দালালদের দাপট তো রয়েছেই। সেই সঙ্গে নানা কারণে ক্ষোভ-বিক্ষোভের ঘটনাও লেগেই থাকে। যার জেরে বিঘ্নিত হয় সরকারি হাসপাতালের নিরাপত্তা।
এই সমস্যার সমাধানে এ বার সিসি ক্যামেরা ও সাদা পোশাকের রক্ষীদের উপরেই আরও বেশি করে নির্ভর করতে চাইছে স্বাস্থ্য দফতর। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্যামেরা ও রক্ষী— দুইয়ের সংখ্যাই বাড়ানো হবে। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানান, দালালদের উপরে নজরদারি চালানোর পাশাপাশি হাসপাতালে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হলেও এ বার সেখানে হাজির হয়ে যাবেন সাদা পোশাকের রক্ষীরা। প্রয়োজনে তাঁরাই খবর দেবেন স্থানীয় থানায়। এই পুরো ঘটনারই সাক্ষী থাকবে সিসি ক্যামেরা।
তৃণমূলের জমানায় সমস্ত রোগীর জন্য সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা ‘ফ্রি’ হয়ে যাওয়ায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে৷ সেই সঙ্গেই বেড়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। এর পাশাপাশি গাফিলতি বা অবহেলার অভিযোগ তুলে মাঝেমধ্যেই হাসপাতালে ভাঙচুরের মতো ঘটনাও ঘটছে। তাই এক দিকে রোগী-পরিষেবা উন্নত করা যেমন জরুরি, তেমনই হাসপাতালের নিরাপত্তার দিকেও জোর দেওয়া দরকার বলে মনে করছে প্রশাসন।
এসএসকেএম, বিআইএন, কলকাতা মে়ডিক্যাল কলেজের মতো একাধিক সরকারি হাসপাতালেই দালালের দাপট লাগামছা়ড়া। রোগীকে ভর্তি করিয়ে দিতে দালালেরা ইচ্ছেমতো টাকা চায়। কখনও কখনও সেই অঙ্কটা সাত-আট হাজারেও উঠে যায়। কোথাও আবার ভর্তির পরে সময়মতো অস্ত্রোপচার করিয়ে দিতে কয়েক লক্ষ টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগও উঠেছে হাসপাতালের কর্মীর বিরুদ্ধে। এই সমস্যা দূর করতে সাদা পোশাকের রক্ষী ও সিসি ক্যামেরাই এখন ভরসা কর্তৃপক্ষের।
এসএসকেএম হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে ৩৫০টি সিসি ক্যামেরা বসেছে। বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস-এ বসেছে ১৭টি। আগে এসএসকেএম চত্বরে ৬০ জন পুলিশকর্মী নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকতেন। সেই সংখ্যাটি বেড়ে হয়েছে ৭৪। আরও ২৫ জনকে সেখানে আনা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
এসএসকেএমের ধাঁচে অন্যান্য সরকারি হাসপাতালেও পুলিশের সঙ্গে যৌথ ভাবে রক্ষী নিয়োগ শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতর। যাঁদের নিয়োগ করা হবে, তাঁদের প্রাথমিক তালিকাও তৈরি। ওই তালিকা থেকে রক্ষীদের নির্বাচন করবে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, নিরাপত্তার বিষয়টি যে হেতু তারাই সব চেয়ে ভাল বোঝে, তাই স্বাস্থ্য দফতরের তরফে পাঠানো আবেদনকারীদের তালিকা খতিয়ে দেখে পুলিশই যোগ্যদের বাছাই করছে। চুক্তি-ভিত্তিক এই রক্ষীদের মাসে ১১ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হবে৷ যা রাজ্য সরকার মঞ্জুর করেছে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, চুক্তি হবে এক বছরের জন্য।
হাসপাতালে অতিরিক্ত রক্ষী নিয়োগ প্রসঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রোগী-পরিষেবাকে মসৃণ করতে রক্ষীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। দ্রুত গোটা প্রক্রিয়া শেষ করার চেষ্টা চলছে।’’