Advertisement
E-Paper

বোমার খবরেও রাতভর ঘুম ভাঙল না সিআইডি-র

মঙ্গলবার রাত আটটা নাগাদ পাওয়া গিয়েছিল সন্দেহজনক পাঁচটি কৌটো। হাওড়া স্টেশনে, ফলকনুমা এক্সপ্রেস থেকে। বিশ্ব জুড়ে নাশকতা, একের পর এক বিস্ফোরণ। তাই পান থেকে সামান্য চুন খসলে ঝাঁপিয়ে পড়েন নিরাপত্তারক্ষীরা। এমনটাই স্বাভাবিক। সাধারণ মানুষকেও পাখি পড়ার মতো করে বলা হয়, পরিত্যক্ত কিছু দেখলেই পুলিশকে জানানোর জন্য। কারণ এই দুনিয়ায়, আজকের দিনে যে কোনও পরিত্যক্ত জিনিসই যখন-তখন দুম করে ফেটে যেতে পারে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:১১
হাওড়া স্টেশনে ফলকনুমা এক্সপ্রেস থেকে উদ্ধার হওয়া বোমা সেফটি বক্সে ভরে নিয়ে আসছেন বম্ব স্কোয়াডের কর্মীরা।

হাওড়া স্টেশনে ফলকনুমা এক্সপ্রেস থেকে উদ্ধার হওয়া বোমা সেফটি বক্সে ভরে নিয়ে আসছেন বম্ব স্কোয়াডের কর্মীরা।

মঙ্গলবার রাত আটটা নাগাদ পাওয়া গিয়েছিল সন্দেহজনক পাঁচটি কৌটো। হাওড়া স্টেশনে, ফলকনুমা এক্সপ্রেস থেকে।
বিশ্ব জুড়ে নাশকতা, একের পর এক বিস্ফোরণ। তাই পান থেকে সামান্য চুন খসলে ঝাঁপিয়ে পড়েন নিরাপত্তারক্ষীরা। এমনটাই স্বাভাবিক। সাধারণ মানুষকেও পাখি পড়ার মতো করে বলা হয়, পরিত্যক্ত কিছু দেখলেই পুলিশকে জানানোর জন্য। কারণ এই দুনিয়ায়, আজকের দিনে যে কোনও পরিত্যক্ত জিনিসই যখন-তখন দুম করে ফেটে যেতে পারে।
কিন্তু সকলকে অবাক করে দিয়ে মঙ্গলবার রাতে খবর দেওয়া সত্ত্বেও দেখা পাওয়া গেল না রাজ্যের গোয়েন্দা পুলিশ সিআইডি-র বোমা বিশারদদের। যেমনটা আশা করা গিয়েছিল, খবর পাওয়া মাত্রই সেই রাতে সিআইডি অফিসারেরা পৌঁছে যাবেন, তেমনটা হল না। বিশেষ করে রেলপুলিশের স্নিফার ডগ দিয়ে পরীক্ষা করানোর পরে প্রাথমিক ভাবে যখন মনে হয়েছিল, পাঁচটি কৌটোর ভিতরেই বিস্ফোরক রয়েছে। রাত ৯টা নাগাদ সাহায্য চেয়ে সেই খবরই পাঠানো হয়েছিল সিআইডি-র বম্ব স্কোয়াডকে। কিন্তু কেউ এলেন না রাতে। এলেন খবর দেওয়ার প্রায় ১১ ঘণ্টা পরে, বুধবার সকাল ৮টা নাগাদ।
প্রশ্ন উঠেছে, এর মাঝে তো ফেটেই যেতে পারত ওই বিস্ফোরক? হাওড়া স্টেশনের মতো এত জনবহুল এলাকায় বিস্ফোরণ হলে তার পরিণতি কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারত, তা ভেবে শিউরে উঠেছেন রেলপুলিশের কর্তারাই। কেন তাঁরা খবর পেয়েই মঙ্গলবার রাতে হাওড়া গেলেন না, সিআইডি-র তরফে স্পষ্ট করে তার কোনও কারণও দেখানো হয়নি। এত বড় গাফিলতির কারণ কী? সিআইডি-র কাছে বিশেষজ্ঞ অফিসার নেই, তেমনও নয়। কারণ, বুধবার সকালে একদল অফিসার গিয়ে বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে সেই বিস্ফোরক নিয়ে চলে যান স্টেশন থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে। সেই কর্মকাণ্ডের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে কয়েক ঘণ্টা ট্রেন চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিত্যক্ত স্থানে নিয়ে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ওই কৌটোগুলিকে অকেজো করে দেওয়া হয়। জানানো হয়, ওই কৌটোগুলিতে কোনও শক্তিশালী বিস্ফোরক ছিলও না। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে এত আড়ম্বর কীসের? আর সিল করা কৌটোর ভিতরে শক্তিশালী বিস্ফোরক যে নেই, সে কথা তো সিআইডি জানতে পারে বুধবার সকালে হাওড়ায় পৌঁছনোর পরে। মঙ্গলবার রাতে বাড়িতে বসে সে কথা কী করে বুঝে গেলেন অফিসারেরা? যেখানে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন, সেই জায়গায় পাওয়া সন্দেহজনক কৌটো নিয়ে কেন সিআইডি-র এই অবহেলা? এ প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়নি। বুধবার সন্ধ্যায় ফোন ধরেননি সিআইডি-র কর্তা রাজীব কুমার। এসএমএস-এরও জবাব মেলেনি। ফোন বন্ধ করে দেন সিআইডি-র আর এক অফিসার বিনীত গোয়েল।

ঠিক কী ঘটেছিল মঙ্গলবার? রাত আটটা নাগাদ হাওড়া স্টেশনে আসার পরে ফলকনুমা এক্সপ্রেসের একটি কামরা থেকে দু’টি পরিত্যক্ত ব্যাগ পায় রেলপুলিশ। ব্যাগের ভিতরে ছিল প্রায় ছ’ইঞ্চি ব্যাসাধের্র পাঁচ ইঞ্চি লম্বা পাঁচটি কৌটো। প্রতিটিই বেশ ভারী। রেলপুলিশের নিজস্ব যে বম্ব স্কোয়াড রয়েছে, তা অতটা পারদর্শী নয়। কাজ চালানোর জন্য রাখা আছে। তাদেরই স্নিফার ডগ এসে গন্ধ শুঁকে নিশ্চিত করে বিস্ফোরক থাকার কথা। এর পরেই রাত ন’টায় খবর যায় সিআইডি-র কাছে। কিন্তু, তাঁরা আসেননি। তখন রেলপুলিশের অফিসারেরাই কৌটোগুলি বিস্ফোরণ নিরোধক জ্যাকেটে পুরে ড্রামে করে নিয়ে আসেন এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের এক দিকে। রেলপুলিশ ও আরপিএফের পাহারায় সারারাত ওই জায়গাতেই সেগুলি রাখা হয়।

বুধবার সকালেও আর এক দফা পরীক্ষা করা হয়। তখনও জানানো হয় যে, কৌটোগুলিতে বিস্ফোরক আছে। সকাল আটটা নাগাদ সিআইডি অফিসারেরা আসেন। কিন্তু কোথায় বিস্ফোরক নিিষ্ক্রয় করা হবে, তার জায়গা নির্বাচন করতে কেটে যায় প্রায় দু’ঘণ্টা। শেষে ঠিক হয় কৌটোগুলি নিয়ে যাওয়া হবে স্টেশন থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে ব্রিজ অ্যান্ড রুফ কারখানার পাশে পঞ্জাব লাইনে। এ দিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে রেলের ট্রলিতে করে বম্ব স্কোয়াডের সেফটি বক্সে চাপিয়ে এক-এক করে কৌটোগুলি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নির্জন জায়গায়। সিআইডি-র এ সব কাণ্ড কারখানা দেখতে এলাকায় ভিড় বাড়তে থাকে। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ প্রথম কৌটোয় বিস্ফোরণ করানো হয়। এর পরে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার ব্যবধানে বিস্ফোরণ করা হয় আরও দু’টি কৌটোর। তবে কোনও বিস্ফোরণ বেশি জোরাল ছিল না।

নিরাপদ জায়গায় ফাটানো হচ্ছে সেটি। বুধবার।

হাওড়ার রেলপুলিশ সুপার মেহমুদ আখতার বলেন, ‘‘বম্ব স্কোয়াড ‘ব্লান্ট চার্জার’ দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটায়। তবে তাতে মারাত্মক কোনও বিস্ফোরক ছিল না। ছিল মোরাম, পাথরের টুকরো ও হলুদ রঙের একটি পদার্থ। এ সব কিছুই ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।’’

ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে সিআইডি-র এক অফিসারও বলেন, ‘‘প্রথমে মনে হয়েছিল জিনিসগুলি ল্যান্ডমাইন। কিন্তু পরীক্ষার পরে দেখা গিয়েছে, ওগুলিতে বিস্ফোরক কিছু ছিল না। তাই তিনটি পরীক্ষার পরে বাকি দু’টি পরীক্ষা করা হয়নি।’’ সিআইডি-র এক অফিসারের সাফাই, ‘‘রাতেই জানা গিয়েছিল ওই কৌটোগুলোয় কোনও টাইমার নেই। তাই বিস্ফোরণের ভয় ছিল না। এই কারণে রাতে না এসে সকালেই কাজ শুরু হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, রাতে কাজ শুরু করলে রাতের যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াত। এতে আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হতে পারত।

কিন্তু মঙ্গলবার রাতেই যদি দূর থেকে নিয়ন্ত্রিত রিমোটের সাহায্যে বিস্ফোরণ করানো হত, সে ক্ষেত্রে তার দায় কে নিত? এ প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারেননি সেই সিআইডি অফিসারেরা, যাঁদের শুধু নড়ে বসতেই সময় লেগেছে ১১ ঘণ্টা।

—নিজস্ব চিত্র।

falaknuma express bomb recovery cid west bengal cid cid bomb recovery falaknuma bomb
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy