্দ উড়ালপুলের সমস্ত নকশা কেএমডিএ রাজ্য সরকার গঠিত তদন্ত কমিটিকে দিতে না-পারায় মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষুব্ধ। কেএমডিএ-কর্তাদের কাছে তিনি বিলম্বের কারণ জানতে চেয়েছেন। তাঁদের বলা হয়েছে তদন্তের স্বার্থে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যাবতীয় নকশা কমিটির হাতে তুলে দিতে।

শুধু ফরমান জারি-ই নয়। তার বাস্তবায়নের আয়োজনও করে দিয়েছে নবান্ন। মুখ্যসচিবের নির্দেশে আগামী বুধবার কেএমডিএ-র অফিসে বৈঠক ডাকা হয়েছে। যেখানে কেএমডিএ-র শীর্ষ কর্তারা ছাড়াও থাকবেন রাজ্যের পূর্ত-সচিব, পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ এবং কমিটির সদস্য হিসেবে আইআইটি-র বিশেষজ্ঞেরা। তদন্তের কাজে যা যা নকশা দরকার, বিশেষজ্ঞেরা তা ওখানে বসেই কেএমডিএ’র কাছ থেকে চেয়ে নেবেন। প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, ‘‘এই কারণেই বৈঠকটা কেএমডিএ-র অফিসে হচ্ছে। যাতে প্রয়োজনীয় সব ফাইল বিশেষজ্ঞেরা হাতে হাতে পেয়ে যেতে পারেন।’’

গত ৩১ মার্চ ভরদুপুরে পোস্তায় আধা-তৈরি বিবেকানন্দ পথ-সেতুর একাংশ হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়ায় ২৭ জনের প্রাণ গিয়েছে, আহত অন্তত ৯০। ঘটনার তদন্তে রাজ্য সরকার মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়েছে। কলকাতা পুলিশও নিজের মতো তদন্ত চালাচ্ছে। গাফিলতির অভিযোগে উড়ালপুলটির নির্মাতা সংস্থা আইভিআরসিএলের ১০ জনকে পুলিশ ইতিমধ্যে গ্রেফতার করেছে। পাশাপাশি প্রকল্পের মূল হোতা তথা তত্ত্বাবধায়ক কেএমডিএ-র বিরুদ্ধেও গাফিলতির প্রাথমিক প্রমাণ মজুত বলে লালবাজারের ইঙ্গিত। রাজ্য সরকারি সংস্থাটির ১২ জনকে গোয়েন্দারা জেরা করেছেন, যদিও কাউকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি।

এমতাবস্থায় কেএমডিএ-র দিক থেকে নকশা সরবরাহে দেরির বিষয়টিকে নবান্ন মোটেই ভাল ভাবে নিচ্ছে না। এক আমলার আক্ষেপ, ‘‘সমস্ত প্ল্যান হাতে না-আসায় এত দিনেও তদন্ত ঠিকঠাক গতি পাচ্ছে না।’’ প্রশাসন-সূত্রের খবর, বুধবার নবান্নে আয়োজিত তদন্ত কমিটির বৈঠকে আইআইটি-র বিশেষজ্ঞেরা ভাঙা সেতুর বেশ কিছু নকশা চেয়েছিলেন। তখনই জানা যায়, কেএমডিএ সব ফাইল দেয়নি। ‘‘শুনে মুখ্যসচিব রেগে যান। কারণ, তদন্ত কমিটির প্রথম বৈঠকেই তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, কেএমডিএ যেন সব নকশা জমা দেয়।’’— বলেন সূত্রটি।

এ দিন অবশ্য কিছু নকশা ও কাগজপত্র বিশেষজ্ঞদের দেওয়া হয়েছে। বিকেলে দুর্ঘটনাস্থলেও গিয়েছিলেন খড়গপুর আইআইটি-র ওই তিন বিশেষজ্ঞ— আনন্দপ্রসাদ গুপ্ত, শ্রীমান ভট্টাচার্য ও স্বপন মজুমদার। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে তাঁরা গিরিশ পার্ক মো়ড় থেকে স্ট্র্যান্ড রোড পর্যন্ত নির্মীয়মাণ সেতুর বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন। সঙ্গে ছিলেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা-প্রধান দেবাশিস বড়াল।

পাশাপাশি ঘটনাস্থল পরিষ্কারের পর্ব চলছে জোরকদমে। এ দিন গিয়ে দেখা যায়, ধসে পড়া সেতুর কংক্রিটের অংশ গ্যাস কাটার দিয়ে কাটা হচ্ছে। কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত রেল বিকাশ নিগমের (আরভিএনএল) এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘আশপাশের পুরনো ও বিপজ্জনক বাড়িগুলোর কথা মাথায় রেখে প্রথমে কংক্রিটের অংশ কাটা হচ্ছে। পরে লোহার অংশ কাটা হবে।’’ কাজ চলাকালীন নিগমের তরফে নিয়মিত মাইক মারফত লোকজনকে সতর্ক করা হচ্ছে। বিবেকানন্দ রোড বন্ধ থাকলেও রবীন্দ্র সরণি চালু রয়েছে।

দুর্ঘটনাস্থল সাফ করার জন্য আরভিএনএল আপাতত তিন সপ্তাহ সময় চেয়েছে। তবে সময়সীমা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন নিগমের ইঞ্জিনিয়ারেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

flyover accident kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE