Advertisement
১১ মে ২০২৪
Durga Puja 2022

পুজোয় কি মিলবে জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা, সংশয়ে নাগরিকেরা

অতীতের পুজোগুলির অভিজ্ঞতা থেকে অনেকেই জানাচ্ছেন, ওই সময়ে সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে বরিষ্ঠ চিকিৎসকদের কার্যত পাওয়া যায় না। জুনিয়রেরাও সংখ্যায় কম থাকেন।

ডেঙ্গি-পরিস্থিতি যে ভাবে জটিল হচ্ছে, তাতে ভীত আমজনতা।

ডেঙ্গি-পরিস্থিতি যে ভাবে জটিল হচ্ছে, তাতে ভীত আমজনতা। ফাইল ছবি

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২২ ০৬:২৭
Share: Save:

রাজ্যে প্রতিদিনই লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ দিকে, শুরু হয়েছে পুজোর মরসুম। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, ছুটির আমেজে হাসপাতালে সময়মতো চিকিৎসক মিলবে তো? না কি চিকিৎসকের অপেক্ষায় থাকতে হবে ডেঙ্গি আক্রান্ত সঙ্কটজনক রোগীকেও?

অতীতের পুজোগুলির অভিজ্ঞতা থেকে অনেকেই জানাচ্ছেন, ওই সময়ে সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে বরিষ্ঠ চিকিৎসকদের কার্যত পাওয়া যায় না। জুনিয়রেরাও সংখ্যায় কম থাকেন। ফলে পরিষেবা পেতে ভোগান্তি হয়। গত দু’বছরের পরে এ বার করোনার ততটা প্রকোপ না থাকায় অনেকেই পুজোর ছুটিতে বেড়াতে যাচ্ছেন। কিন্তু ডেঙ্গি-পরিস্থিতি যে ভাবে জটিল হচ্ছে, তাতে ভীত আমজনতা। তাঁদের সংশয়, পুজোর চার দিন আচমকাই পরিস্থিতি আরও জটিল হলে তা সামলানোর মতো পরিকাঠামো থাকবে তো?

যদিও রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে স্বাস্থ্য দফতর দাবি করেছে, এ বছর পুজোয় স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কর্মক্ষেত্র ছেড়ে না যাওয়ার বিষয়ে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। ব্লক থেকে মেডিক্যাল কলেজ স্তরের হাসপাতালে চিকিৎসকদের ডিউটি রস্টার তৈরি করে পরিষেবার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলির কর্তারাও দাবি করছেন, ডেঙ্গি রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট চিকিৎসক রাখা হচ্ছে। কিন্তু এই সব দাবির প্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষও কিছু প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের অভিযোগ, এমন ব্যবস্থাপনার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা মেলে না। তখন চিকিৎসা পরিষেবা পেতে চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হতে হয়। রাজ্যে ডেঙ্গি পরিস্থিতি ক্রমশ উদ্বেগজনক হয়ে ওঠায় নাগরিকদের প্রশ্ন, সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে তাঁরা যদি পরিষেবা না পান, তা হলে কাকে, কোথায় জানাবেন? এর জন্য স্বাস্থ্য দফতর কি নির্দিষ্ট হেল্পলাইন চালু করছে?

স্বাস্থ্য-অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগীর কথায়, ‘‘পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই পুজোয় স্পষ্ট নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে, যাতে রোগীরা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হন।’’ তিনি জানাচ্ছেন, নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, হাসপাতালের সুপার, সহকারী ও ডেপুটি সুপার এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের পরিষেবা সচল রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। মশাবাহিত রোগ এবং অন্য রোগের জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা করা এবং আউটডোর, ইন্ডোর সচল রাখতে চিকিৎসক থেকে শুরু করে অন্যান্য কর্মী যাতে পর্যাপ্ত থাকেন, তার জন্য রস্টার বানাতে হবে। আধিকারিক থেকে স্বাস্থ্যকর্মী, সকলের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা যাতে ফোনে যোগাযোগ করা যায়, সে দিকেও লক্ষ রাখতে হবে।

কিন্তু তার পরেও পুজোয় যদি পরিষেবা না মেলে? সিদ্ধার্থ বলেন, ‘‘অভিযোগ পেলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সং‌শ্লিষ্ট সুপার, সহকারী সুপার, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের পুরো দায়িত্ব নিতে হবে।’’ করোনার জন্য যে কন্ট্রোল রুম চালু হয়েছিল, সমস্যা হলে সেই নম্বরে বা জেলার কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগের কথাও বলেন স্বাস্থ্য-অধিকর্তা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সপ্তমী ও অষ্টমীতে সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগ বন্ধ থাকবে। সপ্তমী রবিবার, ওই দিন এমনিতেই বহির্বিভাগ বন্ধ থাকে। আর প্রতি বছরই অষ্টমীতে ওই পরিষেবা বন্ধ থাকে। তবে অন্যান্য দিন তা চলবে। কিন্তু জরুরি বিভাগ ও ইন্ডোর রোজই চালু থাকবে।

একই সুর বেসরকারি হাসপাতালগুলিরও। পিয়ারলেস হাসপাতালের তরফে চিকিৎসক সুদীপ্ত মিত্র বলেন, ‘‘ডেঙ্গির চিকিৎসায় সাধারণত মেডিসিনের চিকিৎসক প্রয়োজন। তাঁরা প্রায় সকলেই থাকছেন। জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে সব পরিষেবাই চালু থাকবে। তাই সমস্যা হবে না।’’ আমরি হাসপাতাল গোষ্ঠীর তরফে জানানো হচ্ছে, ডেঙ্গির কথা ভেবেই চিকিৎসকদের ডিউটি রস্টার বানানো হয়েছে। যাতে পুজোর প্রতিটি দিনই কোনও না কোনও বরিষ্ঠ চিকিৎসককে পাওয়া যায়।

রাত পর্যন্ত বহির্বিভাগ চালু না থাকলেও, রোজ দুপুর পর্যন্ত সেই পরিষেবা মিলবে বলে জানাচ্ছেন ডিসান হাসপাতালের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর তাপস মুখোপাধ্যায়।

তবে এত প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন কতটা হবে, তা নিয়ে জনগণের কিন্তু সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2022 Hospitals
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE