Advertisement
E-Paper

বাজেয়াপ্ত পার্টি ড্রাগে ‘মাদক নেই’, চিনা ট্যাবলেট নিয়ে নাজেহাল সিআইডি

একেই বলে ভুতুড়ে কারবার। ‘মাদক’ ধরার পর কেটে গিয়েছে প্রায় ন’মাস। কলকাতা স্টেশন চত্বরে পাঁচ চিনা নাগরিকের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত দুই কুইন্ট্যালের বেশি ‘মাদক’ ট্যাবলেটে এখনও পর্যন্ত মাদকের হদিশ পেলেন না ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা।

সিজার মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৯ ১৬:৫৬
কলকাতা স্টেশনে মাদক সহ ধৃত চিনা নাগরিকরা।— নিজস্ব চিত্র।

কলকাতা স্টেশনে মাদক সহ ধৃত চিনা নাগরিকরা।— নিজস্ব চিত্র।

একেই বলে ভুতুড়ে কারবার। ‘মাদক’ ধরার পর কেটে গিয়েছে প্রায় ন’মাস। কলকাতা স্টেশন চত্বরে পাঁচ চিনা নাগরিকের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত দুই কুইন্ট্যালের বেশি ‘মাদক’ ট্যাবলেটে এখনও পর্যন্ত মাদকের হদিশ পেলেন না ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। আর তাই মাদক মামলায় জামিন পেয়ে গেলেন ধৃত পাঁচ চিনা নাগরিক! এখনও সিআইডি মাদক মামলায় চার্জশিটও জমা দিতে পারল না। কারণ বার বার পরীক্ষা করেও ওই ট্যাবলেট থেকে পরিচিত কোনও মাদকের অস্তিত্ব মেলেনি। গোয়েন্দাদের সন্দেহ নতুন ধরনের কোনও মাদক রয়েছে ওই ট্যাবলেটে।

গত বছর ২৯ জুন রাতে রেল পুলিশের রুটিন তল্লাশির সময় কলকাতা স্টেশন চত্বর থেকে আটক করা হয় পাঁচ চিনা নাগরিককে। তাঁদের সঙ্গে থাকা পাঁচটি ট্রলি ব্যাগ তল্লাশি করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে থরে থরে সাজিয়ে রাখা গোলাপি রঙের ট্যাবলেট। ওই ট্যাবলেট কিসের, তার কোনও উত্তর দিতে পারেননি ওই চিনারা।

তদন্তকারীদের সন্দেহ হয়, ওই ট্যাবলেট আসলে মাদক। পুলিশের দাবি, প্রাথমিক পরীক্ষাতে মাদকের প্রমাণ পাওয়ার পরেই গ্রেফতার করা হয় চিনের গুয়াংঝৌ প্রদেশের বাসিন্দা ওই পাঁচ চিনাকে। পরের দিনই তদন্তের দায়িত্ব নেয় রাজ্য সিআইডি।

আরও পড়ুন: লাইভ: ১০০ দিনের কাজকে ২০০ দিন করতে চাই, ইস্তাহার প্রকাশ করে বললেন মমতা

ধৃতদের জেরা করে মুর্শিদাবাদে চিনা উদ্যোগে তৈরি কয়েকটি কারখানায় হানা দেন সিআইডির গোয়েন্দারা। সেখানে হানা দেওয়ার পর সিআইডি আদালতে জানায় যে, ওই কারখানাতে ডেরা ছিল ধৃত চিনাদের। সেখানেও ওই মাদক ট্যাবলেট বানানোর কাঁচামাল পাওয়া গিয়েছে। সিআইডি তদন্তকারী দল গুরুগ্রামেও গিয়েছিল। সেখানে ওই চিনাদের এক জন বেশ কিছু দিন চাকরিও করেছেন। এ সব কিছুর পর তদন্তকারীরা আদালতে দাবি করেন, ওই চিনারা একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক মাদক পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তদন্তের পাশাপাশি বাজেয়াপ্ত মাদক ট্যাবলেটের নমুনা সিআইডির তরফে প্রথমে পাঠানো সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবেরটরি (সিএসএফএল) কলকাতায়। সিআইডি সূত্রে খবর সেখানে ওই নমুনা পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞরা জানিয়ে দেন যে, ওই নমুনায় ভারতে নিষিদ্ধ মাদকের তালিকায় থাকা কোনও রাসায়নিক পাওয়া যায়নি। সূত্রের খবর, কলকাতা সিএফএসএলে আশানুরূপ ফল না আসায় নমুনা ফের পাঠানো হয় হায়দরাবাদের সিএফএসএলে। কিন্তু সেখানেও বিশেষজ্ঞরা জানিয়ে দেন যে, কোনও নিষিদ্ধ মাদকের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সিআইডির এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘আমরা ধৃতদের জেরা করে প্রাথমিক ভাবে বাজেয়াপ্ত ট্যাবলেটে অ্যামফেটামাইন আছে বলে সন্দেহ করেছিলাম।’’

আরও পড়ুন: মহাকাশে ভারত এখন মহাশক্তি, বললেন মোদী

সিআইডি সূত্রে খবর, পর পর পরীক্ষাতে মাদকের কোনও হদিশ না পাওয়া যাওয়ায়, আদালতে মাদকের সপক্ষে কোনও প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয় সিআইডি। ফলে তিন মাসের নির্ধারিত সময়ে তাঁরা চার্জশিটও দিতে পারেনি।

উদ্ধার হওয়া পার্টি ড্রাগ।— নিজস্ব চিত্র

মাদক মামলায় জামিন পেয়ে যান ওই পাঁচ চিনা। ইতিমধ্যে ভিসা আইন ভাঙার অভিযোগে আরও একটি মামলা করা হয়েছিল ওই চিনাদের বিরুদ্ধে। সেই মামলায় এখনও তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন সিআইডি কর্তারা। সিআইডির ডিআইজি (অপারেশনস) নিশাত পারভেজ বলেন, “বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিক পরীক্ষায় সদর্থক কোনও ফলাফল পাননি। আমরা ফের পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি ওই নমুনা।”

তবে ফরেন্সিক পরীক্ষায় মাদকের অস্তিত্ব না মেলায় বেজায় ফাঁপরে তদন্তকারীরা। পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ থেকে তদন্তকারীরা নিশ্চিত যে, নিষিদ্ধ মাদক রয়েছে ওই ট্যাবলেটে। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘ওই বিপুল পরিমাণ ট্যাবলেট কোথা থেকে আনা হয়েছিল বা কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল এবং কী কারণে তা প্রথম থেকে গোপন করেছে ধৃতরা। যদি ওই ট্যাবলেটে নিষিদ্ধ কিছু না থাকবে তবে ধৃতরা কেন সব কিছু গোপন করার চেষ্টা করেছিল!”

ঠিক একই ভাবে তদন্তকারীদের প্রশ্ন, “যদি ধৃতদের সঙ্গে বাজেয়াপ্ত হওয়া ট্যাবলেটে কোনও নিষিদ্ধ পদার্থ না থাকে, তবে আটক করার পর তাঁরা পুলিশকে কেন মোটা টাকা ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন?” তদন্তকারীদের দাবি, এ সব ছাড়াও আরও অনেক তথ্যপ্রমাণ আছে তাঁদের কাছে, যা তাঁরা কেস ডায়েরিতে দিয়েছেন।

কিন্তু নার্কোটিক ড্রাগ অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যান্স আইনে বাজেয়াপ্ত পদার্থের ফরেন্সিক রিপোর্ট সবচেয়ে জরুরি। তদন্তকারীদের সন্দেহ, সম্ভবত নতুন কোনও মাদকের ব্যবহার করেছেন ধৃত চিনারা। অচেনা সেই মাদককে তাই চিহ্নিত করতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। সেই কারণেই ফের তাঁরা আরও কয়েকটি সংস্থায় ওই বাজেয়াপ্ত ট্যাবলেটের নমুনা পাঠিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও রয়েছে আশঙ্কা।

এক তদন্তকারী বলেন, “ফের পরীক্ষায় যে উপাদান পাওয়া যাবে তা আমাদের নিষিদ্ধ মাদকের তালিকায় না থাকলে গোটা মামলাই ভেস্তে যাবে।” সব মিলিয়ে চিনে ‘মাদক’ নিয়ে নাজেহাল গোয়েন্দারা।

Police Drug Party Drug Kolkata Police Railway Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy