Advertisement
E-Paper

কার দেওয়ালে রং দেবে কে, শুরু লড়াই

রাজ্যে ভোটের হাওয়া লাগতেই শহর থেকে শহরতলির সর্বত্রই বাড়ির দেওয়াল ‘সেজে’ ওঠার ছবিটা একই রকমের।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৯ ০৩:১৫
বেহাত: বাড়ির দেওয়ালই যখন ক্যানভাস। বারুইপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের দেওয়াল লিখন। নিজস্ব চিত্র

বেহাত: বাড়ির দেওয়ালই যখন ক্যানভাস। বারুইপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের দেওয়াল লিখন। নিজস্ব চিত্র

মাস কয়েক আগেই নিজের দোতলা বাড়ির রং করিয়েছিলেন উত্তর কলকাতার এক ব্যবসায়ী। কিন্তু দিন কয়েক আগে ঘুম থেকে উঠে তিনি দেখলেন, বাড়ির পাঁচিলের রং বদলে গিয়েছে। সাদা চুনকাম করা দেওয়ালটা তত ক্ষণে কোনও এক রাজনৈতিক দলের ‘দখল’-এ!

বাড়ির দেওয়াল নতুন রঙে সেজে ওঠার বিষয়ে কিছু বলতে না চাইলেও কয়েক হাজার টাকার রঙে যে কয়েক ফোঁটা চোনা পড়েছে, এটা মানছেন ওই ব্যক্তি। রাজ্যে ভোটের হাওয়া লাগতেই শহর থেকে শহরতলির সর্বত্রই বাড়ির দেওয়াল ‘সেজে’ ওঠার ছবিটা একই রকমের। কোথাও নতুন রং করা বাড়ির দেওয়ালে সাদা চুনের প্রলেপ দিয়ে এক কোণে রাজনৈতিক দলের নাম লিখে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটা কারা দখল করলেন। কোথাও আবার রাতারাতি চুনকাম সেরে সেখানে লেখা হয়ে গিয়েছে প্রার্থীর নাম। আর এই কাজ করতেই নাওয়া-খাওয়া ভুলে রঙের বালতি আর তুলি নিয়ে এ পাড়ার কেষ্ট থেকে ও পাড়ার বিষ্টুরা দৌড়ে বেড়াচ্ছেন। ভোটের ময়দানে দেওয়াল দখলও যে একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

দেওয়াল দখলের রুট ম্যাপ অবশ্য আগেই তৈরি হয়ে গিয়েছে। ওমুক দাদার বাড়ির দেওয়ালে আমরা লিখব, ওটা যেন বিরোধীরা নিতে না পারে। আবার ওই বাড়ির সদস্যেরা বিরোধী পক্ষ, তাই তাঁদের দেওয়াল তালিকা থেকে বাদ। এমন তালিকা নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছেন ডান থেকে বাম, সব দলেরই নেতা-কর্মীরা। কিন্তু সব বাড়ির মালিক কি স্বেচ্ছায় তাঁদের বাড়ির দেওয়াল লিখতে দিচ্ছেন? প্রশ্নটা থেকেই যায়।

পার্ক সার্কাসে সিপিএম প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার। নিজস্ব চিত্র

নির্বাচন কমিশনের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, ব্যক্তিগত বাড়ির দেওয়ালে লিখতে গেলে মালিকের অনুমতিপত্র লাগবে। তিনি না চাইলে জোর করে কিছু করা যাবে না। তার পরেও যদি লেখা হয়, তা হলে বাড়ির মালিক জেলার রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন সেই আধিকারিক। যদিও শাসকদল থেকে বিরোধী, সকলেই এক বাক্যে দাবি করছেন, ‘ব্যক্তিগত বাড়ির ক্ষেত্রে মালিকের অনুমতি নিয়ে তবেই দেওয়ালে লেখা হয়।’ তবে বিগত দিনে ভোটে দেওয়াল ব্যবহারকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগও জমা পড়েছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এলাকায় ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলের কাজে অখুশি থাকায় অনেক সময়েই বাসিন্দারা রাজি থাকেন না দেওয়াল লিখতে দিতে। যেমন এ বারেই হুগলির পুরশুড়া-১ নম্বর পঞ্চায়েতের বাসিন্দা বিনোদ মালিক, শঙ্কর রায়, ইমানুল হকেরা প্রতিশ্রুতি মতো উন্নয়ন হয়নি বলে এককাট্টা হয়ে সেই দলকে দেওয়াল লিখতে দেননি। কলকাতা জুড়ে দেওয়াল লিখনের রমরমা বাড়লেও এখনও তেমন কোনও বাধা দানের ঘটনা প্রকাশ্যে আসেনি। তবে শহরবাসীর একাংশের দাবি, ‘ভোটে‌র বাজারে কে শোনে কার কথা?’ যেমন, অহেতুক ঝামেলা বাড়াতে রাজি নন দক্ষিণ

কলকাতার এক বাসিন্দা। তাঁর কথায়, ‘‘দেওয়ালের খানিকটা অংশ নষ্ট হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু কী আর করা যাবে? ইচ্ছে থাকুক বা না থাকুক, বহু বছর ধরে তো এমনই চলে আসছে।’’

আগে থেকে কথা বলে পরিচিত ব্যক্তিদের বাড়ির দেওয়ালই প্রচারে ব্যবহার করা হয় বলে জানান রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তবে কখনও কখনও যে ব্যতিক্রমও ঘটে, তাও মানছেন মন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘দলে তো অনেক রকমের কর্মী রয়েছেন। কখনও হয়তো জিজ্ঞাসা না করেই লিখে দেন। বিষয়টি জানতে পারলে আমরা গিয়ে ক্ষমা চাই। তখন অনেকে ভোটের পরে মুছে দিতে বলেন, কেউ আবার অরাজি থাকায় সঙ্গেসঙ্গে মুছে দিই।’’

আবার বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা সাধারণত আগে থেকে অনুমতি নিয়ে তবেই দেওয়াল লিখি। কিছু ক্ষেত্রে বিচ্যুতি ঘটে। তবে সার্বিক ভাবে অনুমতি ছাড়া দেওয়াল লিখি না।’’ আবার নিজেদের দলের কর্মী কিংবা সমর্থক হলে, তাঁর বাড়ির দেওয়াল ব্যবহারের দায়িত্ব নিজেরাই নেন বলে জানান সিপিএম নেতা রবীন দেব। তাঁর দাবি, ‘‘নিজেদের লোক ছাড়া অন্য কারও বাড়ির দেওয়ালে অনুমতি না নিয়ে লিখি না।’’

Lok Sabha Election 2019 TMC BJP CPM Wall Writing
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy