Advertisement
E-Paper

মায়ের হাত ছিটকে চাকার তলায় শিশু

মায়ের হাতের শক্ত বাঁধন থেকে তাকে ছিটকে ফেলে দিল তীব্র গতিতে আসা একটি গাড়ি। কিছু দূরে গিয়ে গাড়িটি থামল বটে, তত ক্ষণে তার চাকার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে ছোট্ট রবির দেহ। আর পুরো ঘটনাটি ঘটেছে তার মা-বাবার চোখের সামনে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৭ ০২:১২

আইসক্রিম আর খাওয়া হল না চার বছরের রবি শিকদারের।

মায়ের হাতের শক্ত বাঁধন থেকে তাকে ছিটকে ফেলে দিল তীব্র গতিতে আসা একটি গাড়ি। কিছু দূরে গিয়ে গাড়িটি থামল বটে, তত ক্ষণে তার চাকার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে ছোট্ট রবির দেহ। আর পুরো ঘটনাটি ঘটেছে তার মা-বাবার চোখের সামনে।

সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে কালীঘাট থানা এলাকার নিবারণ ব্যানার্জি রোডে। পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রথের মেলা থেকে ফেরার সময়ে মায়ের কাছে আইসক্রিম খেতে চেয়েছিল রবি। তা কেনার জন্য ছেলের হাত শক্ত করে ধরে রাস্তা পার হচ্ছিলেন মা পূজা। পিছনেই সাত মাসের ছেলেকে কোলে স্বামী দিলীপ। হঠাৎই তীব্র গতিতে আসা একটি গাড়ি ধাক্কা মারে চার বছরের রবিকে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মায়ের হাত থেকে ছিনিয়ে গাড়িটি ছেঁচড়ে নিয়ে যায় শিশুটিকে। এর পরে যত ক্ষণে গাড়িটি থামে, তত ক্ষণে চাকায় জড়িয়ে গিয়েছে রবির ছোট্ট শরীর। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। ঘটনার পরেই আত্মসমর্পণ করেন গাড়ির চালক সুজিত ভট্টাচার্য।

মঙ্গলবার মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন রবির বাবা দিলীপ। বলেন, ‘‘রথের মেলা দেখে ফেরার সময়ে আইসক্রিম খেতে চেয়েছিল ছেলেটা। মায়ের হাত ধরে রাস্তা পেরোচ্ছিল। হাজরা রোডের দিকে থেকে একটি গাড়ি দ্রুত গতিতে এসে ধাক্কা মারে রবিকে।’’ শোকাহত বাবার বিলাপ, ‘‘ওর মা শক্ত করে হাত ধরে ছিল। কিন্তু গাড়ির গতি এত বেশি ছিল যে হাত থেকে ছেঁচড়ে নিয়ে চলে যায়।’’

আরও পড়ুন: পাঁচ তলা থেকে পড়েও প্রাণরক্ষা শিশুর

এর পরে সাত মাসের ছেলেকে কোলে নিয়ে গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ান দিলীপ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য চিৎকার করতে থাকেন। তখন গাড়িতেই ছিল চালক সুজিতের পরিবার। তাঁরা গাড়ি থেকে নেমে পড়েন। সুজিত তাঁর গাড়িতে তুলে নেন রবি-সহ সকলকে। কিন্তু তার পরেই অসহযোগিতা শুরু হয় বলে অভিযোগ দিলীপের।

তিনি জানান, রবিকে কোলে নিয়ে বসে তখন অঝোরে কাঁদছেন মা। কিন্তু হাসপাতালে না গিয়ে সুজিত বারবার কাউকে ফোন করছিলেন বলে অভিযোগ। শেষে রাসবিহারী মোড়ের কাছে গাড়ি নিয়ে ঘুরতে থাকেন তিনি। তখনই সুজিতকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।

পুলিশের কাছে সুজিত অবশ্য দাবি করেছেন, শিশুটি হঠাৎই এসে পড়ায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। তার পরে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার পথে শিশুর বাবা-মা তাঁকে মারধর করেন এবং হুমকি দিতে থাকেন। নিউ আলিপুরের বাসিন্দা দিলীপ পাড়ার লোকজনদের হাসপাতালে আসতে বলেন। সুজিতের অভিযোগ, তাঁর মোবাইল ফোনটিও গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, এর পরেই টালিগ়ঞ্জ থানার একটু দূরে গাড়ি থামিয়ে দৌড়ে থানায় ঢুকে আত্মসমর্পণ করেন সুজিত। তার পরে শিশুটিকে বাঙুর হাসপাতালে পাঠানো হলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা
করেন চিকিৎসকেরা।

মঙ্গলবার নিউ আলিপুরে রবিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, ডুকরে কেঁদে চলেছেন মা পূজা। নিজেকেই দোষারোপ করছিলেন তিনি, ‘‘আমার হাত থেকে ছেলেটা চলে গেল!’’

Child Accident Death রাসবিহারী মোড়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy