Advertisement
E-Paper

দূষণ-দৌড়ে প্রথম এ বারের দীপাবলি

পর্ষদ সূত্রের খবর, গত রবিবার রবীন্দ্রভারতী এলাকায় রাত ১০টায় পিএম ১০-এর পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৭৩.৪২ মাইক্রোগ্রাম

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৮ ০১:২৩
আচ্ছন্ন: শহর ঢেকেছে বাজির দূষিত ধোঁয়ায়। বুধবার রাতে উল্টোডাঙা উড়ালপুল। ছবি: শৌভিক দে

আচ্ছন্ন: শহর ঢেকেছে বাজির দূষিত ধোঁয়ায়। বুধবার রাতে উল্টোডাঙা উড়ালপুল। ছবি: শৌভিক দে

সহন-মাত্রার থেকেও ১৭ গুণ বেশি!

বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার (পিএম ১০) ঘনত্বের নিরিখে এ বছর পিছনে ফেলে দিল অন্য সব বছরকে। আতসবাজি ও শব্দবাজির হাত ধরে এ বারের দীপাবলির রাতে যে পরিমাণ দূষণ ছড়িয়েছে,

সাম্প্রতিক অতীতে তেমনটা দেখা যায়নি বলেই জানাচ্ছেন পরিবেশবিদ ও গবেষকদের একাংশ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও বাজির এই বেলাগাম তাণ্ডব দেখে বিস্মিত অনেকেই। বাজির দাপট রুখতে পুলিশ-প্রশাসনের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন: সঙ্কট নেই মিউচুয়াল ফান্ডে, লগ্নিকারীদের আশ্বাস কর্তৃপক্ষের

যদিও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, শীতকালে এমনিতেই তাপমাত্রার ক্ষেত্রে একটা পরিবর্তন হয়। বাতাসের গতি বেশি থাকে না। সামান্য ধোঁয়া হলেই তা ভূপৃষ্ঠের উপরে জমতে থাকে। ফলে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার বৃদ্ধি পাওয়ার পিছনে শুধু যে বাজি পোড়ানোই দায়ী, তা নয়। ‘ইনভার্শন লেয়ার’-এর মতো প্রাকৃতিক অন্য কারণও রয়েছে।

যার ফলে বাজির ধোঁয়া উপরে উঠতে পারে না। একটা চাদরের মতো ছড়িয়ে থাকে শহরের উপরে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাসও বললেন, ‘‘তাপমাত্রা নামতে থাকলে এমনিতেই দূষণের হার বৃদ্ধি পায়।’’

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, বুধবার রাত ১২টায় বি টি রোডে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রতি ঘনমিটারে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ ছিল ১৭২৭ মাইক্রোগ্রাম। রাত ১টায় কিছুটা নেমে সেই পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫৯৩ মাইক্রোগ্রামে। রাত ২টোয় তা আরও কমে হয় ১২২৬.৭ মাইক্রোগ্রাম।

আর ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে বসানো যন্ত্র বলছে, ওই এলাকায় রাত ১২টায় পিএম ১০-এর মাত্রা ছিল ৬২৩.৪৯। রাত ১টা ও রাত ২টোয় ওই মাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৮৭১.৬১ ও ৮৯৫ মাইক্রোগ্রামে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার সহন-মাত্রা হল প্রতি ঘনমিটারে ১০০ মাইক্রোগ্রাম। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মাপকাঠি অনুযায়ী এই মাত্রা ২০০, ৩০০ ও ৪০০ ছ়াড়ালেই পরিস্থিতি যথাক্রমে ‘খারাপ’, ‘খুব খারাপ’ ও ‘বিপজ্জনক’ বলা হয়ে থাকে। সেখানে স্বাভাবিক মাত্রার থেকে ১৭ গুণ বেশি কবে হয়েছিল, তা মনে করতে পারছেন না রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তাদের একাংশ।পর্ষদের তথ্য বলছে, চার বছর আগে এক বার কালীপুজোর রাতে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার

পরিমাণ হাজার পেরিয়ে গিয়েছিল। সেটা ছিল ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর। কালীপুজোর মধ্যরাতে (রাত ১২টা) রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ ছিল ১৩২০.২৫। রাত ১টায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪১১.৮৫ মাইক্রোগ্রাম। সাম্প্রতিক কালে সেটাই সব থেকে ‘দূষিত’ কালীপুজোর রাত ছিল বলে জানাচ্ছেন পর্ষদ-কর্তারা।

কালীপুজো-দীপাবলির সময়ে কী ভাবে শহরের বাতাস দূষিত হয়, তা নিয়ে গবেষণা করেছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিডিয়াম রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্টিং’ (এনসিএমআরডব্লিউএফ)-এর প্রোজেক্ট বিজ্ঞানী (সি) উপল সাহা। ২০০৫ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে কালীপুজো-দীপাবলির সময়ে করা তাঁর সেই গবেষণা প্রতিষ্ঠিত জার্নালেও প্রকাশিত হয়েছে। উপলবাবু বলেন, ‘‘বাজি পোড়ানোর জেরে শুধু দূষণই যে বাড়ে তা নয়, দীপাবলির রাতের তাপমাত্রাও বাড়িয়ে দেয় এই বাজি।’’

কালীপুজো-দীপাবলির সময়ে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার হার বৃদ্ধি যে বাজির দূষণের কারণেই হয়, তার পক্ষে তথ্যও দিচ্ছেন গবেষকদের একাংশ। যেমন, ২০১৪ সালে কালীপুজোর পাঁচ দিন আগে, অর্থাৎ ১৮ অক্টোবর রবীন্দ্রভারতী এলাকায় রাত ১১টায় পিএম ১০-এর পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ২২২.২ মাইক্রোগ্রাম। আবার কালীপুজোর দু’দিন আগে, ২১ অক্টোবর রাত ১১টায় ওই একই এলাকায় সেই পরিমাণ ছিল ২৬৬.২৫ মাইক্রোগ্রাম। কিন্তু কালীপুজোর রাতে সেটাই

সহন-মাত্রার থেকে ১৩ গুণ বেড়ে যায়! পর্ষদের এক কর্তার কথায়, ‘‘ওই বছর রাজ্যে বাজির শব্দমাত্রা কত হবে, তা নিয়ে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। যে কারণে দেদার শব্দবাজি-আতসবাজি ফাটানো হয়েছিল।’’

যেমনটা এ বছরও হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। শব্দবাজির উপরে বিধিনিষেধ থাকায় সাধারণ ক্রেতাদের একাংশ আতসবাজির দিকে ঝুঁকেছেন বলে জানাচ্ছেন বাজি ব্যবসায়ীরা। টালা পার্ক বাজি বাজারের উদ্যোক্তা সঞ্জয় দত্ত বললেন, ‘‘সাধারণ মানুষ আতসবাজিই বেশি কিনেছেন।’’

তারই ফল দেখা গিয়েছে শহরের বাতাসে। পর্ষদ সূত্রের খবর, গত রবিবার রবীন্দ্রভারতী এলাকায় রাত ১০টায় পিএম ১০-এর পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৭৩.৪২ মাইক্রোগ্রাম। ওই একই সময়ে পিএম ২.৫-এর মাত্রা ছিল ৩১.৭১ মাইক্রোগ্রাম। আবার ওই দিনই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এলাকায় রাত ১০টায় পিএম ১০-এর পরিমাণ ছিল ৫৬.৭১ মাইক্রোগ্রাম এবং পিএম ২.৫-এর পরিমাণ ছিল ৩০.৯ মাইক্রোগ্রাম। কিন্তু তার এক দিন পরেই মঙ্গলবার, কালীপুজোর মধ্যরাতে (রাত ১২টা) ওই মাত্রা রবীন্দ্রভারতী এলাকায় ৫৩৭ ও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এলাকায় ৬০৯.৮৬ মাইক্রোগ্রামে দাঁড়ায়। আর সব মাত্রা ছাড়িয়ে যায় দীপাবলিতে! পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘এক দিকে সাধারণ মানুষের একাংশ সচেতন নন। অন্য দিকে, পুলিশ-প্রশাসন পুরোপুরি ব্যর্থ! সে কারণেই শহরের বাতাসে এই বিষ!’’

Environment Pollution Sound Pollution Air Pollution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy