Advertisement
E-Paper

পেসো থেকে বনানা, সবই আছে

ওএনজিসি-র প্রাক্তন কর্মী অনিন্দ্যবাবু বাবার ট্রাঙ্কে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার নোট দেখে বিদেশি মুদ্রা সংগ্রহ শুরু করেন। এই মুহূর্তে বিভিন্ন দেশের মোট ২১৫টি মুদ্রা আর নোট রয়েছে তাঁর কাছে।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৮ ০২:৫৭
সম্ভার: দেশ-বিদেশের মুদ্রা নিয়ে কর দম্পতি। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

সম্ভার: দেশ-বিদেশের মুদ্রা নিয়ে কর দম্পতি। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

তাঁর আবেগ গোটা বিশ্ব জানে। ফুটবলে বিশ্বকে শাসন করলেও ইংরেজি শেখেননি স্রেফ মন চায়নি বলে। চলতি বিশ্বকাপে ওই মনের ডাকেই শত তামাক বিরোধী অভিযানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মাঠে বসেই চুরুট টেনেছেন মিনিটে মিনিটে। সেই দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা ফ্র্যাঙ্কোর আবেগ টের পাওয়া গিয়েছিল তাঁর গত ভারত সফরের সময়ে। গোঁ ধরেছিলেন, ভারতে গেলে আর্জেন্তিনো পেসোই সঙ্গে নিয়ে যাবেন। তাতে কাজ চলুক আর না চলুক। কী ভাবে, কী হবে তা বুঝুক সে দেশের প্রশাসন এবং অনুষ্ঠান উপস্থাপকেরা!

সে যাত্রায় তাঁকে কোনও মতে বোঝানো গিয়েছিল। পেসো সঙ্গে আনার জেদ ছেড়েছিলেন মারাদোনা। বিশ্বকাপের বাজারে যাদবপুরের বাড়িতে বসে নিজের দেশের টাকা নিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলারদের এ রকম আবেগের গল্প শোনাচ্ছিলেন অনিন্দ্য কর। বললেন, ‘‘মুদ্রা ঘিরে এক একটা দেশের ইতিহাস রয়েছে। তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মতোই আবেগ থাকে সে দেশের খেলোয়াড়দেরও। ওই ইতিহাসের কিছুটা রাখা আমার কাছেও।’’

ওএনজিসি-র প্রাক্তন কর্মী অনিন্দ্যবাবু বাবার ট্রাঙ্কে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার নোট দেখে বিদেশি মুদ্রা সংগ্রহ শুরু করেন। এই মুহূর্তে বিভিন্ন দেশের মোট ২১৫টি মুদ্রা আর নোট রয়েছে তাঁর কাছে। যার মধ্যে চলতি ফুটবল বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ৩২টি দেশের নোটও রয়েছে। কিছু নোটের বয়স ১০০ বছরেরও বেশি।

পুরনো নোটের গল্প শোনাতে গিয়ে বললেন, ‘‘সে দিন পোল্যান্ডের সঙ্গে দারুণ খেলল সেনেগাল। কিন্তু ওদের দেশের নোট নিয়ে খুব বিভ্রান্তিতে পড়েছিলাম। দেখি সেনেগালের যে নোট, আইভোরি কোস্ট, মালি কিংবা নাইজার বা বেনিনের নোটও তা-ই!’’ আসলে এরা প্রত্যেকেই ওয়েস্ট আফ্রিকান সিএফএ ফ্র্যাঙ্ক ব্যবহার করে। নোটগুলি দেখতে এক। চেনার উপায়? অনিন্দ্যবাবু বললেন, ‘‘প্রত্যেক দেশের নোটে আলাদা অক্ষর রয়েছে। সেনেগালের নোটে ইংরেজি ‘কে’ অক্ষর, বেনিন, মালি এবং নাইজারের নোটে যথাক্রমে ‘বি’, ‘ডি’, ‘এইচ’ লেখা।’’

মরিশাস, ব্রাজিল এবং আইসল্যান্ডের মুদ্রা।

গল্পে গল্পে জানালেন, ১৯৪২ সালে জাপান কলার কাঁদি আঁকা ডলার নিয়ে এল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে নিজেদের অধিকৃত সিঙ্গাপুর লাগোয়া মালায়াতে ‘বনানা মানি’ চালু করে জাপান। তা-ও আবার ডলারে। ‘‘নিজেদের ইয়েন ছেড়ে কেন ডলার! আর তাতে কেন কলার কাঁদির ছবি, সেই ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।’’ বলছিলেন অনিন্দ্যবাবু।

তাঁর সংগ্রহে রয়েছে বিতর্কিত নোটও। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডে এক ধরনের পলিমার নোট নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। তাতে নাকি অ্যানিম্যাল ফ্যাট ছিল। আন্দোলনে নামেন ভিগানরা। পাঁচ পাউন্ডের সেই নোট রয়েছে তাঁর কাছে। আছে ইংল্যান্ডের দাবি করা সব চেয়ে নিরাপদ নোটও। ১০ পাউন্ডের সেই নোট নাকি নকল করা অসম্ভব। ব্রাজিল নিজেদের ‘রিয়েল’-এ বিভিন্ন জীবের ছবি বসায়। তা-ও রয়েছে।

ইতিহাসবিদ সুগত বসুর মতে, ‘‘একটি দেশের মুদ্রার সঙ্গে তার ইতিহাস জড়িয়ে থাকে। এক একটি মুদ্রা আদতে সেই দেশের সার্বভৌমত্ব ব্যক্ত করে। সেই ইতিহাসকে ধরে রাখা এক প্রশংসনীয় উদ্যোগ।’’

তবে এই নোটের নেশায় তাঁকে ভুগতেও হয়েছে অনেক। জানালেন, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ ফারো আইসল্যান্ডের নোট পেতে জার্মানিতে কর্মরত ছেলের সঙ্গে কিছু দিন ছোট্ট দ্বীপ রাষ্ট্রে পড়ে থাকতে হয়েছে তাঁকে। শেষে যে মূল্যের নোট পেয়েছেন, তাঁর থেকে গচ্ছা গিয়েছে অনেক বেশি টাকা। বলছেন, ‘‘আবেগের কাছে এমন খরচের পিছুটান পাত্তা পায় না।’’

নিজেদের হারিয়ে যাওয়া নোট নিয়ে পর্তুগালের তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোরও আবেগ আছে কি না, তা জানতে চান অনিন্দ্যবাবু। একবিংশ শতকের শুরুতে নিজেদের নোট ছেড়ে ইউরো ব্যবহার শুরু করে স্পেন, পর্তুগাল এবং ফ্রান্সের মতো বিশ্বকাপ খেলা ইউরোপীয় দেশগুলি। মৃত্যু হয় স্পেনের পেসেতা, পর্তুগালের এসকুডস, ফ্রান্সের ফ্রাঙ্কের। বললেন, ‘‘শুনেছি পর্তুগালের রোনাল্ডো খেলে পাওয়া এসকুডোস (পর্তুগিজ মুদ্রা) দিয়ে মায়ের জন্য প্রথম উপহার কিনেছিলেন। নিজেদের সেই নোট মিস করেন রোনাল্ডো! খুব জানতে ইচ্ছে করে।’’

Current currency Foreign Currency Kolkata's couple Anindya Kar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy