Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মাইকের গুঁতোয় দমদমে ‘ত্রাহি’ রব পরীক্ষার্থীদের

সারা বছরই একের পর এক অনুষ্ঠানের দৌলতে দমদম ও যশোর রোড এখন কার্যত মাইক-সরণিতে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, পাড়ার ভিতরের অনুষ্ঠান কতটা জাঁকজমকপূর্ণ, তা বোঝাতেই উদ্যোক্তারা বাতিস্তম্ভের দখল নিয়ে নেন।

 দাপট: দমদম রোডে দেদার বাজছে মাইক (চিহ্নিত)। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

দাপট: দমদম রোডে দেদার বাজছে মাইক (চিহ্নিত)। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

সৌরভ দত্ত
শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৯
Share: Save:

মেসের ঘরে দরজা-জানলা বন্ধ করে দু’হাতে কান চেপে পাঠ্যবই আওড়ে চলেছেন কলা বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্র। কী পড়ছেন, তা নিজেরই শোনার উপায় নেই। কারণ, পাড়ার জলসায় জনপ্রিয় শিল্পীর সঙ্গীতানুষ্ঠান চলছে। আর বাতিস্তম্ভে চোঙা লাগিয়ে তা এলাকাবাসীকে শোনানোর ব্যবস্থা করেছেন উদ্যোক্তারা। তাই না চাইলেও পড়ুয়ার কানে ভেসে আসছে গানের লাইন, ‘কেন করলে এ রকম, বলো?’। ওই পড়ুয়ার বক্তব্য, মাইকের দৌরাত্ম্যে দমদমের পরীক্ষার্থীরা এখন আর কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই!

সারা বছরই একের পর এক অনুষ্ঠানের দৌলতে দমদম ও যশোর রোড এখন কার্যত মাইক-সরণিতে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, পাড়ার ভিতরের অনুষ্ঠান কতটা জাঁকজমকপূর্ণ, তা বোঝাতেই উদ্যোক্তারা বাতিস্তম্ভের দখল নিয়ে নেন। একটি বাতিস্তম্ভে টাঙানো তিনটি চোঙায় একসঙ্গে তিনটি আলাদা অনুষ্ঠানের প্রচার চলছে, এমন ঘটনাও দমদমের মাটিতে বিরল নয়। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, দিনভর মাইকের আওয়াজে তাঁদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। অথচ, চোঙা নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই।

এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, ‘‘অসুবিধার কথা কাকে আর বলব! প্রতিটি অনুষ্ঠানই তো কোনও না কোনও কাউন্সিলরের।’’

বাসিন্দাদের এই অভিজ্ঞতার শরিক দমদম থানার পুলিশ আধিকারিকও। সাতগাছি এলাকায় কল্পতরু মেলা চলাকালীন সদ্য বদলি হয়ে আসা থানার এক অফিসার বলেন, ‘‘এখানে কেন যে এত মাইক বাজে? এক জায়গায় বসে তো কাজই করা যায় না!’’

দমদম রোডের ধারে ছাত্রছাত্রীদের একাধিক মেস রয়েছে। প্রেসিডেন্সি, যাদবপুর, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়-সহ শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাঁরা পড়াশোনা করেন। মেসে থেকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এমন ছাত্রের সংখ্যাও কম নয়। এ ছাড়া, ঘরে ঘরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীরা তো রয়েইছে। ছাত্রছাত্রীদের একাংশের বক্তব্য, ফেব্রুয়ারিতে ‘গেট’ পরীক্ষা রয়েছে। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি ডব্লিউবিসিএস-এর পরীক্ষা। বিভিন্ন কলেজে সিমেস্টারের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় মাইকের বাড়াবাড়িতে পড়াশোনা করাই দায়। প্রেসিডেন্সির অঙ্ক বিভাগের এক ছাত্র বলেন, ‘‘যেখানে থাকি, মাইকের জন্য সারা দিন দরজা, জানলা বন্ধ রাখি। বাধ্য হয়ে রাত জেগে পড়াশোনা করছি।’’ এমএসসি-র এক ছাত্র বলেন, ‘‘আনন্দমেলা, পাখি মেলা, নালে-ঝোলে— এখানে মেলার শেষ নেই। সঙ্গীত মেলার সময়ে আরও করুণ অবস্থা হয়েছিল।’’

দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (জনস্বাস্থ্য) দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এলাকার কোন কোন বাড়িতে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা রয়েছে, সেই তালিকা আমাদের কাছে আছে। পরীক্ষার্থীদের বাড়ির সামনে মাইক লাগানো হয়নি। এর পরেও কারও অসুবিধা হলে আমাদের জানান। আমরা সেখানকার মাইক খুলে নেব।’’ আর এক চেয়ারম্যান পারিষদ প্রবীর পাল বলেন, ‘‘এই সমস্যার কথা আমরাও শুনেছি। ফকির ঘোষ লেনে ২৭ তারিখ একটি অনুষ্ঠান করছি। পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে সেখানে কোনও মাইক বাজানো হবে না।’’ আর এক তৃণমূল কাউন্সিলর সুরজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘দমদমে মানুষের কানের যা অবস্থা, তাতে আমিও উদ্বিগ্ন। সে জন্যেই আমার জলসার অনুষ্ঠানে মাইক বাজাচ্ছি না।’’

ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক আবুল কালাম আজাদ ইসলাম বলেন, ‘‘পরীক্ষার্থীদের যাতে কোনও ভাবে অসুবিধা না হয়, তা নিশ্চয়ই দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mic Program Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE