পোস্তার নির্মীয়মাণ বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভেঙে পড়ার কারণ খুঁজতে পাঁচ সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল গঠন করল ‘রেল ইন্ডিয়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনমিক সার্ভিস’(রাইট্স)। পুলিশ সূত্রের খবর, দলে আছেন রাইট্সের কলকাতার তিন বিশেষজ্ঞ। বাকি দু’জন রাইট্সের গুড়গাঁও অফিসের। আগামী সপ্তাহের গোড়ায় ওই বিশেষজ্ঞ দলটির কলকাতায় এসে ভেঙে পড়া উড়ালপুলের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার কথা।
গত ৩১ মার্চ বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভেঙে ২৬ জনের মৃত্যু হয়। তদন্তে নেমে নির্মাণকারী সংস্থার (আইভিআরসিএল) ইঞ্জিনিয়ার এবং কর্তা-সহ ১০ জনকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। পুলিশের তরফে আদালতে আবেদন করা হয়েছিল, নিজেদের বিশেষজ্ঞ না থাকায় ওই বিপর্যয়ের কারণ খুঁজতে ‘রাইট্স’ তাদের মতামত দিয়ে তদন্তে সহযোগিতা করুক। তার ভিত্তিতে আদলত রাইট্সকে তদন্তে সব রকম সহয়তা করার নির্দেশ দেয়। এর পরেই রাইট্সের তরফে স্থানীয় একটি দল ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে। সূত্রের খবর, সেই দলটি রিপোর্ট দেয় রাইট্সের শীর্ষকর্তাদের। তার পরেই রাইট্সের তরফে লালবাজারকে পাঁচ সদস্যের এই দল গঠন করার কথা জানানো হয়।
উড়ালপুল ভেঙে পড়ার ঘটনায় রাজ্য সরকারের নির্দেশে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে গড়া কমিটিতে আছেন খড়্গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞরা। গোয়েন্দাদের দাবি, বিপর্যয়ের পুলিশি তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতেই রাইট্সের মতো বিশেষজ্ঞ সংস্থার সাহায্য চেয়েছেন তাঁরা। কলকাতা পুলিশের তদন্তকারী দলের এক অফিসারের কথায়, ‘‘এখনও নিশ্চিত করা যায়নি, কোন বিভাগের গাফিলতির জন্য উড়ালপুল ভেঙেছে। সে বিষয়ে দিশা পেতেই রাইট্সকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সংস্থার ওই বিশেষ দলে স্ট্রাকচারাল, সিভিল, মেকানিক্যাল, কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষজ্ঞরা আছেন। তাঁরা এলাকা ঘুরে সব খতিয়ে দেখে নিজেদের মত জানাবেন।’’
লালবাজার সূত্রে খবর, উড়ালপুলের ভেঙে পড়া ৪০ নম্বর স্তম্ভ থেকে শুক্রবার লোহার অংশ সংগ্রহ করেন তদন্তকারীরা। তা পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, নির্মাতা সংস্থার তরফে দাবি করা হয়, উড়ালপুল নির্মাণের জন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার থেকে সরাসরি লোহা কিনেছিলেন তাঁরা। সেই লোহা দিয়েই ওই অংশটি তৈরি হয়েছিল কি না, তা জানতেই এই নমুনা সংগ্রহ বলে লালবাজার সূত্রে খবর।
নবান্ন সূত্রে খবর, ওই বিপর্যয়ের পরে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে গড়া উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির হাতে উড়ালপুলের নকশা তুলে দিতে পারেনি কেএমডিএ বা নির্মাণকারী সংস্থা। নবান্নের খবর, ভেঙে পড়া উড়ালপুলের কয়েকটি স্তম্ভের অনুমোদিত নকশা খুঁটিয়ে পরীক্ষা করতে চান খড়্গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞরা। তাই সেতুর নকশা দেখা প্রয়োজন। নকশা হাতে পেলেই তা নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরীক্ষা করে দেখবেন বিশেষজ্ঞরা।
তদন্তকারীরা আরও জানান, উড়ালপুলের নির্মাতা সংস্থা আইভিআরসিএল-এর শীর্ষকর্তা অশোক রেড্ডির বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছে আদালত। সেই হুলিয়া নিয়ে চলতি সপ্তাহেই হায়দরাবাদ যাওয়ার কথা তাঁদের। গোয়েন্দাদের দাবি, অশোক রেড্ডি আইভিআরসিএল-এর ডিরেক্টর (অপারেশন্স)। সেই সুবাদে সংস্থার পরিচালন বোর্ডের তরফে বিবেকানন্দ উড়ালপুলের নির্মাণকাজ দেখভালের মূল দায়িত্ব ছিল তাঁর উপরে। সপ্তাহখানেক আগে অশোক রেড্ডি-সহ সংস্থার বোর্ড অব ডিরেক্টর্সের সব সদস্যের খোঁজে হায়দরাবাদে হানা দেন তদন্তকারীরা। কিন্তু কারও খোঁজ মেলেনি। এর পরেই কলকাতায় ফিরে গোয়েন্দারা অশোক রেড্ডির বিরুদ্ধে আদালতে হুলিয়া জারির আবেদন করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy