Advertisement
E-Paper

পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন ‘বিকোল’ দু’হাজারে

অভিভাবকদের অভিযোগ, বারবার ফাঁস হয়ে যাচ্ছে একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। তাঁদের কাছে এ দিনের হিসাবশাস্ত্রের পরীক্ষার প্রশ্নও আগে থেকেই চলে এসেছে। সে প্রশ্ন শুধু ফাঁসই হয়নি, পাড়ায় পাড়ায় তা দু’হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে বলেও অভিযোগ তুললেন অভিভাবকেরা। প্রশ্নের তেমনই একটি ফোটোকপি তাঁদের হাতে এসেছে।

মধুমিতা দত্ত ও আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৯ ০২:৪৫
 প্রিন্সিপালকে ঘিরে অভিভাবকেরা। সোমবার, অ্যালবানি হল পাবলিক স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

প্রিন্সিপালকে ঘিরে অভিভাবকেরা। সোমবার, অ্যালবানি হল পাবলিক স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

সকাল দশটা চল্লিশ। অভিভাবকদের একটি দল ঢুকলেন স্কুলে। একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে ওঠার হিসাবশাস্ত্রের পরীক্ষা শুরু হবে সোমবার দশটা পঁয়তাল্লিশ থেকে। তার আগেই প্রিন্সিপালের ঘরে জড়ো হয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন তাঁরা। পরীক্ষা শুরু হওয়া মাত্র তাঁদেরই এক জন স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অনুরোধ করলেন, প্রশ্নপত্রটা তখনই দেখাতে হবে অভিভাবকদের সেই দলকে।

কিন্তু প্রশ্নপত্র কেন দেখাবেন প্রিন্সিপাল? উড়ে এল প্রশ্ন।

অভিভাবকদের অভিযোগ, বারবার ফাঁস হয়ে যাচ্ছে একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। তাঁদের কাছে এ দিনের হিসাবশাস্ত্রের পরীক্ষার প্রশ্নও আগে থেকেই চলে এসেছে। সে প্রশ্ন শুধু ফাঁসই হয়নি, পাড়ায় পাড়ায় তা দু’হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে বলেও অভিযোগ তুললেন অভিভাবকেরা। প্রশ্নের তেমনই একটি ফোটোকপি তাঁদের হাতে এসেছে। তা নিয়েই অভিভাবকদের সেই দল হাজির হয়েছে স্কুল। তাঁদের সঙ্গে থাকা সেই প্রশ্নপত্র এ দিনের পরীক্ষার প্রশ্নের সঙ্গে সত্যিই মিলে গিয়েছে কি না, সেটাই দেখতে দল বেঁধে এসেছেন তাঁরা।

ঘটনাস্থল বেনিয়াপুকুর এলাকায় আইসিএসই বোর্ডের অধীনস্থ অ্যালবানি হল পাবলিক স্কুল।

আরও পড়ুন: স্বচ্ছতা চাই, পুর দরপত্র বদলে গেল ‘মেনু কার্ডে’!

গুরুতর এই অভিযোগ শুনে সঙ্গে সঙ্গে হিসাবশাস্ত্রের শিক্ষকদের ডেকে পাঠান প্রিন্সিপাল। সঙ্গে নিয়ে আসতে বলেন এ দিনের প্রশ্নপত্রও। শিক্ষকেরা সেই প্রশ্ন নিয়ে ছুটে আসেন। শিক্ষকেরা এলে প্রিন্সিপালের ঘরের টেবিলে পাশাপাশি রাখা হয় হিসাবশাস্ত্রের দু’টি প্রশ্নপত্র। একটি এনেছেন শিক্ষকেরা। সেটি স্কুলের প্রশ্ন। তত ক্ষণে তার উত্তর লিখতে শুরু করেছে পড়ুয়ারা। অন্যটি অভিভাবকদের আনা, ‘ফাঁস’ হয়ে যাওয়া প্রশ্নপত্রের ফোটোকপি। শিক্ষকেরা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন দু’টি প্রশ্নপত্র মিলিয়ে দেখতে। সবটা খুঁটিয়ে দেখে শিক্ষকেরা হতবাক। তাঁরা দেখেন, দু’টি প্রশ্নপত্র হুবহু মিলে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: ৩৭০০ কিমি পেরিয়ে পৌঁছল কলকাতা এসে পৌঁছল এসি মেট্রোর নয়া রেক

স্কুলের ‘পেরেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’-এর প্রেসিডেন্ট শেখ আসাদুল্লার অভিযোগ, শুধু এ বারই নয়, গত তিন বছর ধরে এই স্কুলে প্রশ্নপত্র বেরিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠছে। কিন্তু হাতেনাতে কোনও প্রমাণ জোগাড় করতে পারেননি তাঁরা। আসাদুল্লা বলেন, ‘‘এ বার পরীক্ষা শুরু হওয়ার দু’দিন আগে এই প্রশ্নের ফোটোকপি আমরা হাতে পাই। তার পরেই সকলে মিলে ঠিক করি, প্রশ্ন সত্যিই মিলেছে কি না, তা দেখতে সরাসরি স্কুলে আসব।’’

অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুলেরই শিক্ষকদের একটি অংশ এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে যুক্ত। তারবেজ হাসান নামে এক অভিভাবক প্রশ্ন তোলেন, ‘‘একাদশ শ্রেণির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র বেরোচ্ছে কী ভাবে?’’ অভিযোগ, প্রিন্সিপালের হেফাজত থেকেই এই প্রশ্ন বেরিয়ে যাচ্ছে। যদিও স্কুলের প্রিন্সিপাল টরেন্স জনের দাবি, প্রশ্নপত্র তাঁর হেফাজতে থাকে না। তিনি বলেন, ‘‘কী ভাবে এটা ঘটল, তা আমরা তদন্ত করে দেখব। এখনই এই পরীক্ষা বাতিল করতে চাইছি না। দু’টি প্রশ্ন ভাল করে মিলিয়ে দেখা হবে। দরকার হলে ফের একাদশ শ্রেণির হিসাবশাস্ত্রের পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করব আমরা।’’ এ দিন খবর পেয়ে বেনিয়াপুকুর থানার পুলিশ স্কুলে যায়। স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ।

আইসিএসই বোর্ডের সচিব ও সিইও জেরি অ্যারাথুন সব শুনে এ দিন বলেন, ‘‘একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা স্কুল নেয়। তাই বিষয়টি দেখবেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। আমরা হস্তক্ষেপ করব না।’’

Albany Hall Public School Accountancy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy