Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Government

‘সরকারি কমিটির থেকে সরকারই তথ্য গোপন করছে!’

প্রশাসনিক সূত্র অনুযায়ী, কোভিড-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখতে গত জুলাইয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিল।

(বাঁ দিকে) স্বাস্থ্য দফতরের বৈঠকের সিদ্ধান্তের প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছিল অভিযুক্ত সংস্থার কাছেও। (ডান দিকে) রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ গঠিত কমিটি।

(বাঁ দিকে) স্বাস্থ্য দফতরের বৈঠকের সিদ্ধান্তের প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছিল অভিযুক্ত সংস্থার কাছেও। (ডান দিকে) রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ গঠিত কমিটি।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:০৪
Share: Save:

এক দিকে যে সংস্থা বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের ব্যবস্থাপনার জন্য ‘কমন বায়োমেডিক্যাল ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট ফেসিলিটি অপারেটর’ (সিবিডব্লিউটিএফ) হিসেবে ছাড়পত্রই পায়নি, সরকারি বৈঠকের সিদ্ধান্ত তাদের জানানো হয়েছে। অন্য দিকে, কোভিড-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ খতিয়ে দেখতে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছ থেকে সেই সংস্থার কথাই পুরো চেপে যাওয়া হয়েছে। বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে শুধু অনিয়ম নয়, রাজ্য প্রশাসনের এই দ্বিচারিতা নিয়ে সরব হলেন বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যদের একটি অংশ।

প্রশাসনিক সূত্র অনুযায়ী, কোভিড-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখতে গত জুলাইয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিল। তাতে সরকারি প্রতিনিধির পাশাপাশি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। ঠিক হয়েছিল, কোভিড-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে গাফিলতি থাকলে রিপোর্টের মাধ্যমে কমিটি তা পর্ষদকে জানাবে। সেই অনুযায়ী পর্ষদ পদক্ষেপ করবে।

গত অগস্টে সংশ্লিষ্ট কমিটি রাজ্যের ছ’টি স্বীকৃত সিবিডব্লিউটিএফ-এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকও করে। কমিটির সদস্যদের একাংশ জানাচ্ছেন, বেআইনি ভাবে কাজের বরাত পাওয়ায় অভিযুক্ত ‘কনসোর্শিয়াম অব স্পেকট্রাম ওয়েস্ট সলিউশন প্রাইভেট লিমিটেড অ্যান্ড এসএনজি মার্কেন্টাইল প্রাইভেট লিমিটেড’-এর কোনও প্রতিনিধি সেই বৈঠকে ছিলেন না। এমনকি, এমন একটি সংস্থা যে রাজ্যের বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের দায়িত্বে রয়েছে, তা-ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বা স্বাস্থ্য দফতর কমিটিকে জানায়নি। যদিও গত জুলাইতেই স্বাস্থ্য দফতরের তরফে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য নিয়ে এক বৈঠকের সিদ্ধান্তের প্রতিলিপি অন্যদের পাশাপাশি এসএনজি সংস্থার কাছেও পাঠানো হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট সংস্থার ডিরেক্টর এস পি সিংহের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকারের নির্দেশ ও অনুমতি মতোই আমরা কাজ করেছি।’’

আরও পড়ুন: দৈনিক সংক্রমণের হার জুনের পর নিম্নমুখী, রাজ্যে বাড়ল সুস্থতার হার

আরও পড়ুন: বিশ্বভারতী, বাউল, বর্ণাঢ্য রোড শো: বোলপুরে শাহের দিনভরের ছবি

অথচ কমিটির এক সদস্য তথা ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেল্থ’-এর প্রাক্তন অধিকর্তা অরুণাভ মজুমদার বলেন, ‘‘ছ’টি সিবিডব্লিউটিএফ-এর কথাই আমাদের বলা হয়েছিল।’’ আরও এক সদস্য ‘স্টেট আর্বান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি’-র যুগ্ম অধিকর্তা আশিস সাহা আবার বলছেন, ‘‘এ বিষয়ে আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা না করাই ভাল।’’ কমিটির সদস্য তথা স্বাস্থ্য দফতরের ডেপুটি সেক্রেটারি সৌরভ বারিককে এ নিয়ে জানতে একাধিক বার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজেরও।

তবে কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নব দত্ত জানাচ্ছেন, এই তথ্য চেপে পর্ষদ প্রতারণা করেছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এ ক্ষেত্রে তো কমিটির রিপোর্টের কোনও মূল‌্যই থাকল না! কারণ, কোভিড-বর্জ্যের সামগ্রিক চিত্র প্রকাশ্যেই এল না!’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘স্বাস্থ্য দফতর তো অনিয়ম করেছেই। কিন্তু অনিয়মের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কেন পর্ষদ কোনও পদক্ষেপ করেনি? নৈতিকতার প্রশ্নে পর্ষদের চেয়ারম্যানের পদত্যাগ করা উচিত।’’

এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানার জন্য পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রকে রবিবার ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজেরও। যার পরিপ্রেক্ষিতে কোভিড-বর্জ্য নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলাকারী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘ফোন না ধরে, চুপ করে থেকে পর্ষদের চেয়ারম্যান এ প্রসঙ্গ এড়াতে পারেন না। কারণ, এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ!’’ আর নব দত্ত বলছেন, ‘‘সরকারি কমিটির থেকে সরকারই তথ্য গোপন করেছে! এটা শুধুমাত্র এ রাজ্যেই সম্ভব।’’ (শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Government Hiding Information Bio Medical Waste
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE