Advertisement
২৪ মার্চ ২০২৩

বেদখল পথে শিশুর প্রাণ কাড়ল লরি

সোমবার রাজারহাটের পাথরঘাটা এলাকার ঘটনা। এ দিন সকালে ওই বাসস্ট্যান্ডের কাছে লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে ইশাবুল মোল্লার (৪)। ওই এলাকায় রয়েছে একাধিক স্কুল ও মাদ্রাসা। কাছেই স্বাস্থ্য কেন্দ্রও। সেখানেই রাস্তা আটকে অটোস্ট্যান্ড যে কতটা বিপদের, এই মৃত্যুর পরে তা নিয়ে ফের ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাসিন্দারা।

শোক: ছোট্ট ইশাবুলের (বাঁ দিকে) মৃত্যুর পরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বাবা রবিউল মোল্লা।

শোক: ছোট্ট ইশাবুলের (বাঁ দিকে) মৃত্যুর পরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বাবা রবিউল মোল্লা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৭ ০২:০২
Share: Save:

মৃত্যুফাঁদ পাতাই ছিল। একাধিক বার তা নিয়ে প্রশাসনে জানানো হয়েছিল বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। অবশেষে প্রশাসনের হুঁশ ফিরল, তবে চার বছরের এক শিশুপ্রাণের বিনিময়ে।

Advertisement

সোমবার রাজারহাটের পাথরঘাটা এলাকার ঘটনা। এ দিন সকালে ওই বাসস্ট্যান্ডের কাছে লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে ইশাবুল মোল্লার (৪)। ওই এলাকায় রয়েছে একাধিক স্কুল ও মাদ্রাসা। কাছেই স্বাস্থ্য কেন্দ্রও। সেখানেই রাস্তা আটকে অটোস্ট্যান্ড যে কতটা বিপদের, এই মৃত্যুর পরে তা নিয়ে ফের ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাসিন্দারা। এর পরেই ওই এলাকা থেকে অটোস্ট্যান্ড সরানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিধাননগর পুলিশ। স্থায়ী ভাবে ওই স্কুল এলাকায় ট্র্যাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে বলেও জানান বিধাননগর পুলিশের এক কর্তা। কিন্তু এত দিন কেন সেই পদক্ষেপ হয়নি? তার অবশ্য সদুত্তর মেলেনি।

স্থানীয়েরা জানান, পাথরঘাটা বাজারের ওই রাস্তা ধরে প্রতিদিন কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী যাতায়াত করে। রাস্তার ধার ঘেঁষে দোকান-বাজার। একটি বেসরকারি রুটের বাসস্ট্যান্ডও রয়েছে। তার উপরে আনুমানিক ১৬ ফুটের রাস্তার অধিকাংশ জুড়ে রয়েছে পাথরঘাটা থেকে বিষ্ণুপুর যাওয়ার অটোস্ট্যান্ড। এলাকায় গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন মোড়ে রয়েছে হাম্প। অভিযোগ, সেই হাম্পগুলিও দূর থেকে বোঝা দায়। সব মিলিয়ে ওই স্ট্যান্ডের কাছে দু’দিক থেকে যানবাহন চলাচল প্রায় অসম্ভব। তার মধ্যেই দশ চাকার লরি থেকে সাইকেল-ভ্যান, চলে সবই। উপরন্তু ওই রাস্তায় পুলিশের নজরদারি নিয়মিত হয় না বলে অভিযোগ। সব মিলিয়ে মরণফাঁদ তৈরিই ছিল।

ক্ষোভ: দুর্ঘটনার পরে ঘাতক লরিটির উপরে ভাঙচুর চালাচ্ছে স্থানীয় জনতা। মঙ্গলবার, রাজারহাটে। নিজস্ব চিত্র

Advertisement

পুলিশ জানায়, সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ ওই ঘটনাটি ঘটে। একটি মোটরবাইকে করে ইশাবুলকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাচ্ছিলেন তার দুই আত্মীয়। ইশাবুল বসেছিল ওই দু’জনের মাঝে। পাথরঘাটা বাসস্ট্যান্ডের কাছে উল্টোদিক থেকে আসা একটি লরির গায়ে লেগে নিয়ন্ত্রণ হারান মোটরবাইকের চালক। এর পরেই চালক এবং পিছনের আরোহী বাঁ দিকে পড়ে যান, কিন্তু ইশাবুল ডানদিকে লরির পিছনের চাকার সামনে পড়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা চিৎকার করে ওঠার আগেই ঘটে যায় অঘটন। ওই ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ওই শিশুর শরীর। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, দূর থেকে দেখা যায় না বলে ওই হাম্প পেরোতে গিয়ে আরও বেসামাল হয়ে পড়ে বাইকটি।

এই ঘটনার পরেই উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। উত্তেজিত জনতা লরিটি থামিয়ে ভাঙচুর চালায়। চালক ও খালাসি অবশ্য পলাতক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। বহু ক্ষণ পর্যন্ত সেখানে ছড়িয়ে ছিল মৃত শিশুর ঘিলু, মজ্জার অংশবিশেষ। পরে তা পুড়িয়ে দেন বাসিন্দারা।

এলাকায় স্থানীয়দের ভিড় । সোমবার, রাজারহাটে। নিজস্ব চিত্র

ইশাবুলের বাবার নাম রবিউল মোল্লা, মায়ের নাম সাকিনা বিবি। তাঁরা থাকেন পাথরঘাটা পঞ্চায়েত এলাকার কালিকাপুরে। রবিউল একটি দোকানে কাজ করেন। তাঁর পরিবারের সদস্য এবং পড়শিরা জানান, ইশাবুলের জ্বর-সর্দি, কাশি হচ্ছিল। তাই এ দিন সকালে রবিউলের ভাগ্নে কারিমউল এবং দিদি মারুফা বিবি ইশাবুলকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিলেন। এ দিন ইশাবুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল ভেঙে পড়েছে গোটা পাড়া। রবিউল এবং সাকিনার একমাত্র সন্তানের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ইশাবুলের মা। কথা বলার অবস্থা নেই পুত্রহারা রবিউলেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.